।। বাক্‌ ১৪৩ ।। অনুবাদ কবিতা ।। দীপ্তেন্দু জানা ।।









মাইকেল ডিকম্যান। একজন আমেরিকান কবি। জন্ম ২০ আগস্ট, ১৯৭৫। পোর্টল্যান্ডে। দি নিউইয়র্ক, আমেরিকান পোয়েট্রি রিভিউ , ফিল্ড, টিন  হাউস, ন্যারেটিভ ম্যাগাজিন প্রভৃতি পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল - দ্য এন্ড  অফ দ্য ওয়েস্ট, ফ্লাইজ, ডেজ এন্ড ডেজ, গ্রীন মাইগ্রেন ইত্যাদি। ২০১০এ পেয়েছেন জেমস লাফলিন অ্যাওয়ার্ড দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থের জন্য। বর্তমানে তিনি শিক্ষকতা করেন প্রিন্সসটন ইউনিভার্সিটিতে।

আমার ময়নাতদন্ত
*****************
 ---মাইকেল ডিকম্যান 

রাস্তা একটা থাকেই
সব কিছুর জন্য 
যদি আমরা ভেতরে ঢুকতে চাই 

আমি খাব চিকেন কার্বনারা এবং তুমি খাবে বাছুরের মাংস, অলিভ, ছোট্ট এবং গরম পাঁউরুটির টুকরো

আমি খাব ছেলে ওয়েটার,মেয়ে ওয়েটার
চিকন কালো পাজামা পরে মোমজ্বলা অন্ধকারের ভেতর 
ভেসে-ভেসে 
রাত্রির জলের মতো

ন্যাপকিন মুড়ে মুড়ে বানানো কাগজের নৌকাগুলো 
অদৃশ্য  জাপানী কবিতা বোঝাই

তুমি খাও কাঁটাচামচ 
সবকটা ছুরি, ঘুমোতে ঘুমোতে আর অপেক্ষা করতে করতে
সফেদ টেবিলে

তুমি কি ভালোবাসো?

আমি ভালবাসি যেভাবে আমাদের দাঁতগুলো থেকে যায় আমাদের চলে যাবার অনেক পরেও, ঝুলন্ত অবস্থায় পোকা বা আগুন সত্ত্বেও

আমি ভালবাসি আমাদের পাকস্থলী 
যারা সমর্পণ করে
দোঁয়াশের কাছে


মাছি মারছি
------মাইকেল ডিকম্যান

আমি ডিনারে বসলাম
আমার মৃত ভাইয়ের সঙ্গে
আবার

এটাই শেষতম স্বপ্ন যা আমি চিরকাল দেখতে চাই 

এগিয়ে দিচ্ছি কাঁটা চামচ 
খাবার টেবিলে, বাড়িয়ে 
দিচ্ছি ছুরি

দুশ্চিন্তা করার কিচ্ছুটি নেই

এটা আমি তো নয় 

হেঁশেল মাছিতে ভর্তি, মাছিরাই
সমস্ত কাজকর্ম করছে

তারা বসে আছে
রোস্টেড চিকেনের ধার ঘেঁষে 
বোন চায়না

ওটাই তারা করছে 

চনমনে

আমাকে দেখতে লাগবে 
বেশি বেশি করে তার মত 
যতদিন না আমি বুড়ো হচ্ছি
তার চেয়ে 

তাকে তখন দেখতে লাগবে অনেকটাই আমার মত 

যদি আমি
হারিয়ে যাই

মাছিগুলোকে মারা দরকার আমাদের 
খাওয়া হয়ে গেলেই যে সুস্বাদু খাবার
তারা বানিয়েছে

আমরা যেটাই চাইছি তারা আমাদের পরিবেশন করছে বিষাক্ত সবুজ ডিনার জ্যাকেট গায়ে
এবং 

বিষ্ঠা মাখানো যাচ্ছেতাই ডানা

আমার ভাই এবং আমি মুখ মুছে নিলাম 
আমাদের চেয়ারগুলোকে কর্কশ শব্দে টেনে নিলাম টেবিল থেকে 
এবং উঠে দাঁড়ালাম

এইগুলিই শেষ কাজ যা আমরা করব
একসাথেঃ


ডিনার খাব 


মাছি মারব

তোমাকে শুয়ে পড়তে হবে 
দেহগুলির পাশে, চকচক করছে 
সব এক সারিতে
যেন কালো সীকুইন ক্লিপ গুলি
জোড়া দিচ্ছে 
রান্নাঘরের মেঝে

এটা করা কঠিন কিন্তু এটা তোমাকে করতেই হবে

শান্তভাবে শুয়ে পড়ো
এবং ঘুমিয়ে পোড়ো না 

আমরা তাদের হত্যা করছিলাম মাংসকাটা ছুরি দিয়ে কিন্তু এবার চ্যাপ্টা পাতলা স্প্যাচুলা ছুরিতে গেলাম সময় এবং শক্তি বাঁচাতে

চোখ আটকে নিচ্ছে তাদের 
আমাদের কানের লতি এবং কব্জিতে 
যেন মিশরীয় 
গয়না

আমার ভাই এবং আমি খাটাখাটি করলাম সারারাত 

সে আমার আপৎকালীন দরজা

আমি
তার 

ডিনারের তারিখ



মৃত ভাই সুপার হিরো
******************
----মাইকেল ডিকম্যান

ভয় পেতে হবে না 
তোমাকে
আর

তার অতিমানবিক পোশাকটি কয়েক মুঠো বিষ্ঠা আর
গন্দা খুন দিয়ে তৈরী এবং সেলাই করা
তারার রেশম দিয়ে

উড়ে বেড়াচ্ছে ঘরময় 
যেন একটি
মশা 

সমস্ত রক্ত চুষে নিচ্ছে
যা কিছু আমাদের
আছে

আমাদেরকে বাঁচাতে
যাদেরকে 

রক্ষা করা প্রয়োজন 

আমি ফিসফিসিয়ে বলেছিলাম উদ্ধারকারীকে এবং বসেছিলাম
আমার বিছানার 
এক্কেবারে ধার ঘেঁষে 
সারারাত 
এবং

সারা সকাল

মেঝে ছুঁয়ে যাচ্ছিল না আমার পায়ের পাতা 

আমার হৃদপিণ্ড দৌড়াচ্ছিল

আমি আমার শ্বাস গুনছিলাম পুঁচকে সাদা ভেড়ার মত এবং
খোলা চোখ আটকে রেখে ছিলাম এবং দরজার দিকে স্থির তাকিয়ে ছিলাম

যেকোনো সেকেন্ডে এখন 
যেকোন সেকেন্ডে 

এখন

সে রক্ষা করেছিল মস্তিষ্ক 
পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে 
গড়ে ওঠার হাত থেকে 

সে থামল এবং বুলেটবিদ্ধ করতে শুরু করল আমার হৃদপিণ্ডকে 
তার দাঁত দিয়ে

ঠিক ঐ রকম 

সে নিচে তাকাচ্ছিল মহাকাশ থেকে সমস্ত মেঘের ফাঁক দিয়ে, পাখিগুলো টুপটাপ ঝরে পড়ছিল ঢিলের মতো

সে বাইরে তাকাল 
পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে 
আগুনের মধ্য দিয়ে
সে 

হয়ে উঠছিল 


সে দাঁড়িয়েছিল দরজায় 
এবং বুজিয়ে নিয়েছিল তার চোখ 

তার হাতাহীন কোটের ঝালর ঝাঁট দিচ্ছিল মেঝে


আমার বন্ধুদের জীবন থেকে 
*************************
-----মাইকেল ডিকম্যান

কী নামে ডাকা হয় পাখিগুলোকে 
ওই পড়শী এলাকায় 
কুকুর

সেখানে ছিল উড়ে বেড়ানো কুকুর 
গাছের ডাল থেকে 
ডালে 

আমার বন্ধুরা এবং আমি খুঁটিতে চোড়েছিলাম টেলিফোনের তারে বসার জন্য 
গায়ে চাপিয়ে 
কাকের মত পোশাক 

লেবুর মতো শোনাচ্ছিল তাদের গলার আওয়াজ

তারা ছিল মসৃণ এক তা কাগজ
তারা বেড়ে উঠছিল 

কালো পালক

আদৌ ভয়ানক নয়
বরং সুন্দর, চকচকে এবং
প্রতিশ্রুতিময় 

কী ধরনের আলো

ওটা?

আমার বন্ধুরা কাটাচ্ছিল জীবনের পুরোটা সময়
মরতে মরতে এবং ফিরে আসতে আসতে এবং মরতে মরতে এবং ফিরে আসতে আসতে

তারা বিরতি নেয় গ্রীষ্মে 
মদ তৈরীর শস্য কাটতে 
হলুদ লন, জ্বলমান 
সামনে এবং 
পিছনে

শীতে কোন বিরতি নেই 

আমি প্রেমে পড়ে যাই আমার বন্ধুদের 
বোনেদের সঙ্গে 
সেই সমস্ত হলুদ চুল!
তাদের হাত
জ্বলমান

তারা তাদের আঙ্গুল চাটে 
আমার মুখ মুছিয়ে দিতে 
পরিষ্কার করতে  

আমার সবকিছু 

এবং আমি আনন্দিত 
আমি আনন্দিত 
আমি
কত আনন্দিত

আমরা সবাই জাহাজে জাহাজে চালান হয়ে যাব
ফ্রিজের ভেতর
একটা মাত্র শব্দ 'ঝিনুক' 
বাইরে রং দিয়ে লেখা

একলা পড়ে রইলাম, একবারের জন্য 

আমার কোন বন্ধুই উপন্যাস লিখত না অথবা নাটক, আমার বন্ধুদের জীবন থেকে এসেছিল তাদের জীবন 

এই সবই যা আমরা করতাম
আমরা বাইরের উঠানে খেলতাম 
ডিনারের পর 

এবং তারপর 
আমরা জাহাজে জাহাজে চালান হয়ে গেলাম 

ওটা ছিল দ্রুতগামী---

ঠেসে ঠেসে  
ভরা

লেবুতে




ক্যানেল থেকে
*************
----মাইকেল ডিকম্যান

কিছু একটা শুঁকে দেখছে 
মৃত হরিণটাকে 

এবং তার কানের ভেতরের লোমগুলো
দুলে উঠছে 

হেডলাইট এবং
রাবার

জলে ভরে যায় কালো চোখের গর্তগুলো যা দেখতে থাকে প্রতিফলিত সবকিছু
পিচ্ছিল কালো খোয়া ঢালা পিচ থেকে

কেউ তোমার পায়ের পাতা ছেঁটে ফেলেছে

কেউ তোমার পা মাড়িয়ে রাস্তা পেরোলো

কেউ বাজালো হুইসেল 

জন্ম দিচ্ছে 
তুমি জন্ম দিলে বাষ্প 
এবং অনেক শুককীট

অবাক তাজা প্রজাপতি 


দাড়ি কামাচ্ছি তোমার বাবার
*************************
---মাইকেল ডিকম্যান

প্রথমে একটি বাবা পেলাম আমি 
কোন এক 
বাবাদের শহর থেকে

ঘাড়ওয়ালা একজন

উজ্জ্বল 
লাল

এবং আমার আঙ্গুলের সবকটা পাখির হাড়
দিয়ে তার চিবুক উল্টে দিলাম ভালবাসার মত আলোতে 
      যাতে আমি দেখতে পাই
      যাতে আমি গন্ধ পাই

আমি একটা নোংরা হাস্যকৌতুক বললাম, তারপর ব্লেড বোলাতে থাকলাম ব্রহ্মাণ্ডজুড়ে 

তোমার বাবার দাড়ি কামানোর চেয়ে
ভালো কিছু নেই
হয়তোবা
তোমার মায়ের

পা কামানো ছাড়া 

আমার বিছানা সংলগ্ন আচরণ নিষ্পাপ

সাদা ফেনা
সাদাই থাকে

সন্ধ্যেবেলায় 
তার মুখ আকৃষ্ট করে পতঙ্গ এবং নারীদের          পুত্রদের
কন্যাদের 

যেন তার চিবুক ক্রিসমাসের লাইটগুচ্ছ দিয়ে তৈরি, তোমাকে কামিয়ে ফেলতে হবে
পতঙ্গদের এবং পরিবারপরিজনদের
চিবুক যাদের প্রলুব্ধ করে চিরকাল 

ডানাগুলি পেরিয়ে যায় তোমার সমস্ত আঙুল 

আমি পছন্দ করি মার্কার সুপার 
প্লাটিনাম কোটেড 
স্টেনলেস স্টিল

তুমি জলের উপর লিখতে পারো এটা দিয়ে

জং-মুক্ত 
জং-মুক্ত 
মেড ইন জার্মানি 
তাই এটা 

টিকবে এবং টিকবে

আমার বাবার দাড়ি কাটছি 
আমি কামাচ্ছি না 
আমার দাড়ি 

আমি আমার মস্তিষ্ক কামাচ্ছি 

চেঁছে ফেলছি 
ধূসর আস্তরন 
গোলাপি অঞ্চলে 
পৌঁছতে 

গুঁজে দিচ্ছি টয়লেট পেপার সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুটোয় যেগুলো আমি কাটছি 
যাতে এটা দেখে মনে হয় লাল পতাকা ভরা মাঠ যারা হাত নেড়ে ডাকছে 
কাগুজে টিউলিপ 
ভালোবাসার ধুন

ব্রহ্মাণ্ড চায় নিখুঁত কামানো দাড়ি 
সে চায় তার লোম 
কর্কশ
এবং টানটান 

তুমি চাইলে ১০ সেন্টের রুপোর কয়েন বাবার ত্বকে ঠোক্কর খেয়ে ফিরে আসবে 

আমার হাত 
তোমার দাড়িতে তুমি কি পারো 
অনুভব করতে


No comments:

Post a Comment