।। বাক্ ১৪৩ ।। সোনালী চক্রবর্তী ।।



সোনালী চক্রবর্তী

সিরিজ : প্যান্ডেমিক


কোভিড পসিটিভ

তাহলে কি জলের ভিতর দেখা হলো? অনেকটা চাঁদ গলে যে দিন পদ্মে না মিশে পলাতক শঙ্খচিল... কথা বললো প্রগাঢ় নৈ:শব্দরা? যযাতি অন্ধকারেরা অন্ধ সাক্ষ্য দিল নিশির? তোমায় দেখে কলে পড়া ইঁদুরের উজ্জ্বল পুঁতিগুলোর স্মৃতি আসছিল। নিষ্পাপ অথচ বধ্য, প্রায় ঈশ্বরের মত সাবলীল ছিলে তুমি এই ভূমিকায়। যেভাবে সাপ থেকে পাপ, পাপ থেকে নারী হয়ে বেহায়া গল্পেরা কঠিন সত্যের বেলুন হয়ে যায় ধর্মসভার বারান্দায়, দেখ অবশেষে সেই বঁড়শিরা মাকড়সা না হয়েই রিফু করলো কেমন তোমার ইন্দ্রিয় আর স্নায়ুর সব কটি জানলায়। তুমি ডুবতে ডুবতে ভাবছিলে পাতালপুরী পৌঁছে যাবে রাজপুত্তুর অবশ্যই আর ক্ষয়ে যাওয়া গলুইতে গান বাঁধা হচ্ছিল কীভাবে স্বচ্ছ ভ্রান্তির স্রোতে মৃত্যুকে খুবলে খেতে চলেছে ক্ষুধার্ত গর্ভিণী। 



আনলক

ভেবে দেখো, বামন শরীরের ভিতরে কোন মজ্জা ক্ষুদ্র থাকে না অথচ যে কটি পূর্ণ হত্যার শিরে আত্মার শাক ছড়াতে চাইলে তাদের পদ্ধতি অদ্ভুত গণতান্ত্রিক। ভরদুপুরে ঠোঁট ঘষটাল সস্তা লাল রঙ কিছু কিন্তু শুকনো আগুন ফিরল না উনুন থেকে রাত, মহান ভরসায়। কোন দানের দানায় অর্থনীতির তুলাছাপ মারলে না অথচ অদ্ভুত ভারসাম্যে আলাদা হয়ে গেল ভিখিরিদের মহাদেশ। মুহুর্তরা উন্মাদ হয়ে গেল লাশের সুরতহাল রাখতে রাখতে শুধু উর্দির টুকরো জড়ানো না থাকায় কেউই শহীদের স্ট্যাম্প পেল না।



নিউ নরম্যাল 

বহুদিন লিখতে না পেরে টাইম মেশিনে চেপে ঘুরে আসা গেছে রজ:নিবৃত্তির দেশ। দুপুর দেখতে দেখতে নকশায় এসেছে কীভাবে খুরপি দিয়ে পড়ন্ত শ্যাওলা থেকে উপড়ে ফেলা হবে আলগা রোদের খুঁটি। তর্জনীতে দরদ না থাকায় গুহায় কোন এস্রাজ এই সময়ে নদী হয়ে বাজেনি। তবুও তানহা লাল মাটি নির্ধারিত জলে ভেসেছে বেশ্যার নিষ্ঠায়, আর পিলেটের আংটি গলিয়ে তুমিও ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছ চাঁদের টুঁটি। আমি এরপরেও বুঝব না পুঞ্জাক্ষি নিয়েও কেন আজীবন কানা থেকে যায় সব, সব কটা মাছি?

23 comments:

  1. এই সিরিজটা আমি আগের সংখ্যা থেকে পড়ছি। সেখানে যে কথাগুলো বলেছিলাম, এই লেখাগুলো পড়ে তা একই থাকছে। শুভেচ্ছা কবিকে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার কৃতজ্ঞতাও বিন্দুমাত্র কমছে না, এক থাকছে বরং বাড়ছে

      Delete
  2. বুঁদ হয়ে গেলুম। যেন চঞ্চল নদী ও প্রশান্ত পাহাড়ের মিলন।

    ReplyDelete
  3. ও কবি কী লিখেছেন এসব! অনবদ্য।। চারবার পড়লাম।। তবু ফুরোলো না৷

    ReplyDelete
  4. অসামান্য হয়েছে তিনটে কবিতা । যে গভীরতায় বসে তুমি লেখাটা লিখেছ, আমার বিশ্বাস এই কবিতাগুলো সংখ্যায় আরও আছে, কেননা গভীতা ও রুদ্ধশ্বাস জীবন তোমার মধ্যে মরেনি, গা ঢাকা দিয়ে বসে আছে । এই তিনটি কবিতা সেটারই পরিচয় বহন করে চলেছে । ভাল লিখেছ । কিন্তু এই লেখাগুলো কি আরো পড়তে পাবো ভবিষ্যতে ? না কি তিনটি কবিতায় গভীরতা রেখে তুমি অন্য অতলে যাত্রা করবে ? যদি তাড়না আসে মনের ভিতর, এরকম কবিতা আরও লিখে যেও, যতদূর তুমি একা নিজেকে নিয়ে যেতে পারো ,লিখে যেও ।
    ।। শুভদীপ নায়ক ।।

    ReplyDelete
  5. দারুণ! "আমি এরপরেও বুঝব না পুঞ্জাক্ষি নিয়েও কেন আজীবন কানা থেকে যায় সব, সব কটা মাছি?" ❤️❤️❤️

    ReplyDelete
  6. ভালো লাগলো দিদি।

    ReplyDelete
  7. লেখাগুলির সঙ্গে জড়িয়ে আছে জ্বর, তীব্র ক্ষয়, মাথা ব্যথার ওষুধ, আমি নিশ্চিত। নিজেকে আঘাত না করে এ লেখা লেখা যায় না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কবিতা তো সেই লিখতে চায় যে ঘা খেতে খেতে ক্ষয়ে যেতে যেতে একদম হেরো একটা লোক হয়ে বেঁচে থাকে কোনমতে, যত দিন যাচ্ছে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে সে কথা

      Delete
  8. এতো যে ব্যথা
    কতো যে ব্যথা
    উপশম নেই !!!
    এও একধরনের নিষ্ঠা জানো তো দি
    ক্ষতয় আঙুল বুলোনো কিংবা ফুঁ দেবার সাহস কারো নেই ❤

    ReplyDelete
    Replies
    1. না রে, এ যন্ত্রণার উপশম নেই কোন,বিষের নেশা

      Delete
  9. সোনালী,
    আমার পড়তে পড়তে মনে হয়েছিল একটা ডিপ্রেশনের মধ্যে এই কবিতাগুলি লেখা।
    আপনার সঙ্গে কথাও হয়েছে এই নিয়ে।
    কবিতা তো অনেক সময়েই ক্ষরণ। এই সময়ের মাঝে সেভাবেই ১৪২ আর ১৪৩ এর কবিতাগুলি।
    আপনার কবিতা পড়ে এমন লাগেনি আগে।
    তাও, ১৪২ এর কবিতাগুলির মধ্যে একটা মোহাচ্ছন্ন করা ব্যাপার ছিল। হয়ত একটু অন্য দশায় আসা কবিতা তারা।
    কিন্তু ১৪৩-এ একটা অন্যরকম হতাশার উপলব্ধি।

    শুধু কানা নয়... একাধিক ইন্দ্রিয় কসমেটিক অথবা ভেস্টিজিয়াল হয়ে গেছে কীটসম জনজাতির।
    মনকে একটা পরিবেশ থেকে তুলে অন্য কোথাও বসিয়ে তবে অন্য কিছু ভাবা যায়। নাহলে এমন অবসাদই আসবে বারবার। এই অবসাদের কাছে মুগ্ধতা রাখতে অক্ষম, সহানুভূতি অথবা সমবেদনা জানাতে পারি।

    ReplyDelete
  10. এই লেখার পাশে নতজানু হয়ে বসে দীর্ঘ সময় নীরব থাকতে হয়, আমার দুর্ভাগ্য এত দিন পর আমি দেখতে পেলাম ।

    ReplyDelete
  11. ভীষণ ভালো লাগলো

    ReplyDelete