।। বাক্ ১৪৩ ।। সুকৃতি ।।


সুকৃতি

ধারনা বাহিত

ভালবাসার চাইতে ঘৃণা আজ এতটা প্রবল হয়ে গেছে
পাই না সন্তান সুখ, শুনসান চারিদিক করোনা প্রকোপে।
আমিও মেয়ের থেকে দূরে, নাকি তারও আগে গড়েছে প্রাচীর
কারা যেন…, এই সব করে পায় আনন্দ কেবল! দয়াময়
তুমি সব জানো, তবু, তোমাকেই বলি শোনো, অনেক বছর
আগেই যখন আমি কবিতা লিখতে শুরু করি, তারপর
ঢুকে গেল বিনয়দা আমার জীবনে, তারপর আমি যেই
বিনয়দার ভিতরে ঢুকতে গেলাম, বুড়ো ফুস…, ফুসফুস
থেমে গেল তার।! চোখ তো বোজাই ছিলো। চোখবোজা অবস্থায়
আগেও দেখেছি আমি, চোখ খুলে তাকানোর জেনেছি কৌশল।

আর ঠিক সেরকম ভাবে যেই তাকিয়েছি, বুঝেছি বিনয়
নাদেখার এক দেশে চলে গেছে কিংবা সেই অদৃশ‍্য হওয়ার
সূত্রখানি ক্লান্তির জগতে পেল দাম। বিনয়দা ব‍্যাপারটা 
তখনও বোঝেনি মনে হয়, যে উনি অদৃশ্য হতে পেরেছেন!

যে কোনও মন্ত্রই ধারি হয়ে ওঠে নিয়মিত চর্চার কারণে।
প্রথমটা খটকা লাগে তারপর মনে হয় ঠিক, কারণটা
তখনই বুঝেছিলাম ঘরে ঢুকে, যখন সবাই কাঁদছিল
অথচ আমাকে দেখে বিনয়দা স্বভাবত, বলে উঠলেন,
"কে? সুকৃতি নাকি! এসো এসো…" বলে চেয়ারটা দেখিয়ে দিলেন।

মনে পড়ে পাঁচ দিন আগে ঠিক, সন্ধ‍্যাবেলা যখন বোতল
উঠেছিল জ্বলে…, চন্দনের সাথে এসেছিল তখন প্রণয়,
ঋপণওতো এসেছিল সেদিন বিনয়দার ঘরের পিছনে।
তোদের কি মনে পড়ে? গলায় ঢালতে গিয়ে ধোঁয়া, আমি বলে
উঠেছিলাম, এদিন বিনয়দা অদৃশ্য হবেন দেখে নিস।

তাই হলো! বুঝলাম, সবশেষ। বিনয়দা জানতেন সব।
আমাকেও কিছুবার, হাতের তালুতে এঁকে দেখিয়েছিলেন
ত্রিভুজের মতো গোল সূত্রখানি। একটি ত্রিভুজ এঁকে তাঁর 
তিন দিক ছুঁয়ে এক গোল, এক দুই তিন করে পরপর
চার পাঁচ ছয় তার ঘাত। বিনয়দা থামলেন। বিনয়দা চোখ তুলে
তাকালেন সোজাসুজি, আমার চোখের দিকে, বুঝিয়ে দিলেন
এখানে লুকিয়ে আছে অদৃশ্য হওয়ার সেই চরম আঘাত,
যার "টু দি পাওয়ার ক"। তবে সেটা যোগ না বিয়োগ মনে নেই।
অথবা জানাই আছে; সকলই উপমা যার প্রেমিকার মতো
তাঁর কাছে মৃত‍্যু মানে পরজন্ম ছাড়া কিছু নয়। এর চেয়ে
অদৃশ্য হওয়াই ভালো, অদৃশ‍্যরা সহজে সকল কিছু দ‍্যাখে
হয়তো তাঁদের দেশে করোনাও নেই আর মরোনাও নেই

তবু এই দৃশ‍্যমান জগতে আমাকে বিনয়দা নয় থেকে
দশ করে, করে দিল বিনয় বিহীন; ফলে আমি খুব একা
একা একা লিখে চলি আলোর কবিতা সব ছায়াদের নিয়ে।

হয়তো অনেকে ভাবে, আজও আমি বেতালের মতো বিনয়ের 
ভূত নিয়ে ঘুরি এই ঘোরের জগতে। তাই তবে হোক, যথা
বিনয়দা মানতেন, "আহা, জীবনানন্দের মতন একটা
কবিতা লিখতে পারা ভাগ‍্যের ব‍্যাপার"। আমিও তেমনি ভাবি
তাই ভাব হয়ে যায় আপনার কবিতার সাথে। বিনয়দা
আমি তাই আপনার মতো করে ভাবি আর চালাই কলম;
কিন্তু ভয় নেই কোনও মরণের, আমরা উভয় তাহা জানি।

আমিও চাইছিলাম আপনার মতো করে লিখি, লিখে যাবো
যদি পারিসফলতা, আর না পারলে, ব‍্যর্থতায় হবো আমি
ফোটানো আঙ্গুল। চোখ তো আগেই ফুটেছিল, আপনার সাথে
থেকে; কিন্তু যতদিন, আপনি ছিলেন আমি ভাবিনি অতটা।
আপনার মুখ থেকে অমোঘ দর্শন ঠিক মাথার উপর
দিয়ে যেত না হৃৎপিণ্ডের নিচ দিয়ে যেতো তা জানি না, আজ
হৃদয় দোলালে বুঝি, মাথা উঁচু করলেও টের পাই  কিংবা
হতে পারে দুই দাগ মিলেমিশে একাকার হতে যাবে, ঠিক
এমন সময় দূরে বাদাম গাছের বড়ো পাতাটির গায়ে
বসল পাখিটি যেইতার আর থামাই হলো না!আপনিও
অদৃশ্য হলেন। আমি শুধু দেখলাম আপনার তেলচিটে 
বালিশে তখনও মাথা রেখে শান্ত বালকের মতো একা একা
শুয়ে আছে "হাইয়েস্ট পসিবল ব্রাঞ্চ অফ ম‍্যাথমেটিকস"।

কতো লোক এলো আর কবির শরীর ভেবে থেকে গেলো কতো
কবিরাও এসেছিল আর নেতাদের সাথে কবির শরীর
নিয়ে হয়েছিল টানাটানিফলে দর্শনের বেশে এসেছিল
করোনা সকল এবং কবি আর নেতাদের ভিড়ে মিলেমিশে
তারা "হাইয়েস্ট পসিবল ব্রাঞ্চ অফ ম‍্যাথমেটিকস" নিয়ে
টানাটানি শুরু করে দিল, ঘুরে এসে সারা পাড়া, দিল শেষে
পুড়িয়ে শরীর। সূত্র তো পোড়ে  না। রাত হয়। শেষ হাসি হেসে
চিতা মিশে যায় মরণের রাতে, ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে বেদী।

আমিও বুঝেছি এই ভাইরাস, আসলে ধারণা ছিল আগে
বিনয়ের শূন্যতায় আমি তাকে পেয়েছি দেখতে, দেখেছিও
কীভাবে বন্ধুর থেকে বন্ধুকে আলাদা করে দ‍্যায়, মা'র থেকে
ছেলেকে আলাদা করে, ভাইদের ভিতরেও দিয়েছে বাড়িয়ে
দূরবোধ। দূরত্বের দোকান খুলেছে যেন, ফ্রিতে গুঁজে দাও
সামনে যাকেই পাবে, এমনই দর্শন! নাকি অভিসন্ধি কোনও?
যে কেবল দ্রুত ভেঙে দিতে চায় "একতাই বল" ধারণাকে।
কী হবে এসব করে! পিতাকে সন্তান থেকে করছো আলাদা!

এই দোষ আপনার বিনয়দা। আপনার কবিতা শুনিয়ে
এইসব ভাইরাস মাইরাস গুলো ঢুকে পড়ল জীবনে।
আমিও রামের বশে, কখনও কামের বশে দিয়েছি কামড়
আর ব‍্যাথা পেয়ে উঠেছিল সীতা, অপরাধ বোধ জেগেছিল
নয়নে তখন ঢেউ উঠেছিল কোনও এক মায়াবী কারণে।
চিনেও তখন আমি হয়েছি মোহিত তার রসে, বেদনায়
ভরা চোখে হরিণের ছোটোছোটো গতি দিতে চেয়েছি নীরবে।
তখন রামের বশে বন্ধু লক্ষণের রেখা ভুলে গেছিলাম,
সব চাল দেখেও দেখিনি, বরং তাঁর অগ্নি পরীক্ষার কলে
ভিজেছি সহসা আর আমার স্নানের কথা জেনেছে সকলে।

সমস্ত পরিধি জুড়ে ধ‍্যানস্ত ঋষির মতো আমাকে জাগিয়ে
রাখো সীমানায়, কোনও সীমা নেই মানা নেই কেবল দর্শন
বদলেছে ধারনায়, একটা দাগের মতো অবিকল তুমি
লীন হয়ে যেতে পারো ভেবে যতো দিয়েছি প্রশ্রয়, তুমি ততো
কাটাকুটি দাগ, তুমি ততো চলে গেছ দূরে, ধারণা ছাড়িয়ে
এতো দূরে চলে গেছ, এতো দূরে! আমিও কি বসে থাকি আর!

ছড়িয়ে পড়েছি আরও দূরে জেদি পাহাড়ের মতো চুপচাপ
ক্ষেপে আছি ভিতরে ভিতরে, অথচ মাথায় কোনও চূড়া নেই।
তুমিতো মুকুট পরে আছো মিথ‍্যা বেলুনের খাপে, আজাবধি 
আমাকেও বারবার তোমার ভাঁড়ের টুপি পরিয়েছো চাপে।

তুমিও কি কেঁচো হয়ে ওঠো নি তাঁদের বড়শিতে? কিংবা তুমি
সেটাই চেয়েছো, তাই বিনয়ের কবিতা পড়িয়ে অভিনয়
করে গেলে অকারণ। আমিও ক‍্যাবলা কাঠবেড়ালীর মতো
বুঝেও বুঝি না। শুধু, টের পাই তুমি ব‍্যর্থ হয়েছো তুলিতে
সাদা মাছ, বিনিময়ে উঠে এলো কুচে তাই তোমারও কদর
গেছে ঘুচে, বড়শিতে গেঁথেছিল যারা, ভেবেছিল অঙ্গচ্ছেদ
দুম্বার শরীর থেকে মাংস কেটে নিতে চেয়ে, দিয়েছিল কোপ
আলাদা হয়নি, এই ক্ষোভে উনুনের আঁচ হঠাৎ আগুন
হয়ে গেছে! ফলে তেতে উঠেছে কড়াই। দুম্বারও শরীর থেকে
ঝুলে থাকা মাংসের মতন এই সামান্য বেতন, মনে হয়
পচে গেছে অনাদরে। কীসের কদর আর! ক্ষমার আড়ালে
তুমি এক অন‍্য ক্ষমা, উচ্চারিত হতে তবু শেখোনি সঠিক।
আখেরে গোছাতে চেয়ে চিৎকারে ধরা পড়ে গেছে মেঘদূত।

আসলে আমার কাছে আছে এক বিনয় ম‍্যাজিক, দেখেছিল 
তারা জানে, কী রকম করে, ঘন্টায় ষাইট কিমি বেগে চলা
একটা মোটর সাইকেলকে হঠাৎ স্থির করে দেওয়া যায়।
অথচ চলছে সেটা, ঘন্টায় ষাইট কিমি বেগে চলে গেল
চোখের নিমেষে, যাকে আমরা দেখেছি স্থির দাঁড়ান, রাস্তায়

বাইক আরোহী, এর কিছুই জানে না, সেতো ষাইট ভাবছে;
আমরা দেখেছি স্থির এগিয়ে চলেছে…, এতো ছোট এতো ছোট 
ঘটনা দেখেছি আর ভাইরাস চিনব না হয়! সব চিনি।
মাইরাস গুলো আরও অধিক ছলনাময়ী, স্বভাবত এক
তবুও ভাইরাসকে, যথারীতি খাইয়ে দিয়েছে তাঁরা গোল।

গোলের ভিতরে ছিল মধু, মধুময় সর তাঁর অতীতের
দিনগুলি নিয়ে জেগেছিল গোলের ভিতরে সাদা সাদা
নীল নীল পাখির ডাকের মতো কিছুটা সবুজ সেই টান
আসলে আড়াল ছিল, তাই টেনে ধরেছিল জোরে, মসনদ 
ছুটে গেল তাই, আর রসনদ উঠিল জাগিয়া দেহ মনে।

মনের বিরাম নাই। মনেই মনন খুন হয়ে গেছে পুরো।
বসন্ত বিকালে কোনও কোকিলের ডাকের ভিতর আর
তোমাকে পাবো না খুঁজে, তুমিও আমাকে আর কোথাও পাবে না
পুরোনো দিনের মতো, প্রেমের প্রথমে কিংবা আরও আরও আরও
আমি কি হইনি নত বলো? প্রতিটা সময় মনে হতো যেন আমি
ফাঁসের ভিতরে চেরা দাগ, জিভে পিন ফুটিয়ে দিয়েছে কেউ।
মুখ ভারি হয়ে গেছে, কোনও কথা বলতে পারি না, তবু দাঁত
বাচালতা হেতু, কিছুটা বিনয়ীহেসে ওঠে শিশুর স্বভাবে।

তোমরা উহাকে ভাবো জয়, ব‍্যাথা তো বোঝো না! শিশুদেরও
মনে কষ্ট হয় তাঁর বাবার কারণে, তাই ভুলিয়েই রেখো।
কেউ গিঁট দিয়ে রেখো দরজায় নিয়মিত করোনা স্বভাবে।
তাঁরা তো এটাই চায়, দূরে দূরে থাকো সব, দূরে আরও দূরে
তোমাকে আমার থেকে, আমাকে মেয়ের থেকে রেখেছে সুদূরে।

আজ খুব রাগ হয়, কেন আমি এতটা বিনয়ী হতে গেছি!
ক্ষোভ হয় নিজের উপরে, কেন আমি আরও হতে পারিনি বিনয়ী?
ধন্ধের ভিতরে কেটে যাচ্ছে সন্দেহজনক একটা জীবন
গুলি খেয়ে মরে যাওয়া ভূতের মতন আমি বেঁচে আছি প্রিয়ে!

ফলে আমি গোয়েন্দার মতো হয়ে উঠি ধরা পড়ে যাওয়া এই
নিরীহ জীবনে, দেখি ভাইরাস গুলো, মাইরাস গুলো সব
স্নায়ুকে নরম পেয়ে বসেছে সেঁধিয়ে, আর দিয়েছে জড়িয়ে
জালে তার! ভাবো কী, বোঝে না কিছু গাছের শিকড়? যে পাতাই
ঝঁরুক না কেন তার নাম লেখা থাকে শিকড়ে শিকড়ে। ভাবি,
হয়তো আমারই দোষ! তুমি দোষী, প্রমাণিত করার তাগিদে
ভুলেছি তোমার সব গুন, যোগটাও মনে পড়ে না এখন।
কেবলই ভাগের রীতি, বিয়োগের চাপে কথা বলে স‍্যাকারিন।


আমিও জেনেছি বেশি! আজ ভাবি কেন সব জানতে গেলাম!
কোথায় রাখব এই চাপ! আমি তো রাবণ নই, হতে পারি
শয়তান বড়ো। তবু তোমাকে হারাতে আমি চাইনি এভাবে।
হেরেছি নিজের কাছে, হেরে হেরে হেরে গেছি নেশার কাছেও।

মাঝেমাঝে বাঁশিটা বাজাই, তবু আমাকে বোতল ভালোবাসে।
ভালবাসে বোতলের কাঁচ আর কাঁচের আঘাত ভালবাসে;
প্লেনের ছায়ার মতো সে'সব যায় না দ‍্যাখা, শোনা যায়

তবু বলো, কখনও কি করেছি হিসাব? ডাল ভাত খেয়ে ঠিক
দিন গুজরান করে দিতে পারি এই মর্মে ধরা কি দেইনি!
বলো। সপে কি দেইনি কোনোদিন নিজেকে তোমার  হাতে পুরো?

তুমি তো এমন ছিলে না কখনও! সহজাত ওষুধের মতো
আমার ভিতরে ছিলে, বোতলেরও ভিতরে মদের মতো তুমি,
কাপে ছিলে সকালের চায়ের মতন, আমি তাকে দুপুরেও
টেনে নিয়ে গেছি লীলাক্রমে বিকেল অবধি…, সন্ধ্যা হয়, চাঁদ
নেমে আসে পুকুরের নিয়মিত জলে, সব হাঁস উঠে আসে
ডিমের আড়ালে যাঁরা এতো দিন কেটেছে সাঁতার তারাও তো
উঠে এলো, চই চইশুধু সেই একজন, ঝোঁপের আড়ালে
ঢুকেছিল ডিম দিতেফিরে আর এলো না তো! হিসেবি শেয়াল
সমস্ত হিসেব করে এলোমেলো, চলে গেছে নিজের ভিতরে।

যাক, যে যেখানে যেতে চায়। চলে যাক ছিঁড়ে যাবতীয় সুতো।
যার যা খুশি সে তাই ভাবুক আমারে, আমি তো পাবলো না।
পিকাসোর জীবন চরিত ঘেঁটে দেখিওনি কখনও সাহসে,
ভয়েও দেখিনি হতে পারে, তবু সক্রেটিস বলেছিল বলে
প্লেটো নেমে এসেছিল জীবনধারায়, চেয়েছিল দার্শনিক
হতে আর দুই কান কেটে মুখোমুখি হয়েছিল আয়নার।

ফলে জেগে উঠেছিল অন্তঃকর্ণ খুব বেশি শোনার ধাঁধায়;
জীবন শুরুর থেকে আমি তাই করোনার প্রভাব শুনেছি।
কী ভাবে আলাদা ক'রে খেলার সময় টুক মেরে দ‍্যায় গোল।
আমাদেরও সংক্রামক মন ওঠে নীরবে গাহিয়া, পত্রদল
ঝরে যায় বিচ্ছেদের বানীর মতন কিছু বিষয়ের কানে।
ভয় হয় করোনা কারণে যদি জলের অভাব দ‍্যাখা দ‍্যায়!


আমি তো জানি না এই মৃত‍্যুক চেতনা করোনার দান, না কি
প্রতিবার যেরকম আসে সেই স্বাভাবিক নিয়মে এসেছে।
করোনা একাই নয়, করোনার সাথে আসে একটা সংশয়

এটাতো এমন নয়, আমাতে এসেই সব শেষ হয়ে যাবে!
কে কোথায় থেকে যাবো সেটাও জানি না! শেষে না এমন হয়
ইভ ও আদম শুধু জেগে আছে একা একা, পৃথিবী ঘুমিয়ে!

ফলে চাই প্রবল সংযম, ফলে দূরে আরও দূরে দূরে থাকো
সীমানা পেরোলে তবু অসীমের ওপাশে তো যেতে পারবে না!
নিজেকে শুধরে নেও, নিতে হবে, এটাই সময়, বুঝে নিও
কোনও বাঘ চায়নি তো শৃগালির পেটে দিতে ঢুকিয়ে আগুন,
তবু আলো দিয়েছিল ভরে দাপনার জোরে, কোমর ছাপিয়ে

আলো ফুটে উঠতেই বিষয়ের থেকে কথা বলে ওঠে বিষ,
আমিও বিষাক্ত হয়ে উঠি তাই হিসি করি অ‍্যাসিডের মতো;
বাকি টা ভেবেই নিও। ভয় নেই ভাইরাসে মাইরাসে আর
যার যার ঘরের মহিলা শেষে সাড়া দ‍্যায় আয়নার ডাকে।

বালির ওপার থেকে ভেঙে আসে বাঁধ এই আশার জগতে।
ভোরের ঘুমের মতো চোখ, ভেঙে যায় মৃদু খুলে, উঁচু জল
তবু কী আরাম ছিলো পাখিদের গানের ভিতরে, ছিলো ঘড়ি;
কখনও বিষন্ন ভাবে ডেকেছিল কোনো এক হিমের সকালে
আমিও ঘুমের কাঁচ ভেঙ্গে দুই-চার-ছয় করে অশ্রু জলে
লিখেছি কবিতা তবু নুনের অভাবে তারা জাগেনি সেভাবে।

আমি তো চেয়েছিলাম, বিনয় মজুমদার হতে, নির্দ্বিধায়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হতেও চেয়েছিলাম লেখার শুরুতে।
অথচ লিখতে বসে বুঝেছি মানুষ নই, কোনও নিশাচর
লাইট পালালে রাতে খুঁজে পায় অনায়াসে বেল, ঘন্টি বাজে

আমি রাখি দূরবীনে চোখ, দূর্ভেদ‍্য আঁধার চারিদিকে, তবু 
সামান্য আঙ্গুল এই, দেখে নিতে পারে সব ভীষণ সহজে।
তার মানে আঙুলেরও চোখ আছে আমাদের চোখের মতন,
হাতেরও তালুতে আছে চোখ আর লোলুপিত চোখের আগুন।
হঠাৎ ভাঙলে ঘুম জাগে সে-ই সবার প্রথমে আর খুঁজে
পায় বল, মোরা তাকে হাতড়ানো বলি এই তাড়না জগতে;
খুঁজে পাই বালিশের মতো কিছু নরম অসুখ, লাগে সুখ।

অন্ধরা তো এ বিষয়ে ভালো জানে আরও! অথচ আমার আর 
মানুষের চোখ বলে কিছু নেই, হয়ে গেছে অমানুষ পুরো।
ফলে আমি চোখ খুলি খুঁজে পেতে শুধু ওই পরম আয়ুধ
যার কাছে আছে, সেই অমোঘ তারাটি, তার আলো পড়ে আছে
জলের শরীরে, ঠিক সেখানেই উড়ে এসে একটি জোনাকি
ফেলেছে নিঃশ্বাস যেই, জলে নেমে আসা সব তারারা উধাও

প্রতিবিম্ব হয়ে গেছে চুর। শুধু ওই অমোঘ তারাটি নেমে এসেছিল
জলের যেখানে, জল তো সেখানে দেনও এতোটাই ছিল থিড়
জোনাকি, প্রেমিকা ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সেই জলে আর ঘুম
ভেঙ্গে গেছে পুরো তার স্নানের অসুখে, ফলে আয়না দেখলে
জাগে ভয়, এই বুঝি ভেঙে যাবে অনাহারে কাটানো দ্রাঘিমা!
সারাদিন ধরে সে তো জ্বলে, কেউ তা বোঝে না! শুধু, রাত হলে
উড়ে উড়ে ঢুকে যায় কার যেন ঘরের ভিতরে; মশারির
চারিপাশে ঘুরে ঘুরে খোঁজে পথ ভেতরে ঢোকার, ফুকো খোঁজে

রাত আরও গাঢ় হয়, শয়তান ভর করে ঘাড়ের উপরে;
আমিও, শয়তানের ঘাড়ে ভর করি আর বানান কিছুটা
ভুল হতে হতে ঠিক হয়ে যায় ছলনার তালে। ঘুম আসে,
ঘুমাতে পারি না! একে একে নেমে আসে তারা বালিশে তখন।

এই দেহ মহাকাশ যেন! কিংবা শয়তান নিয়েছিল ধার!
দেবতাও রেখেছিল তার মাথা একদিন অবসর কালে
আমাকেও মেঘ হতে দিয়েছিল চাপ, আর আমি ফুলে ফেঁপে 
উঠেছি মরণে ফুল। আহা, যদি ঠিক হতো এরকম, আমি নেই
বিনিময়ে পৃথিবী আবার ঠিক, আগের মতন হয়ে গেছে।
সেরে গেছে মনের করোনা, ভালো মানুষেরা বেঁচে গেছে;
সকল শিশুরা মায়েদের সাথে বেরিয়েছে ঘুরতে রাস্তায়
সবুজ হরিণ দেখে তারা হাততালি দিচ্ছে, রঙিন বেলুন
কিনে দাও, বলে তারা মায়ের আঁচল টেনে ধরেছে বায়না
পাখিদের হরেক হুকুম, ছেড়ে দাও খাঁচা থেকে গাছাবধি
যেন এক নতুন পৃথিবী, সকাল সকাল বেরিয়েছে কাজে।

আমারও মেয়েটি ভোরে, জেগে যাবে পাখিদের কাকলিকা শুনে,
জানলার পাশে ওই ডালটিতে হয়তো বসবে কাকাতুয়া।
আমারও মেয়েটি বলে আধোআধো সবে, সে-ও তার মা-কে ডেকে
জানলার পাশে বসা পাখিকে দেখিয়ে যদি বলে ওঠে বাবা

শুধু তোর কাছে যাবো, কানে কানে বলে দেব আসল ঘটনা।
তবু চাই ভালো থাকে যেন তারা, খুব ভালো থাক তোকে নিয়ে।
ভালো থাক পৃথিবীর সকল সোনারা তার মায়েদের সাথে।
যুগে যুগে সোনাদের গুনে সব রূপাদের ফিরুক চেতনা।

আমি চাই সেরে যাক পৃথিবীর যাবতীয় অসুখ এবার।
কবি হতে আসিনি এখানে আমি। কবিতা তো করোনাও লেখে।
জানে ইহা কবিতা দেবতা আর জানে শুধু কবিতার গুরু।
আমি তো একাই নয়, ফলে আমি একা কারো নই। এই জল
এই হাওয়া মাটি, তারারাও জানে সব, প্রকৃত ঈশ্বরী
সেও জানে কবিতায় মিথ‍্যা আমি লিখিনি কখনও লিখি যাই

যতটা শরীরী আমি, তার থেকে বেশি অশরীরী, তাই ভূতে  
ভয় নেই, মরেও হবো না ভূত, দরজাটি খোলা রেখো শুধু।






2 comments:

  1. কিছু কিছু লাইন পড়ে চমকে উঠতে হয়।

    ReplyDelete
  2. একটা বড়ো ক্যানভাসে এই সাবলীল তুলি চালনা কবির হাত চিনিয়ে ।। কেননা ভাবনাটির কাঁধে চড়ে না বসলে এ লেখা হয় না। হ্যাটস অফ। অভিবাদন।

    ReplyDelete