একলব্য
মান্টি অধিকারী
দত্ত
গ্রীষ্মের প্রথম
কালবৈশাখী।
যদিও আষাঢ় আসতে
এখনও ঢের বাকি তবু তো ক্ষণিকের নিস্তার। তবে কাল যদি আবারও...
ধুস ধুস এত ভেবে
লাভ নেই কমপক্ষে আজ তো কাঠফাটা প্রাণে সামান্য জল এল। যাইহোক এই দিনটাকে এক্কেবারে নষ্ট করা চলে না।
এমনটা ভাবতে
ভাবতেই কাচের জানালায় বাষ্পের উপর হাবিজাবি কিসব লিখে নিল অদিতি।
তারপর হাতে হাত
ঘষে ল্যাপটপের সামনে গুনগুন সুরে গান করতে লাগলো, ‘রিম ঝিম গিরে সাবন...’
হঠাৎ মনে হল এবার
একটু শরীরটা এলিয়ে নেওয়া দরকার।
বালিশে মাথা দিয়ে
চাদরে মুখ গুঁজে অদিতি আপন মনে বলল, ‘যাই বলো
বাপু কলেজ পড়ুয়া বেকার প্রাইভেট টিউটারদের কাছে এ যেন এক অন্তহীন সুখ।’
যথা সময়ে তার
চোখদুটো সামান্য লেগেও এল। বৃষ্টি হচ্ছে ২৬ বছর বয়সি যুবতি মেয়ের ঘরের দরজা বন্ধ এমনটা দেখে
অদিতির মা ভ্রূকুটি করে দরজার কড়া নেড়ে জানালেন, ‘বৃষ্টি থেমেছে মুখার্জি বাড়ি
থেকে ফোন এসেছিল, কীরে, শুনতে পাচ্ছিস।’
বলেই দরজায় জোরে
জোরে আঘাত করলেন বেশ কয়েকবার।
বড্ড বিরক্ত হয়ে
চাদরটা মুখ থেকে সরাতেই অদিতির চোখে পড়ল জানালার কাচ টপকে আসা কটকটে রোদ্দুর। মনে হল তারাও যেন তার বেকারত্বের উপর
মুচকি হাসছে।
গলা ঝেড়ে নাক
সিটকে উত্তর দিল ‘যাচ্ছি যাচ্ছি’
যাইহোক, অগত্যা ক্লান্ত শরীরটা কোনওরকম তুলে তাতে একটা সালোয়ার চাড়িয়ে বিষন্ন মুখে
মুখার্জিদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য সিঁড়ির ঘর থেকে
কাদামাখা রথটিকে বের করল। আড়চোখে পূর্বের আকাশের দিকে চোখ
বুলিয়ে নিয়ে ঘরের সামনে সেটাকে দাঁড় করিয়ে ভালো করে মুছতে শুরু করল।
পূর্ব আকাশে মেঘ
ধীরেধীরে জমাট বাঁধছে...
‘কী রে, যদি না
যেতে চাস যাস তবে ঢং করিস না। সাইকেলটা এত কী মুছছিস ওটাতে
তো আবার কাদা মাখবে।’
ঝাঁঝালো গলায়
রান্নাঘর থেকে তার মা-র এমন মন্তব্য শুনে শেষমেশ বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে পড়ল সে।
মনটা সকাল থেকেই
গুমোট। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পড়ানোর ইচ্ছেটুকুও হারিয়েছে। সাইকেল গ্রামের পথ দিয়ে
মুখার্জিদের বাড়ি দিকে যেন এগোচ্ছেই না। আজ ফেরিওয়ালা
হাঁকডাক, সব্জির দোকানের পাল্লা বাটখারার
শব্দ, পুকুরে ভেজানো বাসনপত্রের শব্দ
সব কেমন যেন ঝড় শেষে ভয়ে থমকে গেছে। নুয়ে পড়া কামিনী ফুলগাছ পেরিয়ে
সাইকেল লক করে চাবি ব্যাগে ঢুকিয়ে একপ্রকার কাঁচুমাচু মুখে মুখার্জিদের দোরগোড়া থেকে ঘরে ঢুকতে গিয়ে অদিতি লক্ষ করল সেই
একই ঘটনা, প্রতিদিনের মতো আজও...
গত দুই তিন
সপ্তাহ ধরে এমন অদ্ভুত ঘটনার সূত্রপাত। তবে আর যাই হোক ঘটনাটা কিন্তু বেশ মিষ্টি।
এত কিছুর মধ্যে
দরজার কোণে তাকিয়ে কপালের কোঁচকানো দাগগুলো একটু স্বাভাবিক হল তার। একটু হেসেও
ফেলল। পড়ে থাকা ফুল তুলে ঘরে ঢুকে চেয়ারে সবেমাত্র বসতে যাবে হঠাৎ মনে হল দরজার কাছে কেউ উঁকি দিচ্ছে। খুব সাধারণে পিছন
ফিরল, আজ ধরতেই হবে ব্যাপারটা কী! কিন্তু
পেছন ফিরতেই ভ্যানিশ।
পেনসিল হাতে
খাটের উপরে বসে থাকা ইংরেজি মিডিয়ামের তস্য পাকা ছাত্রীটি মুখ টিপে হাসতে লাগল। অদিতি তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে চেয়ার থেকে উঠে
দাঁড়াল। ধীরধীরে বাইরে বেরিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে এগিয়ে গেল মুখার্জিদের ভাঁড়ার ঘরের দিকে এপাশ-ওপাশে কেউ কোথাও নেই।
ভাঁড়ার ঘরের
চারিদিকে বস্তা, গরুর খাবার। ঘরটার ভেতরে ঢোকার
জায়গা নেই। একটু ঢুকতেই একটা খাটিয়া। অদিতি এগিয়ে গেল তার চোখে পড়ল খাটিয়ার পাশে শ্লেট, পুরনো খাতা, ছড়ার বই খুব যত্নে গুছিয়ে রাখা
আছে। শুধু তাই নয় মুখার্জি বাড়ির মেয়েটার পুরোনো ফেলে দেওয়া খাতাগুলো সে নতুন মলাট
দিয়ে রেখেছে। একটা খাতা তুলেই নিল পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে তার ঠোঁটের কোণে আপনা-আপনি
একটু হাসি চলে আসে। গোটা গোটা করে বাংলা অক্ষর।
কিছুটা আন্দাজ
আগেই করেছিল অদিতি। বাইরের দরজা দিয়ে
ঘরটাতে বেশি রোদ-হাওয়া তেমন ভাবে আসে না। পাওয়ার মধ্যে পাওয়া হল
খাটিয়ার পাশের জানালার ওপারে পুকুর ও ক্ষেত...
যাইহোক খাতাটা
হাতে নিয়ে ভাঁড়ার ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে অদিতির হঠাৎই মনে হল দরজা থেকে আসা আলোর উপর একটা ছায়া পড়ছে। দেখেই চটজলদি সে বাইরে বেরিয়ে এল। আজ ধরতেই হবে...
ছুটে গেলেও
কিছুতেই ধরতে পারল না তাকে। থমকে গিয়ে দেখল সেই এক কাণ্ড!
কামিনী ফুলগুলো
কুড়িয়ে গন্ধ নিতে নিতে খাতাটা হাতে করে পড়ার ঘরের দিকে বারান্দা এগোচ্ছে, মনে হল কেউ পিছু ধরেছে। পড়ার ঘরে ঢুকে চেয়ার ঠেলে একটু মেজাজ নিয়েই বসল অদিতি। একটা ছোট্ট
শরীরের ছায়া তার খুব কাছাকাছি বারবার উঁকি দিচ্ছে।
এবার আর পেছনে নয় সরাসরি বলল, ‘ঘরে না এলে খাতা পাবে না, আর ফুলও নেব না,
তাছাড়া কাল থেকে দরজা বন্ধ করে পড়াব।’
পাকা ছাত্রী পড়ার
ঘরের খাটে বসে লিখতে লিখতে আড় চোখে চেয়ে মুখ লুকিয়ে হাসছে। তার দিকে বড় চোখে তাকাতেই
সে চটজলদি খাতায় কলম লিখতে আরম্ভ করল। বেশ কিছুক্ষণ
চারিদিক স্তব্ধ, ছোট্ট ছোট্ট পায়ে কাঠবেড়ালির মতন কেউ এগিয়ে আসছে। শ্যামবর্ণ, ছিপছিপে চেহারা, মাথা ভর্তি এলোমেলো চুল। মাথা নীচু করে অদিতির সামনে
এসে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইল। ছাত্রী তড়িঘড়ি করে জানিয়ে দিল, ‘ওর নাম অঙ্কুর, ওর কেউ
নেই, উইপোকা খায়, মুখ থেকে রক্ত পড়ে, ও কারুর সাথে কথা বলে না।’
বলেই আবারও লিখতে
শুরু করল।
অদিতি তার হাত
ধরে কাছে টেনে নিতেই থরথর করে কাঁপতে থাকা ছেলেটির হাত দুটো বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে
গেল।
হাড়গিলে ছোট্ট
শরীরটা শক্ত করে রেখে চোখটা চেপে বন্ধ করে রেখেছে সে। শান্ত গলায় তার চোখের কাছে
মুখ নিয়ে অদিতি বলল, ‘কাল থেকে বই নিয়ে আসবে’
এমন সময় মুখার্জি
বাড়ির গিন্নি চা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। অতি
সংকোচে উনি সবটা জানালেন। খুব অবাক লাগল অদিতির। ছেলেটি আদিবাসী উড়িয়া, এক ভদ্রমহিলা
কাজের দরুণ তাকে এখানে রেখে গেছেন তবে পরবর্তীতে জানা যায় তার মা-বাবা মারা গেছে। ছেলেটির
কেউ নেই।
প্রতিদিন পড়ানোর
সময় দরজার কোণে বসে সে পড়া শোনে। মুখার্জি বাড়ির গিন্নি তাকে
পড়ান। তার আগ্রহ দেখে এ তল্লাটের অনেকেই পরামর্শ দিয়েছে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি
করাতে কিন্তু বাড়ির অন্য সদস্যদের তা
পছন্দ নয়। তাদের মনে হয় গিন্নির ওসব পাগলামির জল বেশি দূর
গড়াবে না সুতরাং এ নিয়ে মাথা ঘামানো মানে বৃথা সময় নষ্ট।
বউদি একটু ইতস্তত
হলেন, কিছু বলবার চেষ্টা করলেন অদিতি
তাঁকে বাধা দিয়ে জানিয়ে দিল, ‘এক্ষেত্রে আমার কোনও পারিশ্রমিক চাই না। এ তো
একলব্য।’
বাড়ির গিন্নি হেসে চলে গেলে সে মাথা নীচু করে জল ভরা চোখে
প্যান্টের পকেট থেকে ক’টা কামিনী ফুল অদিতির দিকে এগিয়ে দিল। সেইদিন গ্রীষ্মের প্রখর রোদ্দুরেও যে বৃষ্টিতে অদিতি
ভিজেছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা নিছক বোকামি। সে কোলে তুলে নিল ছেলেটাকে।
এভাবেই তার আর
অদিতির বন্ধুত্ব শুরু। প্রতিদিন ফুল
দেওয়া-নেওয়া, গল্প শোনানো, পড়াশোনা আর এইসবের মধ্যে দিয়ে কেটে গেল তিন-তিনটে বছর।
সে কারও সঙ্গে
বিন্দুমাত্র কথা বলে না। তার যত কথা সব অদিতিকে ঘিরে। ক্ষেত থেকে সবজি, পুকুর থেকে মাছ সব জোগাড় করে সে অদিতিকে ছুটে ছুটে
দিয়ে আসে। বাড়ির পাঁচমাথা মোড় থেকে হাঁক দেয় ‘দিদি, দিদি...’
অদিতির মা বড্ড
বিরক্ত হয়ে একদিন বলেই বসেন, ‘আদিখ্যেতা আর সহ্য হয় না। কে না কে ঘরে এসে
ছুঁয়েছেনে একাকার করে। মেয়েটার বিয়ে হলে বাঁচি।’
কথাটা কানে যাওয়া
মাত্রই অদিতিদের বারান্দার বাসনের ঝুড়ি এক লাথিতে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল সে।
‘আর যদি দেখি
এখানে এসেছিস...’ সেদিনই অদিতির সঙ্গে ভীষণ ঝগড়া হয়ে গেল তার মায়ের, ‘আজই তোর
কাকাকে ফোন করব এই বছরই তোর বিয়ে।’
মায়ের কথা শুনে
অদিতি কিছু বলতে পারল না।
ছেলেটার যত ইচ্ছে
যত কল্পনা যে তাকে ঘিরেই তা অদিতি ভালোভাবেই বুঝত আর সে না চাইতেও তা প্রশ্রয় দিত।
হঠাৎ বাড়িতে এক
হইহই শুরু হল। ছোটকাকা এলেন। তার অজান্তেই এই অগ্রহায়ণে মুম্বাইনিবাসী কাকার বন্ধুর ছেলের সঙ্গে অদিতির বিয়ে। বিয়ের
সপ্তাহখানেকের মধ্যেই মুম্বাইয়ে সংসার।
কেনাকাটা, কার্ড বিতরণ ভালোভাবেই শুরু হল। সবেরই বেশ শোরগোল। পড়াতে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হল।
অঙ্কুর বেশ ক’টা
দিন বাড়িতে খুঁজতে এলে ছোটকাকা তাকে নীচের ঘর থেকেই বাড়ি পাঠিয়ে দেন। উপরে শুনেও
নীচ পর্যন্ত কখনও যায়নি অদিতি। খামোখা মায়া
বাড়িয়ে কোনও লাভ নেই তাছাড়া বিয়েতে অদিতির মতামতের কেউ কোনও গুরুত্বও দেয়নি।
সুতরাং সবটাই ছিল একপ্রকার মেনে নেওয়া।
মুখার্জিবাড়িতে
কার্ড দিতে গিয়ে অদিতির মা খুব বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেন। গজগজ করে বললেন, ‘বাপরে,
বড্ড সাহস ওই বাড়ির কাজের ছেলেটার। একটু পড়াশোনা শিখেছে বলে হাতির
পাঁচ পা দেখে ফেলেছে। হাত থেকে নির্দ্বিধায় কাচের গ্লাসটা ইচ্ছে করে ফেলে দিল
তারপর জানিস আমার দিকে কী ভয়ঙ্কর ভাবে তাকাচ্ছিল।’
সবটা শুনে কোনও
উত্তর না করে অদিতি মুচকি হাসল। তারপর
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় বিয়ের নানা বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এই ব্যস্ততার দরুণ আর ওই তল্লাটে তার যাওয়া হয়নি।
বিয়ের দিন পরিবারের সকলের নানা ব্যস্ততায়, নানা নিয়ম, আচার-আচরণ ইত্যাদি ইত্যাদিতে
তার আর অঙ্কুরের কথা মাথায়ও ছিল না।
তবে বাসি বিয়ের
দিন যখন বিদায়ের পালা এল, যখন চারিদিকের কান্নায় জন্মের সব টান ছেড়ে অনিশ্চয়তায় ও
সংকোচে নতুন জন্মে তার পা ফেলার সময় এল, তখন যেন তার ইচ্ছে করল অঙ্কুরকে
আবারও সেই প্রথম দিনের মতো জাপটে ধরে।
গাড়িতে এক পা
রাখতেই ‘কিছু খুঁজছ?’ অদিতির স্বামী সুমন্তর প্রশ্নের কোনও জবাব না দিয়ে জলে ভরা চোখে গাড়িতে বসল।
‘দিদি, ও দিদি, সেই কোন সাতসকালে চা দিয়েছি। অঘ্রান মাস। ঠান্ডা পড়ছে। এভাবে ঠান্ডার মধ্যে বারান্দায়
ঘুমিয়ে পড়লে। তোমার কি শরীর খারাপ?’
সবিতা কর্কশ
স্বরে আরও যে কত কথা বলতে লাগল। তাকে থামিয়ে দিয়ে অদিতি বলল, ‘মাথাটা
ধরেছে, এক কাপ চা দিবি!’ পাত্তা না দিয়ে সবিতা আবারও বলতে লাগল, ‘সেই কোন সকালে
পার্সেলটা রেখে গেছি টেবিলে। তুলে দেব?’
কোনও উত্তর না
পেয়ে সবিতা পার্সেলের কাছে গিয়ে একটু নীচু হয়ে দেখল একটা চিঠি টেবিলে রাখা। খামের
উপরে গোটা গোটা বাংলা অক্ষরে ‘এ-ক-ল-ব্য’
অদিতি চেয়ারে
মাথা দিয়ে মুখ-হাত রেখে শুয়েছিল। শুনে সে উঠে খুব গম্ভীর গলায়
সবিতাকে বলল, ‘কীরে যাসনি’
সবিতা কিছু না
বলে রান্নাঘরের দিকে যেতেই অদিতি চিঠিটা খুলল। একটা প্রেসক্রিপশন, একটি চিঠি, খুব কম লাইন লেখা। তবে...
দিদি,
তুমি যতটুকু
শিখিয়েছিলে, যতটুকু স্বপ্ন দেখিয়েছিলে
ততটুকু দিয়েই এই চিঠি। তারপর আর স্বপ্নপূরণের সুযোগ হয়নি। আসলে ছোট্টবেলায় বুঝতেই
পারিনি আমাদের মতো মানুষদের স্বপ্ন দেখতে নেই। বুঝলে হয়তো তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতাম না তোমার হয়তো মনেও নেই আমি বেঁচে আছি
কিনা।
তোমার বাসিবিয়ের
দিন উঠনে রাখা ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িটার চারিপাশে বেশ কয়েকবার পাক খেয়েছি। তারপর আমার গাছের ফোটা ফুলগুলো কোন এককোনে গুঁজে দিয়েছি তুমি হয়তো খেয়াল
করোনি।
যাইহোক, যখন দেবীর মতো সেজে চোখে জল নিয়ে সকলের ভিড়ে আমায় খুঁজছিলে আমি দূর থেকে
অপেক্ষা করছিলাম কখন এই গাড়িটা আমার স্বপ্নগুলোকে পিসে দিয়ে চলে যাবে। সেদিনের পর
যতটুকু গুরুদক্ষিণার বাকি ছিল আজও তা হয়তো সম্পূর্ণ হল না। একটা শাড়ি পাঠালাম।
বেশ কয়েক মাস আগে
মুখ থেকে রক্ত ভীষণ পরিমাণ উঠছিল বলে এখানকার লোকেরা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল।
ডাক্তার জানিয়েছেন আমার রক্তে নাকি ঘুণ ধরেছে আর বেশিদিন সময় নেই। অনেকবার ভেবেছি তোমার কাছে যাব কিন্তু আমাদের মতো মানুষ গ্রাম থেকে শহর এসে
পেটের ভাত ঠিক করে জোগাড় করতে পারে না তারা কীভাবে অন্য শহরে যাবে। ভালো থেকো
তোমরা। জানি না চিঠিটা পাবে কিনা।
---ইতি
তোমার একলব্য
চিঠিটা পড়ে মাথা
তুলে আবারও অদিতি চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে বসল। সেইদিন গাড়িতে
ওঠার পর তীব্র অভিমানে সে বাবা ছাড়া বাড়ির কারওরই খোঁজখবর নিত না। অঙ্কুরের কথা মাকে
জিজ্ঞাসা করলে মা এড়িয়ে যেত। বিয়ের কয়েক মাস
পর মা যখন মারা গেলেন তারপর বাবাকে সে মুম্বাইতেই নিয়ে আসে। সত্যি কোনও খোঁজ নেওয়া
হয়নি তার। তার ফুল, ধানক্ষেত, পুকুর, মাঠ, অভিমান এত তাড়াতাড়ি সে কিভাবে সব ভুলে গেল।
‘দিদি, একলব্য তো তুমি আমার ছেলেকে বলো, এটা কে!’
একটু বিরক্ত হয়ে
কপালে হাত ঘষতে ঘষতে খুব বিরক্ত হয়ে অদিতি চিৎকার করে উঠল, ‘কে বলেছে পার্সেলটা
পড়তে! ইডিএট কোথাকার!’
আগে কখনও দিদির
এমন ব্যবহারের সামনাসামনি হয়নি সবিতা। তার চোখে জল চলে এল।
সবিতা পেছন ঘুরে
আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতেই অদিতি কাঁপা গলায় বলল, ‘সবিতা, কাল ছেলেকে পড়তে পাঠাবি, আমি তোর ছেলেকে আজ থেকে তার নাম ধরেই ডাকব।’
একলা বিশাল
ফ্ল্যাটবাড়িতে বছর পঞ্চাশের যে বিধবা ভদ্রমহিলাটি কখনও ছেলে বিদেশ যাওয়ার পর একাকীত্বকে
নিজের গা ঘেঁষতে দেননি। কিছু না কিছু করে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। যার কাছে একা হওয়ার সংজ্ঞা বলতে মানুষ নিজের কারণে। সে-ই আজ
নিজের দিকে আঙুল তুলছে।
মুম্বাই শহরের আর
পাঁচ জন একলা বৃদ্ধাদের মতো আজ সে সত্যিই একলা এবং নিজের জন্য।
ভালো প্রচেষ্ট। এগিয়ে চলো।
ReplyDeleteঅসংখ্য ধন্যবাদ 😊
Deleteভালো লাগল। নমস্কার রইল।
ReplyDeleteঅসংখ্য ধন্যবাদ
Deleteবেশ লাগলো
ReplyDeleteধন্যবাদ ভাই 😊
Deleteবেশ লাগলো
ReplyDeleteবেশ লাগলো
ReplyDelete