।। বাক্ ১৪৩ ।। ইবনে শামস ।।




ইবনে শামস

আমাদের সময়

বর্ষণ প্রাচুর্যে মনে পড়ে তোমার মুখ; লেবুর চুষে নেয়া খোসার মত চুপসে গেছে। দুশ্চিন্তার মতো ক্রমশঃ কুণ্ডলী পাকিয়ে জমছে অন্ধকার৷ 

মানুষ বড়ো অসহায়; খাইতে না পেয়ে জীবন উড়াচ্ছে ফুঁয়ে।

তুমি বলেছো বিপ্লব, আমি বলেছি অনবদ্য বাল সমাচার তোমাদের। মানুষের দুঃখের দানা পরিমাণ মুক্তি নাই তোমাদের এইসব বালখিল্যতায়, তবুও বলছো বিপ্লব, মহা বিপ্লব, ঘোর, ঘোর বিপ্লব। 

সেই থেকে তুমি আমাকে বলেছো, বিচ্ছিন্নতাবাদী; অহেতুক ফুল অকেজো বকবকানির ভিতর কুপোকাত সন্ধ্যার রাগ। আমি বলেছি, তোমাকে ভালোবাসি৷ তুমি অন্যকারো সাথে গলা মিলিয়ে বলেছো, অতি উস্তাদ সাজতে চাওয়া রাখাল। আমি তবুও তোমাকে ভালোবাসতেই চেয়েছি। কারণ তুমি মানুষ, কখনো সখনো কবিতা লিখতে চেয়েছিলা৷ বাজারে বিক্রি হয়ে যাওয়ার আগে। তুমি কখনো ভাবোনি, কাঁচা মালের মতো যে বিক্রি হইতে পারে সে পঁচে যাবে এইটা নিখিলের নিয়তি।


ফাশারা ভাষা

কুমকুম পানির ভিতর অনভ্যস্ত কম্পমান হে ধ্যানী বুদবুদ, অতিউত্তাপে ফেটে পড়া বন্ধনের জন্যে কী করুণা তুমি গোপন রেখেছো আত্মার কাছে? 'ভাজা শিমবিচির কাছে দ্বিখণ্ডিত হওয়ার জ্ঞান, লীলারত রমনীর গ্রীবার কাছে শিৎকারের অহংকারের মতো স্বচ্ছ, নিরেট ও খাসা৷

ওভাবে বলোনা ব্যাঙ, আমার বড় সখ ব্যাঙাচির; লজ্জ্বায় মুখ লাল
পাহাড় ধ্বসে যাবে৷ আকাশ ভেঙে গেলে বলো, দোলনা কার কোল?

অতি উত্তাপে যে বুদবুদ তোমারই সফর সঙ্গী আগুনের ভিতর লাল হতে হতে ধপ করে ছাই হয়ে গেছে, তার জন্যে দুঃখ কি হয়?


নিঃসঙ্গতার অনুবাদ

মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করলেই নিজের মরদেহ নজরে আসে৷ আরো আসেদুনিয়ার সমস্ত পাতা ঝরে পড়ছে শবের উপর আর ক্রমশ হলুদ হয়ে উঠতেছে পাতাগুলা৷ 

বড় আজীব লাগে এই জীবন, এইসব প্রেম প্রেম বাতাস; যার ভিতর হাত পা ছুড়ে দিয়ে শিশুর মতো হাউমাউ করে কান্দি। নিরাময়লোভে নিজের ভিতর থেকে চিৎকার আসে। কোথাও কেউ নাই, কেউ নাই যে সারা রাত পাশে বসে আমাকে রোগোপসর্গমুক্ত করে তুলবে। 

বড় ঘেন্না হয় এই নিঃসঙ্গ জীবনের প্রতি। বড় ক্লান্তি, অবসাদে গা ঘিনঘিন করে পঁচে যাইতে চায়৷ তদুপরি বড় মায়া হয়, বড় মায়া হয় তোমার বুকের দিকে চেয়ে চেয়ে যেসব যুবক অর্গাজমে মত্ত, তাদের তুমি ধর্ম পড়িয়েছিলে।

নিঃসঙ্গতার অনুবাদ (২)

"I couldn’t kill the way you kill"

যে আঙুল ছুঁয়েছো তুমি সেই আঙুলই পাথর কাটে
ঐ একই আঙুল লিখে কবিতা
খুঁড়ে কবর নিজের সেই আঙুলই

আমার ভালো লাগে হলুদ ফুলের যৌনতা
রক্তাক্ত চোখের দিকে উড়ে যাওয়া আকাঙ্ক্ষা 
বাসের গ্লাস ভাঙা দৃষ্টি উদাস

বৃক্ষটা দাঁড়াইয়া আছে
তুমি তারে হৃদয়ঙ্গম করো
বৃক্ষের কাছে নতজানু হও
নতুবা সুভাস পাবে না 

লাশজুড়ে মাতমরত মাছির প্রতি সদয় হও
কিছুটা দুখি হও নতুবা কবিতা ছুঁইবে না৷


নিঃসঙ্গতার অনুবাদ (৩)

আঙুল ঝাড়তেই পাখি উধাও; ডাল বিরান বিরামচিহ্ন।  ডানা খুলতেই ঝরে গেছে পালকের দুঃখ নিয়ে অসংখ্য কবিতা। কুড়াতে কুড়াতে মাথা তুলে দেখি আজরাইল দাঁড়াইয়া আছে সটান

সেই থেকে শিখেছি; নত হইতে নাই। 

ইবলিশতাজ মাথায় কলকলায়; রক্ত পানি হয়ে মিশে যাইতেছে কবিতার রগে রগে৷ তবুও আরেকটা পাখি এখনো আইসা বসেনি খাঁ খাঁ ডালে৷

There is a shout that beat the bear, No flower rises as rose rises.

1 comment:

  1. দারুণ সব লেখা ! চমৎকার ভাষার প্রয়োগ।। অভিনব,গভীর

    ReplyDelete