।। বাক্ ১৪৩ ।।অনিন্দ্য রায় ।।


অনিন্দ্য রায়

জানলা খুলেছি যেই

জানলা খুলেছি যেই বৃষ্টির কার্টেন উড়ে এল   
পাশের অর্জুনগাছ ঝাপসা, একটু সরে দেখি
মাঝডালে উঁচু-উঁচু, দুখানি পায়রা ভিজছে কি 
হঠাৎ নজর পড়লে মনে হয় স্তন, এলোমেলো
আজকে জ্যৈষ্ঠের শেষ, আলো কম, হয়নি বিকেলও
এখন সকল দৃশ্য শারীরিক লাগে, লেখালেখি
করতে বসে মাথা ঘোরে, ছিঁড়ে ফেলি যা লিখি অর্ধেকই
বাকিরা আমার দেহে ভর ক’রে বানাল ওথেলো 

নিজের আঙুল দেখে চমকে উঠি, মুছে ফেলতে চাই
সারা ঘর তছনছ করে খুঁজি রুমাল, রুমাল 
পালাই ভয়ের চোটে, স্মৃতি যেন কুকুরের পাল  
তাড়া খেয়ে আপনার দরজায় এসেছি, সরাই

আজ এত বৃষ্টি হচ্ছে, পয়লা আষাঢ় কালকে তো
আমার বস্তায় ভরা রয়েছে পায়রা দুটি, থেঁতো



প্রতিটি বলের আগে

প্রতিটি বলের আগে ভাবছি এবারে অফস্পিন
এবারে আমার দিকে ঘুরে আসবে তোমার প্রস্তাব
যতবার খেলতে পারব এ জীবনে ততটুকু লাভ
তোমার বলের কাছে ভালোবাসাটাসা পরাধীন 

এগিয়ে এসেও তবু আমি তার নাগালবিহীন   
পিচে পড়ে বেঁকে যাচ্ছে, দূরে-থাকা তাদের স্বভাব 
কথারা প্রলুব্ধ করে সরে যায়, পারি না জবাব 
দিতে, কাছাকাছি আসি, ছুঁতে তো পারি না কোনওদিন   

কবি নাকি বলেছেন, ‘মানুষের প্রেম হল খেলা’
কেবল ক্রিকেট নয়, হয়তো টেনিস, রেসলিং
বা হয়তো ঘাসে ঘাসে নেচে-নেচে-বেড়ানো ফড়িং   
মাঠের বাইরে যদি দেখা হয় সেটাই ঝামেলা

আমার পরাস্ত-হওয়া বারেবারে, তোমার মেডেন
কাছে এসে বলে গেলে, “পা বাড়ালে খেলতে পারতেন” 




যখন লিফটে উঠছি

যখন লিফটে উঠছি উত্তেজনা আর অল্প ভয়
দরজায় ঘোরাচ্ছ চাবি, আমি ব্যাগ নামালাম ফ্লোরে
ভেতরে কি কেউ নেই? কেউ নেই? রিলেশন? স্মৃতি?
নিশ্বাস মহড়া করছে, জুতো ছেড়ে আসতে চাইছে পা
খুললে, ঢুকতে গিয়ে পাল্লায় আঙুল গেল চেপা
-আউচ! লেগেছে খুব? যন্ত্রণার ভাণ করা রীতি 
ওষুধ না খুঁজে পেয়ে চুম্বন লাগাই হাতে ধরে
শহরে বহিরাগত আমি চাই শরীরে আশ্রয়

প্রতিটি কামরায় যাই, বাথরুমে জামাটামা ছাড়ি
কিচেনে আগুন জ্বালি, সেঁকে নিই নম্র পাউরুটি
তাড়াতাড়ি খেতে বসবে? তার আগে জনি ওয়াকার?
ব্যালকনি দিয়ে হাওয়া ঢুকল নিয়ে নেশার আঁধার
অ্যশট্রে্তে চোখ পড়ল, ওখানে নেভানো পাপ দুটি
কে ছিল? হাতের ছাপ তোমার কোমরে আড়াআড়ি  



জ্বরের পশ্চিমদিকে

জ্বরের পশ্চিমদিকে প্যারাসিটামল
দক্ষিণে আঢাকা গ্লাস, চকলেট দুটি
নৈর্ঋতে পেতলঘন্টা হাসে খলখল
জলপাইহাটির‍্যাকে, নেব বলে উঠি
একটু কি মাথা ঘোরে? একঢোঁক জল
ভাতের তো রুচি নেই, দুধপাউরুটি
এখনও ঢেঁকুর ওঠে, গলায় অম্বল
মেঝেতে ছড়িয়ে আছে গল্প কুটিকুটি

তোমাকে ডেকেছি কাছে, বসেছি শয্যায়
কোনায় গুটিয়ে আছে ছেঁড়া অধিবাস
দূরত্ব, দূরত্ব, দূর, স্পর্শটুকু আয়
এভাবে পেরিয়ে যাবে কুসুমের মাস?    
একসঙ্গে হেসে উঠি, আহ্‌, কাশি পায়
 
নোনতা লাগে মুখে, রক্ত, পলাশ-পলাশ    






12 comments:

  1. অনিন্দ্যদা ❤ কীভাবে যে এক নিটোল বুনে যাও, ভাষার নির্ভার বুননই যে কবিতা এটা তোমার কবিতা কাছে এসে বারবার বুঝতে পারি।

    ReplyDelete
  2. আপনার কবিতার গায়ে আগাগোড়া যত্নের ছাপ, মমতার ছাপ।

    ReplyDelete
  3. খুব ভালো লাগলো লেখাগুলি

    ReplyDelete
  4. চারটি চতুর্দশপদীই খুবই ভালো লাগলো!

    ReplyDelete
  5. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete