।। বাক ১৪৩ রণজিৎ অধিকারী ।।


রণজিৎ অধিকারী

জীর্ণ ত্রিভুজ কিংবা নিজস্ব জ্যামিতি

একটা ত্রিভুজঝরে পড়ার আগে পর্যন্ত তিনটি কোণই টিকিয়ে রাখে ; 
যেন জগতে তার এই জেদসমূহ জীর্ণতার পর 
মৃত্যুকে অতিক্রম করার পূর্বমুহূর্তেও 
তার কুঁচকে যাওয়া তিনটি বাহু আর 
                               তোবড়ানো তিনটি কোণ 

মানুষ স্বভাবতই চেয়েছিল একটা ঢুকবার পথ, 
একটা কোনো সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করে নিতে... 
প্রান্তগুলোকে আদর করতে করতে 
কল্পিত সেই উচ্ছ্রিত বিন্দু ... তারপর 
পথ ভুলিয়ে দেয় 
মানুষ কেন কখনোই জ্যামিতির অর্থ বোঝেনি, 
সে এই রহস্য ভেদ করতে পারেনি আজও
কেন কিছু জ্যামিতিক ধারণাই জগৎকে পালটে 
দেয় বারবার! 
কিংবা ছিল এক মহাজাগতিক খেলাযা 
সামান্য 'টি ত্রিভুজ, চতুষ্কোণ, বহুভুজ...  গোলকের সমাহারেই ঘনিয়ে তোলা! 
খসে পড়ার আগে মৃত্যুর কাছে দাঁড়াই, 
ব্যক্ত হওয়ার আগে সৃষ্টির কাছে দাঁড়াই ... 

যা কিছু চলমান, যা কিছু ধ্বংসের দিকে
নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আগে আমি একটা শূন্যের থেকে আরেকটা শূন্যের দিকে পা বাড়াই আর 
তখনও একটা কুঞ্চিত রেখায় ঝুলতে থাকি 

     
এইভাবে

পৃথিবীটা খুব সুন্দর দুঃখময়ভেবে...রেখে দিই বুধবারের শেষটুকু আর সেই অবশেষ থেকেই 
লাফ দিয়ে ওঠে বৃহস্পতিবারের লাল সূর্য 
তারপর সারাদিন হাওয়া দেয়, পাতা ঝরতে থাকে, 
গাছের বাকলগুলো একটু একটু করে উঠে আসে 
... একদিন হাঁটতে বেরিয়ে দেখব হয়তো এক 
রবিবার এসে খসা বাকলকে সরিয়ে নিয়ে গেছে কোথাও যেভাবে 

একমুঠো চাল, কয়েক দানা পোস্ত ফেলে রাখতে হয়, 
যেন কখনোই খালি না হয়ে যায় কৌটো এইভাবে
আমরা প্রতিদিনই একটুকরো উজ্জ্বল সকাল, বিমর্ষ বিকেল, রাত্রির নিদ্রাহীন টুকরো... 
                           রেখে দিই এক অদৃশ্য কৌটোয়
একটু একটু করে জমে এইভাবে একটা বড়দিন আসে ;
বুকভাঙা বৃষ্টি এসে সারাদিন আমাদের এই ঘরে 
কাটিয়ে যায় যেন চালচুলোহীন অতিথিসে গেলেই দেখি প্রাণোচ্ছল সোমবার এসে রোদে 
খুব ঝলমল করতে থাকে  

বেশ কাটে, দিনদিন পৃথিবী আরো সুন্দর 
আরো দুঃখময় হয় 

18 comments:

  1. বাহ চমৎকার লেখা । অভিনব চিত্রকল্প

    ReplyDelete
  2. খুবই মারাত্মক কবিতা। মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

    ReplyDelete
  3. বাপরে দুটো লেখাই ফাটাফাটি, ঘোর কাটতে সময় লাগবে

    ReplyDelete
  4. আপনার এই কবিতাগুলোর অন্তরঙ্গ পাঠক হয়ে উঠছি । বলে বোঝাতে পারব না কী অসমান্য লেখা আপনার কবিতাগুলো । বিপন্নতা ও গভীরতা প্রতিটি কবিতায় ছড়িয়ে । আহা ! এরকম কবিতাভর্তি একটি বই যদি কিনতে পারতাম পড়ার জন্য । দুটো কবিতাই খুব সুন্দর । কিন্তু আমার স্বাদ পূর্ণ হবে সেদিনই, যেদিন এইসব লেখাগুলো একসঙ্গে আপনার কাব্যগ্রন্থে পড়তে পারব । ভালবাসা নেবেন ।
    ।। শুভদীপ নায়ক ।।

    ReplyDelete
  5. ভীষণ ভালো দুটি কবিতা, প্রতিটি লাইন একেকটি কবিতার মত সুন্দর!!

    ReplyDelete
  6. অসামান্য লেখা। মৌলিক। যেন এক নতুন পথ,অপ্রত‍্যাশিত আবিষ্কার। আপনি এইমুহূর্তে বাংলাভাষার একজন প্রধান কবি সন্দেহ নেই।

    ReplyDelete
  7. অসামান্য দুখানা কবিতা । মন ও মনন দুইয়ের এমন সংমিশ্রণ রয়েছে আর রয়েছে এই পৃথিবীকে নতুন করে দেখবার আকাঙ্খা । ভালোবাসা । অনবদ্য এই কবিতাদ্বয় আমাদের চক্ষুদান করে । আমরা পুনর্জীবিত হয়ে উঠি ।

    ReplyDelete
  8. খুব ভালো লাগলো ।ভীষণ ভালো লেখা।

    ReplyDelete
  9. দু'টি কবিতাই অসামান্য

    ReplyDelete
  10. অভিনব, উদার, প্রাণোচ্ছল এবং ভিতরে কোথাও একটা concert, শুনতে পাচ্ছি । অনেকগুলো নানা রং রূপের কিরণ পংক্তিগুলোর মধ্যে স্তব্ধ হয়ে আছে । রণজিৎ নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন, হুমকি দিচ্ছেন, ভেঙে ফেলছেন। আমি নির্বাক, ঈষৎ ঈর্ষান্বিত শ্রদ্ধায় পড়ছি । অভিনন্দন বাক এবং রণজিৎকে।

    ReplyDelete
  11. খুব ভালো লাগলো... একটা বিষাদ লেগে আছে দুটি কবিতা জুড়ে... মন ছুঁয়ে গেল ...

    ReplyDelete
  12. বাহ! সুন্দর দুটি কবিতা।

    ReplyDelete
  13. চমৎকার। ভীষন ভীষন ভালো দুটি লেখা...

    ReplyDelete
  14. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  15. খুব ভাল লেখা। অভিনন্দন কবিকে।

    ReplyDelete