।। বাক্‌ ১৪৩ ।। গল্প ।। হাসান মোস্তাফিজ ।।




স্বপ্ন ভুবন
হাসান মোস্তাফিজ

সবার ক্ষেত্রেই এমন হয়। প্রত্যেক শিশুর বাবা-মা, ধরে নিলাম তারা সমাজে কিছু লোকজনের কাছে খারাপ, তারাও শিশুদের প্রথম প্রথম ভালো মানুষ হবার তাগাদা দেয়। পরে অবশ্য বাবা-মা না, শিশু নিজেই সে তাগাদা ভেঙে ফেলে। আমি অবশ্য শিশুকালে ভাঙিনি। হিসাবে আমি যথেষ্ট ভালো ছিলাম। শুধু তাই না, আমার নানি আমাদের সঙ্গে থাকতেন। ওঁকে প্রায়ই দেখতাম সকাল এগারোটার দিকে নিজের রুমে কুরআন নিয়ে বসতেন। কুরআন পড়বার সময় ওঁর চোখ দিয়ে পানি পড়ত একসময়ে উনি কুরআন বন্ধ করে কান্নাকাটি শুরু করতেন। কান্নাকাটি পর্ব শেষ হলে শুরু করতেন তসবি গোনা। তসবি গোনার পর উনি আবার ফোঁপাতে শুরু করতেন। শেষ সময়ে হয়তো এটাই ওঁর বিনোদন ছিল এই এক সামান্য ব্যাপারটা আমাকে টানত আমিও নিয়ম করে নানির পাশে গিয়ে সকাল এগারোটায় বসতাম। নানি কান্নাকাটি শুরু করলে আমিও কান্নাকাটি করতাম। এখন ভাবতে অবাক লাগে প্রায় ছ’ বছর হল আমি আর নামাজ পড়ি না। যখন কেউ ইসলাম ধর্মের কথা বলে আমার ঘৃণা হয়। এটার অবশ্য আমার নিজস্ব ব্যাখ্যা আছে। আমার মতে যারা আল্লাহর ক্ষমা বুঝতে পারে না, তারা ইসলাম ধর্ম বুঝে না। আমি হয়তো সেই দলের।
ভালো মানুষ হবার ইচ্ছা আমার দু’টি ঘটনার কারণে চলে গিয়েছিল প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল আমার এক চাচার সঙ্গে চাচা একদিন ঠিক করলেন আমাকে মুভি দেখাতে নিয়ে যাবেন। সুনামগঞ্জ শহরে তখন প্রথম সিনেমাহল বানানো হচ্ছে। উত্তেজনা যথেষ্ট ছিল যদিও মুভিটা থ্রি-ডি ছিল না, তার উপর ছিল কলকাতার একটা বাংলা মুভি। তবুও প্রথম হলে মুভি দেখতে যাচ্ছি।
সেই মুভি দেখার সময় আমি যখন আপন মনে নায়কের প্রেমিকার বিরহের ডায়লগ শুনছি, চাচা তখন তাঁর হাত বুলাচ্ছিলেন আমার পুরুষাঙ্গে। আমি তখন বুঝিনি। বাচ্চাদের আবার আর-একটা শিক্ষা দেওয়া হয় যে, বড়রা অনেক কিছুই পারে যা ছোটরা পারে না। আমি তখন কম্পিত হাতে মোটে এ-বি-সি-ডি লিখি। কাজে এটাকে স্বাভাবিক কাজ হিসেবে জাজ করলে আমার বোকামির প্রতীক হয়।
পরে যখন একদিন গল্পের ছলে মাকে এই কথাটা বলে ফেললাম, মা ঠাস করে আমার গালে থাপ্পড় মেরেছিলেন। তারপর শুরু করেছিলেন অকথ্য গালি। আমি বড়দের নিয়ে আজেবাজে কথা বলি, আমি কুলাঙ্গার ছেলে আরও কত কী। মা সেদিন আমাকে নামাজ পড়িয়েছিলেন। তখনও কুরআন পড়ার সময় হয়নি, তাই কোথার থেকে এক আমপারা জোগাড় করে সূরা ফাতিহা বিশ বার পড়িয়েছিলেন। এমন অবিচারের সান্ত্বনা এই যে, এসবের দু’মাস পর সেই চাচা গাঁজার অ্যালার্জিতে মারা যান। সত্যি বলতে, অত ছোট বয়সেই আমার একজনের মৃত্যুতে খুব আনন্দ হয়েছিল
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ঢাকায় এসে। কলেজ উঠলেও আমি তখনও সিগারেট ধরিনি। আমি ভর্তি হয়েছিলাম নটরডেম কলেজে। নটরডেমে এসে দেখলাম আমার অতি সামান্য প্রতিভাটিও বিশেষ কিছু মনে হচ্ছে। সুনামগঞ্জ থাকতে আমি সামান্য লেখালেখি করতাম, খেলাধুলায় আমি কখনও ভালো ছিলাম না। তাই আমার বিকেল কাটত বই পড়ে আর টুকটাক নামছন্দে কবিতা লিখে নটরডেমে এসে আমি প্রথম উন্মাদের কথা শুনলাম। কয়জন ক্লাসমেটের কল্যাণে উন্মাদে জয়েনও করলাম এবং সেখানকার সম্পাদক আহসান হাবীবের (শ্রদ্ধা করে সবাই ওঁকে বস ডাকে) সান্নিধ্য পেয়েছিলাম।
একদিন আমার রুমমেট সৌরভ ভাই বললেন, যাচ্ছি এক জায়গায়। যাবি নাকি?
আমি তখন উন্মাদের জন্য আইডিয়া ভাবছিলাম। সরল মনে ভাবলাম, কই?
—আটশো টাকা দিতে পারবি?
আমার জন্য আটশো টাকা অনেক টাকা। যদিও আমাদের পরিবারের অবস্থা সচ্ছল প্রায়। বাবা যতই দয়ালু কিংবা ধার্মিক হন না কেন, ব্যবসার সময়ে উনি প্রতারণার হিটলার। তবুও ওঁকে দিলাম আটশো টাকা। উনি আমাকে নিয়ে হোস্টেল থেকে বের হলেন রাত তিনটায়।

রাত তিনটায় আমরা পৌছলাম পল্লবীতে। থানার সামনের কোয়ার্টারে। দারোয়ান আগেই প্রস্তুত ছিলেন। আমাদের দেখেই উনি গেট খুলে দিয়ে বলে দিলেন ছাদে চলে যেতে।
ছাদে গিয়েই দেখলাম একটা গ্রুপ গোল হয়ে বসে আছে। সেদিনই প্রথম আমি দেখলাম অধরাকে। কিন্তু মেয়েটার অবস্থা স্বাভাবিক ছিল না। একহাতে ছিল সিগারেট আর অন্যহাতে চিপসের প্যাকেট। আমি নীচু গলায় সৌরভ ভাইকে বললাম, ভাই, মেয়েটার কী হয়েছে?
সৌরভ ভাই হেসে বললেন, আরে বুঝিস না? নেশা কাটাচ্ছে।
—কীসের নেশা?
—আরে ব্যাটা, গাঁজার নেশা। সেই কখন থেকে টানছে না?
আমি ভয়ার্ত গলায় বললাম, ভাই, আমাকে এসবে এনেছেন কেন? আমি হোস্টেলে ফিরে যেতে চাই।
সৌরভ ভাই আমার ঘাড় জড়িয়ে ধরে বললেন, আরে ধুর শালা, একটু বস।
সবাই তখন পান করে যাচ্ছে। কেউ আবার একদম পিওর খেতে পারে না, তাই তারা কোক মিশিয়ে খাচ্ছে। আমি অতিকষ্টে ওদের বিদেশি সিগারেটে কয়েকটা টান দিচ্ছি। কিন্তু আমার মনোযোগ ছিল অধরার দিকে। এতক্ষণ খেয়াল করিনি, কিন্তু এখন দেখলাম ও রূপবতী। আমার ওর দাঁতগুলি দেখতে বেশি ভালো লাগছিল এত কিছু খাওয়ার পরও ওর দাঁত যে পরিষ্কার ছিল সেটা অবাক ব্যাপার। কিন্তু আর-একটা জিনিস খারাপ লাগছিল সেটা হল যখনতখন গ্রুপের দুই-তিনটা ছেলে ওর বুকে হাত দিচ্ছিল এটা কেমন কথা! মাতাল হয়েছে ভালো, তাই বলে বুকে হাত দিতে হবে!
কিন্তু সত্যি কথা বলতে ভয় নেই, ওদের দেখাদেখি আমারও অধরার বুকে হাত দিতে ইচ্ছা করছিল ওর যে বুক, সে বুকের বিবরণ আমি পড়েছি পাওলো কোলিনহোর বইতে। এই বুকের স্তন স্পর্শ করা মানে স্বর্গের আপেল ভক্ষণ করা।
সে রাতে হোস্টেল ফেরার সময়ে আমি গুনগুন করছিলাম শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সেই কবিতা,
বার বার নষ্ট হয়ে যাই
প্রভু, তুমি আমাকে পবিত্র
করো, যাতে লোকে খাঁচাটাই
কেনে, প্রভু নষ্ট হয়ে যাই
বার বার নষ্ট হয়ে যাই
একবার আমাকে পবিত্র
করো প্রভু,  যদি বাঁচাটাই
মুখ্য, প্রভু, নষ্ট হয়ে যাই!
এরপর থেকে আমার আর ভালো থাকার কোনও ইচ্ছা থাকল না। আগে রাতে শোয়ার সময় অন্তত একবার আয়তুল কুরসি পড়তাম, এখন তাও পড়ি না। সিগারেট ধরেছি, তাও আবার যেন-তেন সিগারেট না। সেই সিগারেট গাঁজা ভরা থাকে। সুজয় নামে এক ছেলের সঙ্গে খাতির হয়েছিল ওই রাতে। সে এসব জোগাড় করে দেয় অতি সাশ্রয়ী রেটে। ওই রাত থেকে আমি খারাপ হতে শুরু করলেও একটা সুন্দর উপহার আমি পেয়েছিলাম। সেটা হল অধরা। অন্যদের থেকে কেন জানি অধরা আমার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল একদিন নেশারত অবস্থায় আমাকে ঠেলা দিয়ে বলেছিলো, এই,তুমি কবিতা লিখো?
আমি গাজায় টান দিয়ে বললাম, হ্যাঁ
—শোনাও, ইমপ্রেস করতে পারলে বিশেষ পুরস্কার।
আমি কী ভেবে বলে ফেললাম, কোনও খানকি-মাগি যখন ভালো হয়ে যাবার উপদেশ দেয়, তখন ইচ্ছা করে বেশ্যা হয়ে যাই।
সবাই হইহই করে উঠল অধরা তখন গালে গাল ছুঁয়ে বলল, খুব সুন্দর। দেখি ঠোঁটটা।
সেদিন প্রথম আমি একটি মেয়ের ঠোঁট, থুতুর স্বাদ পেলাম। যেন অমৃত। যেন খুবই সুস্বাদু। সেই চুমুর মাঝখানে অধরা বলেছিল, উফ, এভাবে জিহ্বা ব্যবহার করে তো ঠোঁট ভিজিয়ে দিচ্ছো। জিহ্বা বেশি নাড়াবে না। স্রেফ টোকা দিবে।
এরপর থেকে অধরাকে দেখলেই প্রচুর যৌনতা জাগে। সেই যৌনতা কন্ট্রোল করা খুব কঠিন। প্রায়ই আন্ডারওয়্যার চেঞ্জ করতে হয়। এই যৌনতা খুবই অদ্ভুত লাগে আমার কাছে। শুনেছি বহু অনর্থক সময়েও যৌনতা জাগে। যেমন রুশো যখন ওঁর খালার হাতে মার খেতেন, ওঁর খালার স্তন দুলে উঠত ওটা দেখে ওঁর যৌনতা জাগত সেজন্য উনি বারবার দুষ্টুমি করতেন যাতে খালার হাতে মার খেতে পারেন এবং সেই স্তন দোলার দৃশ্যটি উপভোগ করতে পারেন।
অধরা অনেককিছুই আমাকে শিখিয়েছে। যেমন গাঁজা টানার সময় নাক দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে দেয় না। কারণ এতে নাকের লোমের ক্ষতি হয়। ভাবতে অবাক লাগে, ওদিকে যে ফুসফুস পুড়ে ফসিল হয়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই।

আমি এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিলাম খুব দ্রুত। পড়ালেখা একদমই হয় না। কুইজে ফেইল করি প্রায়। কলেজেও কম যাই। আর সারাদিন থাকি উন্মাদ অফিসে।
একদিন অফিসে বসে আছি, তখনই বস বললেন, শুনো একটা মেয়ে আসবে। নতুন কার্টুনিস্ট। তুমি একটু যেয়ে ওকে নিয়ে আসো।
বসের হুকুম গোলাম মানতে বাধ্য। আমি রাস্তায় নেমে স্লিপনটেত গান কানে দিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটাকে দেখলাম। কলেজ ড্রেস পড়া। অতি সাধারণ। মেয়েটার সৌন্দর্য ছিল তার স্লিম ফিগার। এমন সুন্দর ফিগার অধরারও ছিল না।
ওকে অফিসে নিয়ে গেলাম। সেদিন আবার বসের জন্মদিন ছিল তাই তিনি সবাইকে বিরিয়ানি খাওয়ালেন। মেয়েটি চলে যাবার সময় আমাকে বলল, ভাইয়া, আমি মিরপুরের কিছু চিনি না। আমাকে বাসে উঠিয়ে দিবেন?
আমার আগেই বস বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ পারবে। হাসান যাও তো।
অগত্যা যেতেই হল রিকশায় উঠার সময় যথেষ্ট দূরত্ব রেখে বসলাম। রিকশায় অতি সাধারণ গল্পগুজব চলল বাসে উঠিয়ে দিতে সমস্যা হল না।
কিন্তু ঝামেলা হল রাতে। আমি ঘুমের মধ্যে বুঝতে পারি আমি স্বপ্ন দেখছি। আমি ইদানীং বেশিরভাগ সময়ই দেখি অ্যাডাল্ট স্বপ্ন। সে রাতেও আমি অ্যাডাল্ট স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। আমার সঙ্গে বিছানায় একটি মেয়ে শুয়ে আছে। মেয়েটি সম্পূর্ণ নগ্ন। আমি ভেবেছিলাম মেয়েটি অধরা। ওকে দেখাটাই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু না, আমি দেখলাম সেই মেয়েটিকে যে আজ উন্মাদ অফিসে এসেছিল মেয়েটি আমার পাশে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর হাসি দিল কী সুন্দর হাসি! আমি জানি এটা স্বপ্ন, তবুও আমি ওর গালে চুমু খেলাম। আমি মনেপ্রাণে চাচ্ছিলাম ঘুমটা যেন না ভাঙে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ঘুম খুব বাজে ভাবে ভেঙে গেল। আমি সেদিন নাস্তা না করেই মিরপুর চলে গেলাম।
অফিসে বস খুব ব্যস্ত। নতুন উন্মাদ ম্যাগাজিন আসবে। উনি ফিচার আঁকছিলেন। দুপুরের দিকে বললেন, চলো, ভাত খেয়ে আসি।
রাস্তায় নামার পরই আমি আর পারলাম না। আমি বসকে স্বপ্নের ব্যাপারটা বলে দিলাম। বস শুনে কিছুক্ষণ হাসলেন। হোটেলে নিঃশব্দে ভাত খেলেন। বিল মেটানোর পর হাঁটতে হাঁটতে বলতে লাগলেন, দুটো কারণে তোমার এমন হয়েছে। মেয়েটা হিজাব পড়া ছিল এমন হতে পারে তুমি মেয়েটার শরীরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছ অথবা অন্যটা হতে পারে তোমার অবচেতন মন ওর এমন একটা বিষয় খেয়াল করেছে যে তুমি সেটা খেয়াল করতে পারোনি।
বস তখন আমাকে আর-একটা গল্প শোনালেন। গল্পটা রাশিয়ার কেজিবিকে নিয়ে। কেজিবি যে কোনও অপরাধীকে জেরা করার সময় আগে হিপনোটাইজ করে। আমি জানতাম অনেক দেশে এটা অবৈধ। অবশ্য কে জানে কোন দেশ কী মানে। চীন আস্ত জ্যান্ত কুকুর যদি গরম তেলে ভরা কড়াইতে ভাজতে পারে কিংবা জ্যান্ত মাছ মাঝখানে স্লাইস করে সেটা মশলা মেখে খেতে পারে তাহলে রাশিয়া সামান্য হিপনোটাইজ করতে পারবে না কেন!

সেদিনই আমি মেয়েটিকে ফেসবুকে নক দেই। ওর নাম সারণি। আমাদের মধ্যে অনেক কথা হল আমি ওকে আমার কবিতা দেখালাম, ও আমাকে দেখাল ওর কার্টুন। শুধু এটাই না, ও একটা ছোট ব্যবসাও করে। বিভিন্ন ধরনের ইয়ারিংস, হিজাব পিন, ব্রেসলেটসহ আরও অনেক কিছু। এসব করেই ও ভালো টাকা কামিয়েছে আর মোবাইলও কিনেছে। কম না।
আমি ভেবেছিলাম কথা বললে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না বরং এটা বেড়ে গেল। আমি যখনই ঘুমাই, সেই স্বপ্নটা দেখি। শুধু শুধু এই স্বপ্নটা কেন দেখি বারবার? দুনিয়ায় আর কোনও স্বপ্ন নেই? ওদিকে উন্মাদে কাজ করার মহিমায় এক প্রকাশক আমার ছড়ার বই করতে চেয়েছিল কিন্তু সে ব্যাটাও তখন ঝুলানো শুরু করেছে।
আমার এর মাঝে আর অধরাকে ভালো লাগে না। অধরা যখন আমাকে চুমু খায়, আমি জিহ্বা আগাই না। পান করবার সময়েও টানা খেতে পারি না। সারাদিন খালি স্বপ্নের কথা ভাবি। সেজন্য আমি স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনাও শুরু করে দিলাম। নেট থেকে ফ্রয়েডীয় ড্রিম থিয়োরির পুরো দশ খণ্ড ডাউনলোড করে ফেললাম। বিচিত্র সব তথ্য সেখানে। যেমন বলা হয়েছে, একজন সবচেয়ে বেশি নিষিদ্ধ স্বপ্ন দেখে যখন সে শিশু থাকে। আমার স্বপ্নে পুরুষাঙ্গের প্রতীক বিভিন্নরূপে আসে। যেমন এমন কিছু জিনিস আসে যা দিয়ে দেহ জখম হতে পারে। যেমন, ছুরি,বর্শা। মাঝেমাঝে আসে আগ্নেয়াস্ত্র যেমন পিস্তল, রিভলভার। কিন্তু যাদের পুরুষাঙ্গ বৃহৎ তারা দেখে লম্বা জিনিস যেমন, সাপ,টিকটিকি। তবে সাপ বলে সবচেয়ে বিখ্যাত। পৃথিবীর বেশিরভাগ পুরুষ স্বপ্নে সাপ বেশি দেখে। অর্থাৎ আমি যে ছোটবেলায় সাপ দেখতাম এর কারণ শয়তান না, আমার...
মেয়েদের যৌনাঙ্গ রূপ সামান্য ইউনিক। তারা সেসব জিনিস বেশি দেখে যেখানে বহনের ক্ষমতা আছে। যেমন গুহা, বয়াম, শিশি।
তবে বেশিরভাগ স্বপ্নই তারা দেখে জরায়ু নিয়ে। সেজন্য তারা স্বপ্নে বেশি দেখে আলমারি।
এখানেই শেষ নয়। একটা গাছও বলে স্বপ্ন দেখে। গাছ স্বপ্ন দেখে ফুল নিয়ে। আবার আপেল যখন গাছে থাকে সে স্বপ্ন দেখে বীজকে নিয়ে। আবার ফুল কুমারী মেয়েদের যৌনাঙ্গের প্রতীক।
এসব স্বপ্ন দেখার প্রধান কারণ হল অব্যক্ত উপাদান আমার ক্ষেত্রে তা হল সারণি। কিছু স্বপ্নের ব্যাখ্যা অতি হাস্যকর। কিন্তু ফ্রয়েড দাবি করেছেন তার অ্যানালিসিস পুরোপুরি সত্য। যেমন তাঁর এক ছাত্র একবার তাঁকে বলল সে প্রায়ই স্বপ্নে দেখে সে সাইকেল চালাচ্ছে। এক কুকুর তখন এসে তার পা কামড়ে ধরে। ফ্রয়েড তাঁর ব্যাখ্যায় বলেছেন সে প্রেমে পড়েছে। যার প্রেমে পড়েছে সে পশুপ্রেমিক। অথচ ছেলে নিজেই জানে না সে প্রেমে পড়েছে।

স্বপ্নটা আমাকে দিনে দিনে কাবু করে ফেলতে লাগল আমি কি সারণির দেহের প্রতি আকৃষ্ট না অন্যকিছু? অত ভাবতে ইচ্ছা করে না। শুধু খালি ওর ছবি দেখতে ইচ্ছা করে। ও যখন কোনও ব্রেসলেট বা চুড়ি বানিয়ে নেটে দেয় খুব আগ্রহ নিয়ে দেখি। প্রায়ই ভাবি বলব চলো দেখা করি। কিন্তু খুব ভয় হয়। অধরা ছাড়া আর কোনও মেয়ের সঙ্গে আমার ভাব নেই। ও রাজি হবে?
একদিন আর পারলাম নাবলেই ফেললাম চলো দেখা করি। ও রাজি হয়ে গেল। ও প্রায়ই রামপুরা থেকে মতিঝিল আসে কোচিং করতে। ঠিক করলাম, যেহেতু ফেব্রুয়ারি চলে আসল মেলার স্টলগুলি একবার দেখে আসা যাক।
ওদিন ওর সঙ্গে রিকশায় বসতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। কারণ যখন ওর সঙ্গে আমার ছোঁয়া লাগে, মাথা ঘুরে যায়। প্রচণ্ড সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে। একটা ধরাতে গিয়ে ও করুণ কণ্ঠে বলল, না খেলে হয় না?
বলার সময় ওই চোখ দেখেই আর খেতে পারিনি। ও আপনমনে কথা বলে যাচ্ছিল, আর আমি শুনছিলাম।
রিকশায় বসেই আমি বলে ফেললাম, জানো, উন্মাদের একটা মেয়েকে না আমি স্বপ্ন দেখি।
সারণির চোখ সরু হয়ে গেল। গম্ভীর গলায় বলল, তাই নাকি? কে?
বলা মোটেও ঠিক হবে না। এই মেয়ে আমাকে চিনেই না ভালো মতো। এখন যদি বলি ওকে নিয়ে আমি অ্যাডাল্ট স্বপ্ন দেখি ও ভালোভাবে নিবে?
আমি তখন মিথ্যা বললাম, বস কাউকে বলতে নিষেধ করেছেন।
—তাই, বস এত ফ্রি?
—হুঁ
—কেমন মেয়েটা?
ওর চেয়ে ভিন্ন ধরনের মেয়ের বর্ণনা দিতে হবে। তাই ওর প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলাম, আমার চেয়ে বড়
—হ্যাঁ, আমার সমান।
—গায়ের রং?
সারণি শ্যামলা। তাই বললাম, খুব ফর্সা।
—নাম?
হুট করে কোনও সুন্দর নাম মাথায় এল না। একটা নাম মাথায় এল অরণি। কিন্তু এই নামটা ব্যবহার করে একটা উপন্যাস লিখছি।
আমার দেরি হচ্ছে দেখে ও বলল, থাক, বলতে হবে না। লজ্জা পাচ্ছেন।
বলে হেসে দিল আহা! জীবন কত সুন্দর।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পা দিয়েই কী মনে করে ফোন দিলাম প্রকাশককে। প্রকাশক সাফ জানিয়ে দিলেন আমার বই করা তাঁর সম্ভব না। উনি স্টল নিয়ে ব্যস্ত।
সারণি আমার মুখ দেখে বুঝেছিলো। ও বলল, আপনি বসকে ফোন দিন।
বসকে দিলাম ফোন। বস জোরালো কণ্ঠে বললেন, উনি এটা দেখবেন।
আমার বই নিয়ে এত আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ওর সামনে এভাবে অপমানিত হবার পর সেদিন প্রথম বইটা নিয়ে আপশোশ হতে লাগল চোখে পানি এসে যাচ্ছিল আমি চাচ্ছিলাম না ও আমার চোখের পানি দেখুক। তাই ওকে বললাম, চলো, তোমাকে বাসে উঠিয়ে দেই।
—এত তাড়াতাড়ি? আর-একটু বেড়াই?
—না চলো।
—আমি আজিজ মার্কেট থেকে একটা স্কেচবুক কিনব
—বেশ, চলো।
হাঁটার সময় কেমন এলোমেলোভাবে পা ফেলছিলাম। পরিবেশ হালকা করতে ও বলল, আপনার বন্ধু নেই কোনও?
—না।
—কেন?
—আমি মিশতে পারি না কারওর সাথে।
—ও আচ্ছা।
এরমধ্যেই আজিজ মার্কেট এসে গেলাম।
সরাসরি রামপুরার বাস না থাকায় ও ঠিক করল  মতিঝিল থেকে রামপুরার বাসে উঠবে। আমরা শাহবাগ থেকে মতিঝিলের বাসে উঠলাম। বাসে উঠেই বললাম, আমি আর বই বের করার চেষ্টা করব না।
—আপনি এত সহজেই হার মানবেন?
—হ্যাঁ, আমি ভিতু, দুর্বল তাই।
—আপনি প্রচুর নেগেটিভ চিন্তা করেন।
আমি প্রসঙ্গ ঘুরানোর জন্য বললাম, তোমার কেউ নেই? বয়ফ্রেন্ড টাইপ কিছু?
সেদিন প্রথম আমি ওর মলিন মুখ দেখলাম। ওর চাহনি কালো হয়ে গেল। মাথা নীচু করে মৃদু গলায় বলল, হ্যাঁ ছিল
আমি ভাবছি আর কিছু জিজ্ঞাসা করব কিনা তখন ও নিজেই বলল, কিন্তু ও আমার উপর অনেক অবিচার করেছে জানেন। ও নিজে স্বাধীনভাবে চলত কিন্তু আমাকে স্বাধীনতা দিতে চাইত না।
এরপর ও অনেক গল্প শোনাল এক কার্টুন ফেস্টে ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে প্রচণ্ড অপমান করেছিল এসব শুনে আমার নিজ লিঙ্গের প্রতি যথেষ্ট রাগ হচ্ছিল বাংলাদেশের পুরুষদের জিন গত দুশো বছরে একটুও পালটায়নি।
কথার মাঝেই ও হঠাৎ বলল, জানেন, আমার এক ক্লাসমেট আমাকে পছন্দ করে। ও আমাকে বলেছিল আগে রিলেশনে ছিলাম দেখে ও আমাকে আর জানায়নি। আবার এখনও আমাকে কোনও প্রেসার দেয় না। আমাকে সময় দিচ্ছে।
আমার মনে হল সারণি সেই ছেলেটির প্রতি দুর্বল। সেই প্রথম বুকটা ধকধক করে উঠল সেই ছেলেটা তাহলে সারণিকে পাবে? আমি পাব না?
মতিঝিল শাপলা চত্বরে নামার পর শুনলাম রামপুরার বাস পাঁচ মিনিট পরে আসবে। সারণি বাসস্ট্যান্ডে বানানো সিটিংয়ে গিয়ে বসে পাশে জায়গা দেখিয়ে বলল, বসুন
আমি বসলাম। অথচ আমার ইচ্ছা করছে ওর শরীরে লেগে বসতে। ইচ্ছা করছিল ওর শরীরের সব ঘাম শুষে নিই তখনই ওকে চমকে দেওয়ার জন্য বললাম, আমি মেয়েটাকে নিয়ে গল্প লিখব।
—কোন মেয়েটা?
—ওই যে যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি।
—ও আচ্ছা।
বাস আসার পর সারণি উঠে চলে গেল। আমি অনেকক্ষণ সেই বাস চলে যেতে দেখলাম। কী ভালো লাগছে বাসটাকে দেখতে। সারণির শরীরের রূপ যেন বাসটার গায়ে প্রভাব ফেলেছে। সেদিন আর সিগারেট খেলাম না।
রাতে কী মনে করে সারণিকে নক দিলাম। কিন্তু ও উত্তর দিচ্ছে উলটোপালটা কিছুক্ষণ পরেই জানাল ও কাঁদছে। ওর এক্স বয়ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়েছে। আমি তখন বললাম, তুমি জানতে চাও মেয়েটি কে?
—বস না নিষেধ করেছেন?
—তো? বস অনেককিছুই নিষেধ করেন।
—না থাক। আপনি বলেছিলেন গল্প লিখবেন মেয়েটিকে নিয়ে। গল্পই লিখুন।
—তুমি জানতে চাও না?
—না।
আমি জানি ওকে এ কথা বললে কী হবে।
ও আমাকে চরম অসভ্য ভাববে। কিন্তু তাও বলতে ইচ্ছা করে, সারণি, মেয়েটি আসলে তুমি। আমি আসলে তোমাকে চাই।
মদ, গাঁজা, সিগারেট খাওয়া আস্তে আস্তে খুব কমিয়ে দিলাম। অধরার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। সারাদিন খালি স্বপ্ন নিয়ে বই পড়ি। সারণি ওদিকে বারবার তাগাদা দেয় গল্পটা লেখার জন্য। আমি প্রায়ই বলি লিখব। কিন্তু লিখি না। এই গল্পটা হুট করে লেখা যাবে না। সময় নিয়ে লিখতে হবে। গল্পটায় ফ্রয়েডের থিয়োরি থাকতে হবে। আমি এখন প্রতি রাতে আয়াতুল কুরসি পড়ি। রাতে ঘুমানোর সময় রবীন্দ্রসংগীত শুনি। বিশেষ করে এই গানটা খুব মনে লাগে। স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তার কণ্ঠে,
ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে
বহে কিবা মৃদু বায়
তটিণী-র হিল্লোল তুলে
কল্লোলে চলিয়া যায়
পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে
কুউহু কুউহু কুউহু গায়
কি জানি কিসের লাগি
প্রাণ করে হায় হায়
তটিণী-র লাইনটায় যখন উনি টান দেন তখন শুধু সারণির কথা মনে পড়ে। বারবার মনে হয় সামনে আমার মধুর সময় আসছে। যে সময়ে সারণি আমার সঙ্গী হবে।
এই কয়দিন জীবন কী সেটাও বুঝতে খুব ইচ্ছা হল তাই আবাল টাইপের সব এক্সপেরিমেন্ট করি। যেমন চলন্ত বাস দেখলে দ্রুত পার হবার চেষ্টা করি। বাস তীব্রভাবে হর্ন দেয়। তাও থামি না। একদিন একটা বাস প্রায় গা ঘেঁষে চলে গেল। ট্রাফিক পুলিশ এটা দেখে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে লাগলেন। ধরা গলায় বললেন, বাবা! যাস নে বাবা!
আমি ওঁর ব্যবহারে চমকে উঠলাম। এমন করছেন কেন? কত মানুষ প্রতিদিন রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। উনি আমাকে সেদিন ছাড়লেন না। অন্য একজনকে ডিউটিতে বসিয়ে আমাকে ওঁর বাসায় নিয়ে গেলেন। মোটে একটা রুম আর বারান্দা। বাথরুমে নীচে। রুমের খাটের পাশে স্টোভে রান্না করেন। সেদিন প্রথম আমি করোলা ভাজি খেলাম। খাওয়ার সময়ে খেয়াল করলাম উনি খুব সুন্দর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। পরে উনি বললেন ওঁর কাহিনি ওঁর একটি সন্তান ছিল কিন্তু সন্তানটির মানসিক সমস্যা ছিল সন্তানটি মেয়ে হওয়ায় আরও ঝামেলা ছিল একদিন শখ করে মেয়েটিকে গ্রামে বেড়াতে নিয়ে গেলেন। কিন্তু পরের দিনই সকালে উঠে দেখেন ওঁর মেয়ে পাশে নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর খবর পাওয়া গেল জেলা হসপিটালে এক ছোট মেয়ের লাশ রাখা হয়েছে। গিয়ে দেখেন মেয়ের চেহারা চেনা যাচ্ছে না। সঙ্গেই ছিল পুলিশ। তারা বিবৃতি দিল যে রাতের দিকে এক ট্রাক মেয়েটির উপর দিয়ে চলে গেছে। কিন্তু ট্রাকচালকের কথা মেয়েটি নিজের থেকে ট্রাকের সামনে ঝাঁপ দিয়েছে। চালক অনেক চেষ্টা করেও মেয়েটিকে বাঁচাতে পারেনি।
মানুষের মায়া কত ধরনের হতে পারে। কোথায় ওঁর মেয়ে কোথায় আমি। সেদিন ওঠার সময়ে উনি আমার হাত ধরে বললেন, বাবা, আমার কাছে আবার আসবে তো?
আমি হাসিমুখে বলেছিলাম, জ্বী, আসব।
কিন্তু আমি কখনও আর সেই ট্রাফিক পুলিশটির কাছে যাইনি।

অনেকদিন প্রার্থনা করি না। কিন্তু পরের ভোরের দিকে, প্রায় পাঁচটা বাজে, তখন হোস্টেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম, আল্লাহ, আমি ভালো হয়ে যাব। আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি আমাকে কিছু যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ দিন। যাতে আমি সারণিকে পেতে পারি।
তখনই বিল্ডিংয়ের পাশের মসজিদ থেকে ফজরের আজানের ধ্বনি বেজে উঠল আহ! কী মধুর। চোখ দিয়ে উন্মুক্ত কলের মতো পানি পড়তে লাগল
উন্মাদ একটা সায়েন্টিফিক আর্ট একজিবিশন আয়োজন করেছে। সারণির আঁকা কার্টুনও পুরস্কার পেয়েছে। পুরস্কার প্রদানের পর আমি যখন সারণির কাছে যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ করে আমার চেয়ে জুনিয়র একটা ছেলে পিছন থেকে এসে ওকে জড়িয়ে ধরল বন্ধুরা এভাবে কখনও জড়িয়ে ধরে না। আমার চোখ দেখে সারণি বলল, হাসান ভাই, ও হল সুমন। আমার বয়ফ্রেন্ড।
কথাটা বুকে খুব লাগল আমি তাহলে দেরি করে ফেললাম? সেই ছেলেটি জয়ী হল?
সারণি বলল, আপনি গল্পটা লিখেছেন?
—কোন গল্প?
—ওই যে আপনার স্বপ্ন নিয়ে যে লিখবেন? যেখানে ফ্রয়েডের ড্রিম থিয়োরি থাকবে?
—হ্যাঁ লিখছি। শীঘ্রই শেষ হবে।
—প্রায় এক বছর হয়ে গেল এখনও শেষ হয়নি?
—গল্পটা বিশেষ তো, তাই দেরি হচ্ছে।
—বেশ, লেখা হলে পড়তে দিবেন কিন্তু। আসি।
সুমন বিদায়ের সময় হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ভাইয়া, যাই।
হ্যান্ডশেক করার সময় মনে হল ওর হাতের সব আঙুল কামড়ে দেই।
বস অনেক বলার পরেও আর একজিবিশনে থাকলাম না। রাস্তায় নেমেই অধরাকে ফোন দিয়ে বললাম, কই তুই?
—বাসায়, কেন?
—তোর বুকে মুখ ঘষতে হবে। আজ অনেক কষ্ট পেয়েছি।
—আজ রাতে সবাই আসবে। চলে আয়।
—আচ্ছা দেখিস, তোর ঠোঁটে আজ যেন আমার আগে কেউ চুমু না খায়।
—বেশ আয়, আমি অপেক্ষায় থাকলাম।
ফোন রাখার পর খুব আনন্দ হল একজন অন্তত আমার অপেক্ষায় আছে।
হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করলাম আমি গন্তব্যস্থান অনুযায়ী হাঁটছি না। আমি হাঁটছি অন্য পথে। হাঁটার সময় অনেককিছু চোখে পড়ছে। সব ভালোও লাগছে। রাস্তার ধারে এক টোকাই বসে পেশাব করছে সেই দৃশ্যও খুব আগ্রহ নিয়ে দেখলাম। এই বসার স্টাইলের সঙ্গে জয়নুল আবেদিনের কোনও ছবির ক্যারেক্টারের মিল আছে। ছবির নামটা মনে এল না।
রাস্তার কিছু কিছু রিকশা হুট করে থেমে বলে, মামা, যাইবেন?
প্রথম দুইবার হাসলাম। পরেরবার মনে হল একটু জট পাকাই। অন্য এক রিকশাওয়ালা জিজ্ঞাসা করতেই আমি বললাম, যাব, একদম সোজা।
—সোজা কই?
—একদম সোজা।
—সোজা কই, মামা? ঠিকমতো কন।
—সোজা যেয়ে একদম আকাশ ভেদ করে পৃথিবীর বাইরে চলে যাবেন। পারবেন?
আশ্চর্য, রিকশাওয়ালা অবাক না হয়ে হেসে বলল, ভাই, নেশা করসেননি?
অনেকক্ষণ হাঁটার পর এরপর বুঝলাম আমি কই এসেছি। এই জায়গাটায় ওই ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল আজ ওঁকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। দূর থেকে দেখলাম এক বাস আসছে। সেই বাস অধরাদের বাসার দিক যাবে। বাস তীব্রভাবে হর্ন দিচ্ছে। আমি সরলাম না। আসুক বাস। যত জোরেই ইচ্ছা আসুক। দেখা যাক, ট্রাফিক পুলিশটি এবার আমাকে রক্ষা করতে পারেন কিনা।

1 comment:

  1. ন্যারেশন খুব প্রথামাফিক।

    ReplyDelete