খিদে
অর্ঘ্য
দত্ত
১
ভাদ্র মাস আসতে
ঢের দেরি। কালীর শরীর এখনও জাগেনি। কিন্তু ওর পেট
জেগে থাকে সারাক্ষণ। গ্রিল কারখানা ঘেঁষা ভিজে মাটি আর ঝোপঝাড়ের মধ্যে একটা রং
চটা ফ্লেক্স-ব্যানারের ওপর শরীর বিছিয়ে শুয়ে থাকে ও। শুয়ে থাকে আর
দেখে। দেখে আর ভাবে। ভাবে, ও কি মানুষের মতো হয়ে যাচ্ছে? কারণ, কালী ওর অন্য ভাইবোনদের মতো
হয়নি। ও চিন্তা করতে পারে। ওর স্মৃতি আছে। জন্ম থেকে। অনেকদিনের। ও চট
করে ভুলে যায় না। ওর পছন্দ-অপছন্দও আছে। ছিনিয়ে খাওয়া ও পছন্দ করে না।
কারখানার সব
গ্রিলমিস্ত্রিরা দুপুরের খাওয়া সেরে পাঁচিল ডিঙিয়ে এদিকে উচ্ছিষ্ট ফেলত। ওকে খেতে
ডাকত, তবেই প্রতিদিন ওর খাওয়া হত। কেউ কেউ ওর মাথায় পিঠে
হাত বুলিয়ে দিত। আর সারারাত কালী কারখানার বন্ধ দরজা আগলে
শুয়ে থাকত। আজ বহুদিন, প্রায় আড়াই-তিন মাস, কারখানাটা বন্ধ। আগে কখনো-সখনো কেউ শখ করে বিস্কুট কিনে ফুটপাথে ছড়িয়ে দিত।
যদিও কাড়াকাড়ি-মারামারি করা ও পছন্দ করত না, তবু তারই দু’-চারটে পেটে যেত। এখন এই রাস্তা দিয়ে আর বিশেষ কেউ যাতায়াত করে না।
না মানুষ, না গাড়ি-ঘোড়া। সমস্ত রাস্তা এখন কুকুরদেরই দখলে। সারাদিন ধরে
চলে ওদের এলাকা দখলের লড়াই। সেই লড়াইয়ে শামিল হয় ওর অন্য ভাই-বোনগুলোও। আর কালী অবাক হয়ে লক্ষ করে এই অসময়েও যেন ওদের কারও কারও শরীর জেগে
উঠছে। কালীকে দেখলেই ওর নিজের হাড় জিরজিরে ভাইটা পিঠের ওপর সামনের দুটো পা তুলে
দিয়ে নিজের দিকে টেনে নিতে চায়। কালী ঝটকা দিয়ে ফেলে দেয় ওকে। পায়ের ফাঁকে লেজ
গুঁজে পালিয়ে আসে। কুড়ি ফুট চওড়া রাস্তাটা এখন দিনরাত অলস শুয়ে থাকে। কালীও তাই।
নিস্তেজ লাগে। শুধু ওর পেটের
মধ্যে সারাক্ষণ দাউদাউ জ্বলতে থাকে খিদে।
কালী শুয়ে শুয়ে চুপ করে তাকিয়ে থাকে
রাস্তার উল্টোদিকে। গম ভাঙানোর বন্ধ দোকানটার সামনে ফুটপাথে দল বেঁধে নেমে এসেছে
পায়রা। খুঁটে খুঁটে ছড়িয়ে থাকা গম খাচ্ছে। দোকানের সামনে মাটির শরা থেকে খাচ্ছে
জল। বন্ধ দোকানের ভেতরেই থাকে দোকানদার। সে এখন পেছনের দরজা ব্যবহার করে। অভ্যাস মতো মুখে কাপড় বেঁধে এসে এখনও সকালে ছড়িয়ে দেয় ক’ মুঠো গম। এতে নাকি পুণ্য হয়। এসব দেখে ওর আরও
খিদে পায়। ইচ্ছে করে একটা পায়রা
মেরে সাবড়ে দেয়। যেমন অন্য কুকুরগুলো খিদের জ্বালায় করে। কালী শুয়ে শুয়ে একপাটি কাদামাখা সাদা হাওয়াই চটি চেবাতে থাকে অথবা নিজের গা
থেকে কামড়ে তোলে ডেঁয়ো পোকা। আর ভাবে, ও কি দিনদিন
মানুষদের মতো হয়ে যাচ্ছে! কিন্তু মানুষগুলোই তো কেমন
পালটে গেছে। এখন সবার মুখ ঢাকা, সহজে আর চেনাই যায় না তাদের। আগে এই রাস্তার ধারে দোকানগুলোর সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে তারা কথাবার্তা বলত, কত মানুষ সারাদিন কত কাজে হেঁটে যেত এই
পথ দিয়ে। আজকাল এই পথ সারাদিন শুনশান পড়ে থাকে।
কালী জানে দুপুর গড়িয়ে গিয়ে কারখানার ছায়া
যখন রাস্তা থেকে সব রোদ মুছে দেবে, দূর থেকে আজানের ডাক ভেসে আসবে, সামনের বাড়িটার দোতলার বারান্দায় একটা সাদা গোল মুখ উঁকি দেবে। তার
বিস্ফারিত চোখ। ভীত, উৎকর্ণ। মেয়েটা এসে বারান্দার রেলিং-এ মুখ ঠেকিয়ে
ওকে খুঁজবে। সেসময় সাহস করে কালী রোজ বেরিয়ে আসে ঝোপের আড়াল
থেকে। মুখ তুলে তাকায় মেয়েটির দিকে। মেয়েটিও তাকাবে ওর দিকে। চোখে চোখে কথা হবে
ওদের। মেয়েটা বলবে, খেয়েছিস? কালী মুখ তুলে
মাথা সামান্য নাড়িয়ে বলবে, না জোটেনি। মেয়েটির একটি হাত
তখন বেরিয়ে আসবে গ্রিল থেকে, ছুঁড়ে দেবে খাবার, কখনও দুটো শুকনো রুটি, কখনও বা অন্য কিছু। কোনো
কোনোদিন গমভাঙানির দোকানের গা ঘেঁষে যে বন্ধ দরজা, যেটা খুললেই একটা
সরু সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলার ঘর বারান্দায়, সেটি একটু ফাঁক
হবে, আর দরজার ধারে ওই সাদা হাতটুকু বেরিয়ে এসে ডালমাখা
ভাত ঢেলে দিয়ে ডাকবে, কালী। কালী।
কালী দৌড়ে যাবে
সেদিকে। ওর লোম খসা লেজটা তখন আপনিই এদিক-ওদিক দুলতে থাকবে আনন্দে। এই মেয়েটাই তো
একসময় ওর নাম দিয়েছিল। কালী। ওই দরজার গোড়ার সিঁড়িতে বসেই ওকে কোলে করে কত আদর
করেছে। কালী তখন ছোট ছিল। স্টিলের বাটিতে করে মেয়েটা ওকে দুধ এনে দিত। কালী ভোলেনি। মানুষদের মতোই ওর স্মৃতিশক্তি।
একটা আওয়াজ শুনে মুখের
থেকে চেবানো চটি ফেলে কালী কানখাড়া করে সামনে তাকায়। নজরে পড়ে সামনের গমভাঙানোর দোকানটার গা ঘেঁষা বন্ধ দরজাটায় দাঁড়িয়ে আছে
সেই ছেলেটা। কখনও দরজার পাশের কলিংবেল টিপছে, কখনও বা অধৈর্য হয়ে হাত দিয়ে বাড়ি মারছে বন্ধ কাঠের পাল্লায়। মুখের অর্ধেকটা রুমাল পেঁচিয়ে ঢেকে রাখা থাকলেও, কালী ওকে চিনতে
পারে। কালী ওকে চেনে। আগে অনেকবার এই বাড়িতে আসতে দেখেছে। কিন্তু এখন বেশ ক’দিন
হল রোজ একবার করে এসে দরজা ধাক্কায়, বেল টেপে। কিন্তু দরজা আর খোলে না। ছেলেটার বাঁ হাতে একটা কালো প্লাস্টিকের থলি। কালী দেখে চার-পাঁচটা কুকুর এসে ঘিরে ধরেছে ছেলেটাকে। মুখ উঁচু করে
থলিটার গায়ে নাক ঘষছে। খানিকক্ষণ পরে ছেলেটা বন্ধ দরজা
থেকেই ফিরে যাওয়ার সময় একটা কুকুরের পেছনে ক্যাঁত করে লাথি
কষায়। তারপর হাতের থলেটা টান মেরে ফেলে দেয় দূরে
ফুটপাথের ধারে। পথের ধারে ছড়িয়ে পড়ে কাঁচা চিকেনের টুকরো। কালী তবুও ওঠে না। সামনের দু’পায়ের ওপর মুখ রেখে
দেখতে থাকে কীভাবে কাড়াকাড়ি করে কাঁচা মাংস খাচ্ছে কুকুরগুলো। কালী কাঁচা মাংস খায় না। ও শুধু মানুষদের মতো রান্না করা
মাংস খায়। ওই কুকুরদের মধ্যেই কালী নিজের
দুটো ভাইকেও দেখতে পায়। আর ওই মাংস নিয়ে মারামারির ভিড় থেকে একটু দূরে
মাঝরাস্তায় একটা মদ্দা এই সুযোগে কব্জা করে ফেলেছে একটা নিমরাজি কুকুরিকে। কালী ওদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে সামনের বাড়িটার
দোতলার বারান্দায় তাকায়। বারান্দার শার্সির ফাঁক দিয়ে দেখতে
পায় একজোড়া উদগ্রীব চোখ! সাদা কপাল। বিস্ফারিত দৃষ্টি আটকে আছে মাঝরাস্তার ওপরে ছ’ পায়ে ভর দেওয়া একজোড়া সারমেয়
শরীরের প্রবল আন্দোলনে।
২
ওই দরজার পেছনের
সরু সিঁড়িটা সোজা উঠে গেছে দোতলার যে ঘরটায়, তার সব জানলা
বন্ধ। ঘরের সঙ্গে লাগোয়া রাস্তার দিকের ছোট ঢাকা বারান্দাটায় ঘষা কাঁচের
স্লাইডিং টেনে রাখা। এই ঝিমধরা দুপুরেও ঘরের মধ্যে যেন রাতের অন্ধকার। আর সেই
অন্ধকারে নীচু খাটের ওপরে বসে আছে একটা সাদা পাখি। ধবধবে সাদা মুখে গোল চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। সে একবার পাখনা ঝটপট করতে করতে
বারান্দায় উড়ে যায়। যেখান থেকে নীচের দরজাটা দেখা যায়
সেখানকার স্লাইডিং সামান্য ফাঁক করে কে কলিংবেল টিপছে দেখেই আবার উড়ে আসে ঘরের মধ্যে। একবার সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায় নীচে, আবার থমকে ফিরে আসে ওপরে। তারপর খাটের পাশের নীচু টেবিলের ওপর থেকে সাইলেন্ট
করে রাখা মোবাইলটা অন করে দেখে তিনটে মিসড্ কল। সেই নম্বরে ফোন করে চেঁচিয়ে ওঠে, আমি তোকে আসতে বারণ করেছি
না। দরজা ধাক্কা দিচ্ছিস কেন? আমি খুলব না। না, আমার মাংস চাই না। আমি না খেয়ে মরব
তবু দরজা খুলব না। হ্যাঁ হ্যাঁ, যা পারিস কর আমি কিছুতেই খুলব
না।
একটু পরে দরজায়
ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজ বন্ধ হলে সন্তর্পণে বারান্দায় এসে শার্সিটা একটু ফাঁক করে
ছেলেটা চলে গেছে কিনা দেখতে গিয়ে চোখ আটকে যায় মাঝরাস্তায়। ওর দু’টি দীর্ঘ পাখনা তিরতির করে কাঁপতে থাকে এক অনাস্বাদিতপূর্ব উত্তেজনায়।
নিজেকে মনে হয় অচেনা কোনো সাগরকে ছুঁয়ে যেন এক উড়ালের
মধ্যে। প্রবল তাপে পুড়তে থাকে ওর ঊর্ধ্বাঙ্গ। আর নিম্নাঙ্গ
ভিজতে থাকে সাগরের ঢেউয়ে!
পাখিটার নাম
শিরিন। ওর দিদা বলত শিরিন মানে সুন্দর। ও কি সত্যিই
সুন্দর! সুন্দর কোনো পাখি? পেঁচা? অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেকটা পাখি? নাকি অন্য কিছু!
আমার পা দুটো এমন
কেন, দিদা? নিজের খর্ব, লিকলিকে শুকিয়ে যাওয়া পা দুটো দেখিয়ে দিদার কাছে জানতে চাইত।
ঠাকুর যে তোর নীচের
দিকটা অন্যরকম বানাতে চেয়েছিলেন। সবার মতো করে নয়, একদম অন্যরকম কিছু। দিদা ঝুঁকে ওর অপুষ্ট পা দুটোয় চুমু খেত।
কেন?
কারণ, ঠাকুর যে তোকে খুব ভালোবাসতেন। অন্যের চেয়ে বেশি।
তাহলে বানালেন না
কেন?
বানালেন তো। তোর ওপরের দিকটা দেখলে বুঝতে পারিস না? এমন রং, এমন সুন্দর বড়-বড় চোখ, এমন মাথা ভর্তি
ঘন চুল, এত সুন্দর লাল-লাল ঠোঁট! তোর মতো সুন্দর ক’জন আছে?
তাহলে পা দুটো
এমন কেন তৈরি করলেন? ছ’-সাত বছরের শিরিন কিছুতেই এটা
বুঝতে পারত না। আর তাই বারবার দিদার কাছে এই প্রশ্ন করত। কেন? কেন? আর দিদা প্রতিবার হেসে বলত, ঠাকুর কী করবেন? তিনি যখন তোর নীচের
দিকটা বানাচ্ছিলেন, তখন কেউ এসে ওর কাজে বিঘ্ন ঘটিয়েছিল, ঠাকুরের মনোযোগ নষ্ট করে দিয়েছিল। এই তুই যেমন এখন আমাকে মন দিয়ে কাজ করতে দিচ্ছিস না। একনাগাড়ে প্রশ্ন করে
যাচ্ছিস!
দিদা শিরিনের গাল
টিপে দিয়ে বলেছিল।
আসলে ওর দিদা সেই
ছোট্টবেলায় ওর মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে যে ওকে নিয়ে ঈশ্বরের কোনো পরিকল্পনা ছিল।
ঈশ্বর যেমন মৎস্যকন্যা বানান। অর্ধেক মানবী আর অর্ধেক মাছ। তেমনি কিছু। কিন্তু ওপরের অর্ধেকটা
নিখুঁত ভাবে বানানোর পরে যখন নীচের দিকটা বানাতে বসেন তখনই নাকি কেউ ঈশ্বরের
মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়। তাই আর জানা যায়নি ওকে নিয়ে ঈশ্বরের ঠিক কী
পরিকল্পনা ছিল। স্কুলশিক্ষিকা ওর দিদা ওকে নানান দেশের রূপকথা-লোককথা গল্প করে শোনাত। স্কুল থেকে ফিরে
দিদা যখন সন্ধ্যায় ঘরের কাজকর্ম করত, শিরিন নিজের দীর্ঘ বাহুদুটো পাখনার মতো দুদিকে মেলে দিয়ে দিদার পেছন পেছন ঘুরত। আর বকবক করত। দেখে মনে হত ঠিক যেন একটা বক বা সারস মাটি ছুঁয়ে
ছুঁয়ে উড়ে যাচ্ছে।
ও দিদা, মৎস্যকন্যা কী?
একটা মেয়ে যার
শরীরের নীচের দিকটা মাছের মতো। ইংরাজিতে বলে মারমেইড। দিদা
হয়তো ডালে সম্বার দিতে দিতে বলত।
সত্যি সত্যিই
ছিল?
ছিল তো। ফিলিপাইন লোককথায় তো আছে সিরেনা বলে এক মাছ-মেয়ের কথা। এমনকি
রাশিয়ান রূপকথায়ও আছে। এক অর্ধেক পাখি-অর্ধেক মেয়ের কথা।
তাই? তার নাম কী ছিল?
তার নাম নাকি ছিল
সিরেন।
এইসব গল্প শুনে
একদিন ওর মামার মেজো ছেলেটা, সেও তখন ছোট, ওর দিদাকে বলেছিল, ঠাম্মা, ঠাকুর বুঝি শুধু এরকম মেয়েই বানিয়েছে? ছেলে বানায়নি?
ঠাম্মা মুচকি
হেসে বলেছিল, হ্যাঁ, দাদুভাই, তাও বানিয়েছেন। আমাদের নরসিংহের গল্প তোমাদের বলেছি না? তাছাড়া গ্রিক লোককথাতেও আছে। অর্ধেক ঘোড়া ও অর্ধেক মানুষ, সিলেনোস।
শিরিন বিশ্বাস
করত দিদার সব কথা। দিদার অবর্তমানে এখন ও বুঝতে পারে দিদা কীভাবে ঘিরে
রেখেছিল ওর চারদিক। বাইরের জগৎ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে। আসলে দিদা ভয় পেত।
শিরিনকে লুকিয়ে রাখত সবার কাছ থেকে, আর শিরিনের কাছেও
লুকিয়ে রেখেছিল ওর পরিপার্শ্ব, ওর অতীত। পরিবর্তে দিদা ওকে
চেনাত ওই দূরের জগৎ। ওইসব বিদেশি গল্প, রূপকথা, লোকগাথা, নামকরা সব বইয়ের কাহিনি! দিদা নিজে কী করে
কবে যে এতকিছু পড়াশোনা করেছিল! এখনও মাঝেমাঝে পোলিও আক্রান্ত নিজের সরু হয়ে যাওয়া পা দুটোয় হাত বোলাতে বোলাতে ও এই ভেবে আপশোশ করে যে ঈশ্বর ওর নীচের অংশটুকু ঠিক কী বানাতে চেয়েছিল এ
জীবনে আর তা জানা হল না! হয়তো আর কোনোদিন জানাও হবে না!
রাস্তার
উল্টোদিকে গ্রিলের কারখানাটার অ্যাসবেসটাসের চাল থেকে রোদের
সোনালি আভা মুছে গেলে শিরিন এসে রোজ ওর দোতলার বারান্দায় বসে। দোতলা বাড়ির
একতলার ভাড়াটের গম ভাঙানোর দোকান। সারাদিন গমগম করে আওয়াজ হত আগে।
সামনের গ্রিলের কারখানা থেকে আসত লোহা পেটানোর, ওয়েল্ডিংয়ের আওয়াজ। সারাটা দিন শিরিন কাটিয়ে দিত দরজা-জানলা বন্ধ করে।
একা। অবশ্য কোন কালেই বা ও ভিড়ের মধ্যে থেকেছে! ওর ভালোও লাগত
না। দাদু-দিদা থাকত নদিয়া জেলার কামারডাঙা গ্রামে। ওর মা নাকি এক কাবুলিওয়ালাকে ভালোবেসে তার
সঙ্গে চলে গিয়েছিল। বছর ঘুরতে না ঘুরতে যখন
প্রাণ হাতে নিয়ে ফিরে এসেছিল, তখন শিরিন পেটে। ওর জন্ম দিতে গিয়েই মা মরে। বাঁচানোর চেষ্টাও বোধহয় বিশেষ
করেনি কেউ। পরের বছর মারা যায় দাদুও। বড় মামা তখন সোনার কারিগর হিসাবে মুম্বইয়ের
এই শহরতলিতে। দিদাও কামারডাঙার ঘরবাড়ি বেচে এসে মামার বাড়ির কাছাকাছি এই দোতলা ছোট্ট চালিটা কিনেছিল।
শিরিনকে নিয়ে আলাদা থাকত। একতলায় গম ভাঙানির দোকানের ভাড়া দিয়ে আর
জমানো টাকার সুদে চলে যেত দুটো পেট। দিদা বেশ কিছুদিন
একটা স্কুলের নীচু ক্লাসে পড়াত। গান শেখাত।
শিরিনকেও পড়াত। দিদার সাহায্যেই প্রাইভেটে
পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাশ করেছিল শিরিন। শিরিনের নামেই দিদা লিখে দিয়ে গেছে এই
বাড়ি। আর দিয়ে গেছে বই। অনেক বই। আর বই পড়ার নেশা।
যতদিন দিদা বেঁচে
ছিল, ঘরে টেলিভিশন চলেছে, অবরে-সবরে লোকজনও
এসেছে, দিদা বারব্রত পালন করেছে। কিন্তু মাস ছয়েক আগে দিদা
মারা যাওয়ার পর ও একেবারেই একা হয়ে পড়েছে। টিভি খুললেই এখন সারা পৃথিবী জুড়ে এই
নতুন ভাইরাসের সন্ত্রাস। মহারাষ্ট্রে সেই মহামারি ছড়িয়ে
পড়ার খবর দেখে ওর আতঙ্ক তৈরি হয়। তাই আর টিভিও খোলে না। আগে তাও মাঝেমাঝে
মামি বা মামাতো ভাইবোনরা বা দিদার পুরোনো দু’-চারজন ছাত্রী দেখা করতে আসত এখন এই লকডাউনের গত আড়াই-তিন মাস হল তারাও কেউ আর আসে না। এই একজন ছাড়া।
অতুল। ওর মামার মেজো ছেলে। শুধু ওই এসেছে। আসত। কিন্তু যেদিন থেকে ও বুঝতে পারে এই দীর্ঘ লকডাউনের মধ্যে, শার্সিটানা আলোছায়া মাখা নির্জন এই ঘরটা শুধু অতুলকেই
পালটে দিচ্ছে না, পালটে দিচ্ছে শিরিনকেও, সেদিন থেকে অতুল এলেও ও আর দরজা খোলেনি। ও ভয় পেতে শুরু করে। যত না অতুলকে, তার চেয়েও বেশি নিজেকে। নিজের তেইশ বছরের জাগ্রত শরীরটাকে।
৩
হ্যাঁ, শিরিনের শরীর জাগছে। যতদিন দিদা বেঁচে
ছিল ওকে বাচ্চার মতো আগলে রাখত। ওর সঙ্গে এমন
আচরণ করত যেন ও একটি অলৌকিক শিশু। যেন কোনো রূপকথার
চরিত্র। কিন্তু গত ক’মাসে একধাক্কায় অনেক বড় হয়ে গেছে শিরিন। এখন নিজের কাজকর্ম, রান্নাবাড়া সবই
করে। করতে হয়। তবে বাইরে ওকে যেতে হয় না। কোনো দরকারে
অতুলকে ফোন করলেই ও করে দেয়। দিদা যখন বেঁচে ছিল তখন থেকেই অতুল নিয়মিত আসত, বাইরের কাজকর্মও সামলাত।
এই তোর সারাদিন বই পড়তে ভালো লাগে? আর কিছু ইচ্ছে করে না?
কেন? আর কী ইচ্ছে করবে? তুই কি আমাকে নতুন দেখছিস?
তোর খিদে পায় না?
পায় বলেই তো
ইচ্ছে না করলেও দু’বেলা রান্না করি। তোর খিদে পেয়েছে? কিছু খাবি?
আমি ওই খিদের কথা
বলিনি। তুই বুঝতে পারছিস না কোন খিদের
কথা বলছি?
না। এখন বাড়ি যা। অনেক বেলা হয়েছে। মামি নিশ্চয়ই এখনও না খেয়ে বসে আছে।
কিছুদিন ধরেই শিরিন
দেখছিল অতুলের চোখ কেমন পালটে যাচ্ছে। শিরিন যখন লাফিয়ে
লাফিয়ে ঘরের কাজ সারত বা ঘর-বারান্দা করত
অতুলের চোখ আটকে থাকত ওর মুখের ওপর। ওর বুকের ওপর। শিরিনের গা শিরশির করে উঠত ওই দৃষ্টির সামনে।
তারপর একদিন
দুপুরে কিছু দরকারি জিনিসপত্র কিনে আনার পর শিরিন যখন ওইগুলো ঘরের
মেঝে থেকে উঠিয়ে এক এক করে রান্নাঘরে রেখে আসছিল, অতুল অতর্কিতে ওকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে বসিয়ে দেয় খাটে। সরাসরি ওর দুই
বর্তুল বুকের ওপর নিজের দু’ হাত রেখে গাঢ় স্বরে বলে উঠেছিল, জানিস, তুই না আসলে একটা পরি! পরি না হলে কেউ
এত সুন্দর হয়! তোকে আদর না করে থাকা যায় না রে। অতুল নিজের মুখ চেপে ধরেছিল ওর দুই বুকের মাঝে। পাগলের মতো চুমু খাচ্ছিল
শিরিনের ঠোঁটে, কানে, গলায়, ঘাড়ে। শুষে নিচ্ছিল
ওর ঠোঁট আর জিভ। বিড়বিড় করে বলছিল, তুই আমার সেই মৎস্যকন্যা। মৎস্যকন্যা। অতুলের আঙুল ততক্ষণে স্পর্শ করেছে ওর স্তনবৃন্ত। শিরিনের দুই হাত টেনে নিজের দু’ পায়ের ফাঁকে চেপে ধরে বলছিল, দ্যাখ, দ্যাখ আমিও তোর মতো। আমারও অর্ধেকটা মানুষ আর নীচের অর্ধেকটা ঘোড়ার মতো। মনে নেই, ঠাম্মা গল্প করেছিল। আমি সেই সিলেনোস। শিরিনের হাতের তালু পুড়ে যাচ্ছিল। শিরিন টের পাচ্ছিল ওর শরীরের অচেনা পেশি শিথিল হয়ে পড়ছে, ভিজে উঠছে এতদিনের অজানা সব গ্রন্থি। রোমাঞ্চিত ওর
স্তনবৃন্ত স্ফীত ও দৃঢ় হয়ে উঠছে অতুলের আঙুলের ফাঁকে। সংবিৎ ফিরে পায় শিরিন।
ধাক্কা মেরে অতুলকে সরিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিল, বের হ! বেরিয়ে যা এখনই। যা, যা বলছি।
অতুল কোনো কথা না
বলে মাথা নীচু করে নেমে এসেছিল সিঁড়ি বেয়ে। সেও আজ প্রায় বিশ-বাইশ দিন। প্রথম তিন-চারদিন অতুল আর এমুখো হয়নি। ফোনও করেনি। কিন্তু তারপর থেকেই শুরু হয়েছিল ফোনে অনুনয়। সেই এক কথা, তুই আমার মৎস্যকন্যা। আমাকে দূরে সরিয়ে রাখিস
না।
কখনও বা সরাসরি হাজির হয়ে যাচ্ছিল দরজার গোড়ায়।
৪
শিরিনেরও দিনরাত
পালটে গেছে সেদিনের পর থেকে। ওর নিজের শরীরের ভেতরে যে এত আনন্দের মুকুল লুকিয়ে
আছে ও নিজেও এতদিন
টের পায়নি। এখন বিকেলের মরা রোদে ও রোজ বারান্দায় বসে থাকে। একা। সামনের ফাঁকা
রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখে কীভাবে তার দুই ধার রঙিন হয়ে উঠছে রাধাচূড়া ও
কৃষ্ণচূড়ায়। কীভাবে দরজার পাশের অশ্বত্থ গাছটায় খড়-কুটো জড়ো করে
বাসা বেঁধেছে কাক। উল্টোদিকে ঝোপের মধ্যেই ফুটে আছে তিন-চারটে লাল
টকটকে কলাফুল। আজই প্রথম ওর চোখে পড়ে। যেন ওর
জন্যই ফুটে আছে। ফুলগুলো দেখে কেমন একটা ব্যথার অনুভূতি হয় ওর। আনন্দেরও। কারখানার চালের
ওপর আজ দুটো অচেনা পাখি এসে বসেছে। তাদের ধূসর দেহ, গলার নীচে নীলচে আভা। ওদের
কাণ্ড দেখে হাসি পায় শিরিনের। একটা পাখি যত সরে সরে যাচ্ছে, অন্যটা তত ওর গা ঘেঁষে
আসছে। শিরিনের চোখ যায় নীচের রাস্তায়। ওপরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে কালী। আহা! খারাপ লাগে ওর। আজ বেচারাকে কিছু খেতে দেওয়া হয়নি। শিরিনের মন ও চোখ চারদিক
খুঁটিয়ে দেখে আজকাল। এই পৃথিবীর মূলসুরের মধ্যে ফেলে নিজেকে যেন বাজিয়ে নিতে চায়। কোনো রূপকথার জগতে নয়, দিদার রেখে যাওয়া ওইসব বইয়ের পাতায় নয়, বরং এই শরীর, এই পৃথিবীর চেনা মানুষজন, সুখ-দুঃখ, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চাওয়া-পাওয়া এসবের মধ্যেই ভীষণ বাঁচতে ইচ্ছে করে। হঠাৎ এসব কিছুকেই বড় মূল্যবান
মনে হয়। শিরিন বুঝতে পারে ও সত্যিকারের কোনো মৎস্যকন্যা নয়। অতুল যতই বলুক। ও মোটেও কোনো পরি
নয়। ভুলে থাকার চেষ্টা সত্ত্বেও মাঝেমাঝেই ওর মনে
পড়ে যায় সেদিনের কথা। মুখের ভেতরে প্রবিষ্ট অতুলের জিভের উষ্ণতা। অতুলের চ্যাটালো রোমশ বুকের পুরুষালি ঘাম-গন্ধ। আর মনে পড়লেই অস্বস্তি শুরু হয় শরীর জুড়ে। নিজের শরীরের ভিতরেই এমন এক অস্তিত্বের টের পায় যা
এতদিন ওর কাছে অধরা ছিল। ওর ভালোও লাগে। অথচ এও বুঝতে পারে যে ওর জীবনে অন্য কোনো পুরুষ কোনোদিন আসবে না।
যে সমস্ত পথচারী
দোতলার বারান্দায় ওর মুখ দেখে মুগ্ধ হয়ে দু’বার তাকায় তারা
কেউই তো জানতে পারে না আসলে ওর শরীরের অর্ধেকটাই শুধু মানবীর, বাকি অর্ধেকটা নিয়ে ঈশ্বরের
অন্য পরিকল্পনা ছিল। এখন শুধু সেই পরিত্যক্ত পরিকল্পনার চিহ্নটুকু ও টেনে
নিয়ে বেড়াচ্ছে। অতুলই একমাত্র পুরুষ যে ওর ওই
শুকনো কৃশ পা দুটোয় হাত রেখে বলেছিল, মৎস্যকন্যা। কষ্ট
হয়, কাল দুপুরে যখন অতুল দরজা ধাক্কাচ্ছিল, ফোন করে যা-তা বলেছে ওকে। দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। বন্ধ দরজা থেকে ফিরে গেছে, বেচারা। কিন্তু কতদিন? ও জানে, সামনে এলেই ও
আবার শিরিনের মধ্যে পরি খুঁজে পাবে। ও আবার ছুঁতে চাইবে ওর মৎস্যকন্যাকে।
শিরিন বুঝতে পারে না যাকে ছোটবেলা থেকে দেখছে, ভাই বলে জেনেছে, তার সঙ্গে কী করে, কেন হঠাৎ বদলে গেল এই
রসায়ন। হঠাৎ ওর মনে হল ওর অর্ধেকটা কী ঈশ্বর তাহলে মাছ নয়, পাখি নয়, কুকুরি করতে চেয়েছিলেন? বিচ? কুত্তি?
আর তখনই আবার
বেজে উঠল ওর হাতের মোবাইল। অতুল। কারখানার চালে বসে অচেনা পাখি
দুটোর খুনসুটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ফোনটা কানের কাছে নিয়ে শিরিন শান্ত স্বরে বলে, হ্যাঁ বল। কথা বল।... কী হল, কাঁদছিস কেন? তুই না সিলেনোস! সিলেনোস তো বীর ছিল!
কথা বলতে বলতে
শিরিন টের পায় ওর নিজের গালের ওপর দিয়েও গড়িয়ে পড়ছে লোনা জল। সে কি অতুল কাঁদছে
বলে? ওর নিজেকে কুকুরি মনে হচ্ছে বলে? নাকি অতুল ওর মামাতো ভাই বলে? শিরিন বুঝতে পারে না।
৫
এমনিতেই এদিকটা
শহরের দূরতম প্রান্ত। কারখানাটার পরেই রাস্তার দু’পাশে অনেকটা জায়গা জলাজমির মতো। এদিকে জনবসতি কম। তবু আগে মাঝেমধ্যে লোকজন যাতায়াত
করত। এই রাস্তাটাই এগিয়ে গিয়ে
হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বলে চলাচল করত গাড়ি, মোটরবাইক। এখন
ফাঁকা রাস্তায় দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় বুভুক্ষু সারমেয়দের দল। দূরে দূরে ছড়িয়ে থাকা এক-একটা আবাসন ঘিরে তাদের নিজস্ব এলাকা
ভাগ। তাই নিয়ে সারাদিন লেগে থাকে অধিকারের লড়াই। সকালে কারখানার
অন্যপ্রান্তের খোলা জমিতে আবাসনগুলো থেকে উচ্ছিষ্ট-আবর্জনা এনে ফেলা
হলে সেসব ঘিরে ওদের লড়াই ওঠে তুঙ্গে। কালী যোগ দেয় না
এসবে। রাস্তায় কুকুরের দল দেখলেই ও মাথা নীচু করে ঢুকে পড়ে
রাস্তার পাশের ঝোপের মধ্যে। ওর নিজের আস্তানায়। তাই প্রায়শই ওর খাওয়া জোটে না। বেলা শেষ হলে সামনের দোতলা থেকে সাদা মেয়েটা
যেটুকু ছুঁড়ে দেয় তাই ওর ভরসা। কিন্তু আজকাল যেন সেই
পরিমাণটুকুও ক্রমে কমে যাচ্ছে, ঠিক থাকছে না সময়েরও। গতকাল তো ও নিজেই ওই সাদা মুখের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য
রাস্তায় এসে ওপরের দিকে মুখ করে ডেকে উঠেছিল, কুঁইই। কুঁইই।
তখন মেয়েটি ওর দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিল, দু’ টুকরো শুকনো পাউরুটি। কালীর
সঙ্গে চোখাচুখি হয়েছিল। মেয়েটির চোখ যেন
দুঃখপ্রকাশ করেছিল। কালী লক্ষ করেছে ওই সাদামুখ আজকাল কীসব চিন্তা করে বারান্দায় বসে
বসে। কালী তার হদিস পায় না।
দুপুরে কালী
শুয়েছিল। যেমন রোজ থাকে। ওর পেটের ভেতরে পাক দিচ্ছিল ক্ষুধার ঘূর্ণি। অলস তাকিয়েছিল সামনের পথের দিকে। হঠাৎ দেখে সেই ছেলেটা আবার এসে দাঁড়িয়েছে ওই গমভাঙানির দোকান
লাগোয়া দরজাটার সামনে। সেই যে দু’দিন আগে দরজা ধাক্কা দিয়ে ফিরে গিয়েছিল, তারপরে আজ আবার। না আজ
কোনো আওয়াজ করছে না। কালী জানে ওই দরজা আজকাল আর খোলে না। খুলবে না। কালী বিরক্ত হয়। কৌতূহলও হয়। বারান্দার দিকে ভালো করে দেখবে বলে ও
ঝোপের মধ্যে থেকে মুখ বাড়িয়ে ওপরের দিকে তাকিয়ে ডেকে ওঠে, কুঁই, কুঁইই। বারান্দায় কাউকে বেরিয়ে আসতে না দেখে ও আরও
জোরে ডেকে ওঠে, ভৌ, ভৌউউ... ছেলেটি কালীকে
ডেকে উঠতে দেখেই নিজের হাতের ব্যাগ থেকে
একটা বিস্কুটের প্যাকেট খুলে চার-পাঁচটা বিস্কুট ছুঁড়ে দেয় কালীর দিকে। মাঝরাস্তার
ওপর এসে ছড়িয়ে পড়ে সেগুলো। একটা বিস্কুট চাকার মতো গড়িয়ে যায় নর্দমার দিকে। কালীর
ভালো লাগে না ওইভাবে ছুঁড়ে দেওয়ার ভঙ্গি। ও রাস্তার এপারেই
দাঁড়িয়ে থাকে। ভাবতে থাকে ওই বিস্কুটের কাছে ও
যাবে কি যাবে না! এটা কি ঘুস? ওকে চুপ করানোর
জন্য? এসব ভাবতে ভাবতেই দেখে ছেলেটি শিস দিতে দিতে আরও দুটো বিস্কুট ওর দিকে ছুঁড়ে দিল। ছেলেটির মুখে আজ আনন্দ ও উত্তেজনা। তারপর কালীকে অবাক করে দিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে খুলে গেল। আর ছেলেটাকে ভেতরে নিয়ে আবার বন্ধ হয়ে গেল দরজাটা। তখনও কালীর চোখের সামনে ফাঁকা রাস্তার মধ্যেখানে পড়ে আছে বিস্কুটগুলো।
কালী মুখ ঘুরিয়ে একবার ওপরের শূন্য বারান্দার দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করে ঢুকে যায় ওর নিজের জায়গায়। কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে পড়ে
আবার। যেভাবে খিদে পেলে দরিদ্র মানুষেরা শুয়ে থাকে পথের ধারে।
Khub Bhalo Laaglo.
ReplyDeleteভালো লিখেছ বন্ধু।এই ভালোবাসার গল্পটা সর্বজনীন।
ReplyDeleteখুব সুন্দর বর্ণনা।এবার উপন্যাস লিখে ফেলো।
শুভেচ্ছা
ভালো লিখেছ বন্ধু।এই ভালোবাসার গল্পটা সর্বজনীন।
ReplyDeleteখুব সুন্দর বর্ণনা।এবার উপন্যাস লিখে ফেলো।
শুভেচ্ছা
ভালো লিখেছ বন্ধু।এই ভালোবাসার গল্পটা সর্বজনীন।
ReplyDeleteখুব সুন্দর বর্ণনা।এবার উপন্যাস লিখে ফেলো।
শুভেচ্ছা
খুব ভালো গল্প অর্ঘ্যদা।
ReplyDeleteঅনবদ্য গল্প । পরিবেশনার মুন্সিয়ানা। অদ্ভুতভাবে প্রতি পর্বেই যেন শেষ হয়েছে একবার করে!
ReplyDeleteখুব সুন্দর লেখার বাঁধুনী। কিছু কিছু চেনা দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠল। কালীরাও ভাবতে পারে। সব কুকুরই কুকুর হয় না
ReplyDeleteবাহ্।পড়ে মনের খোরাক বাড়ল।
ReplyDelete
ReplyDeleteসাদা ও কালো এই দুইয়ের এক অমোঘ মেল বন্ধন। পরিস্থিতি মানুষকে কতদূর ঠেলে দিতে পারে, প্রতিরোধ কোথায় গিয়ে শূন্য হয়ে যায় আর তার বদলে নিজে থেকেই মানুষকে জাস্টিফাই করতেই হয় সময়ের সাথে মিল খাইয়ে এ হয়তো তারই হিসেব নিকেশ।
ReplyDeleteসাদা ও কালো এই দুইয়ের এক অমোঘ মেল বন্ধন। পরিস্থিতি মানুষকে কতদূর ঠেলে দিতে পারে, প্রতিরোধ কোথায় গিয়ে শূন্য হয়ে যায় আর তার বদলে নিজে থেকেই মানুষকে জাস্টিফাই করতেই হয় সময়ের সাথে মিল খাইয়ে এ হয়তো তারই হিসেব নিকেশ।