বেটার হাফ
রবিবার ছুটির দিন। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে
অনিরুদ্ধ ল্যাপটপ খুলে বসেছে। বাড়ির সবাই এখনও ঘুমিয়ে আছে। বাজার করতে ঘণ্টাখানেক
বাদে গেলেই হয়। রান্নার দিদি রান্না করছে পাশের কিচেনে। চিমনির মোটরের আওয়াজ শোনা
যাচ্ছে। হঠাৎ মেসেঞ্জারে ছোট চ্যাট উইন্ডো ভেসে উঠল। প্রোফাইলে নাম দেখাচ্ছে
অনিরুদ্ধ ব্যান্ডো। অনিরুদ্ধ উৎসাহিত হয়।
হাই।
হাই। আপনার নামও অনিরুদ্ধ?
হ্যাঁ।
আমরা কি পরিচিত?
অবশ্যই।
কিন্তু আমার নামে আমার কোনও
বন্ধু আছে বলে তো জানতাম না।
নেই তো।
তাহলে?
আমরা তো বন্ধু নই।
তবে কী?
আমি আর তুমি একই লোক।
মানে?
মানে অনিরুদ্ধ ওয়ান আর টু আর
কি।
বুঝলাম না।
না বোঝার কি আছে।
আমি তোমার সেকেন্ড হাফ বা দ্বিতীয় সত্তা বলতে পারো।
আপনি কোথায় থাকেন?
ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সে তো বুঝতেই পারছি। এ কি
কোনো সাইবার ক্রাইমের চক্কর নাকি?
হা হা হা। কী যে বলো!
আপনি কী চান?
তোমার সঙ্গে কথা বলতে। অনেকদিন
ধরে তাল করছি। সুযোগ হচ্ছে না। আসলে বাড়িতে নেট অন করেই তুমি দুম করে পর্ন সাইটে
ঢুকে পড়ো। তাই সুযোগ হয় না।
হুম।
কি, লজ্জা পেলে নাকি?
এতে আর লজ্জা পাবার কী আছে?
সে তো বটেই। কিন্তু ফর্সা গাল
দুটো লাল হল তো তাই বলছি।
সে কি দেখতে পাচ্ছেন নাকি?
আমরা তো আর স্কাইপ খুলে বসে নেই।
না তা নেই। তবে
দেখতে পারছি। বুঝতে পারছি।
আর কী কী বুঝতে পারছ?
এই মুহূর্তে তোমার হার্ট রেট
কত। পালস কত। রেসপিরেশন
কত। তোমার অ্যাংজাইটি ইন্ডেক্স কত আছে। এই
আর কি। ‘তুমি’ বললে সেটাই ভাল লাগছে। আপনি-ফাপনি কোরো না।
বেশ। ঢপ দিচ্ছ কিনা বুঝব
কিভাবে?
পরীক্ষা কর। আমি বললাম তোমার
পালস রেট নব্বই। নর্মালি আটাত্তর থাকে। এখন একটু বেড়ে গেছে। চেক করে দেখো।
একদম নব্বই!
তবে এবার তো আর ঢপ দিচ্ছি
বলতে পারবে না।
আরও কিছু বলো দেখি।
তুমি কি ভাবছ আমি ম্যাজিক
জানি?
না, তা নয়। তবে আর-একটু
কনফার্ম হতে চাইছি।
তোমার পেনিস পুরো দাঁড়িয়ে
গেছে। একদম ফুল ইরেকশান। তোমার শর্টস প্রায় ফাটিয়ে বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা।
হায় হায়... সর্বনাশ... মানে
কিভাবে? কেন?
কেন আবার? আমি যদিও নিজেকে
তোমার আদার হাফ বলছি তুমি মনে ভাবছ বেটার হাফ। তাই সেক্সুয়ালি এক্সাইটেড হচ্ছ।
চরিত্রহীন হলে যা হয়।
গালাগালি দিলে?
তবে চুমু।
হা হা।
আমি তোমার সবকিছু জানি। এভরি
ডিটেল।
কিন্তু কিভাবে?
তুমি বলো কিভাবে?
আমার সব অ্যাকাউন্ট হ্যাক
করলে সম্ভব। আমার সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। আমার মেল আইডি।
পাসওয়ার্ড।
ঠিক তাই। কিন্তু তুমি এই
মুহূর্তে কী ভাবছ তাও আমি জানি।
বলো তো কী ভাবছি?
তুমি আমাকে কোনো এ.আই. ভাবছ।
ভাবছ আমি মেয়ে হলে ভাল হত। আমার গলার আওয়াজ শুনতে পেলে ভাল হত। বিশেষ করে আমার
গলার আওয়াজ যদি স্কারলেট ইওহানসেনের মতো হত তবে তুমি আর-একটু সুখ পেতে। ‘হার’
মুভির কথা ভাবছ। কী তাই তো?
তুমি তো মানে... ভয়ঙ্কর
লোক...
আবার লোক। আমি তো তুমিই।
অনিরুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনিরুদ্ধ ব্যান্ডো। হা হা।
তুমি কি এখানেই থাকো? নাকি
অন্য কোনো জায়গায়?
অন্য জায়গায়? আমি কোথায় থাকি
বা কিভাবে থাকি তা নিয়ে তোমার কোনো ধারণাই থাকা সম্ভব না।
সে তো বুঝলাম। কিন্তু তুমি
যখন বলছ যে তুমি আসলে আমিই তাহলে আমার নিশ্চই নিজেকে জানার অধিকার আছে।
হুম।
কোথায়?
আমি আছি যতক্ষণ তুমি
ইন্টারনেটের সঙ্গে নিজেকে কানেক্টেড রেখেছ। তুমি লগ আউট করে গেলেই আমি তোমার
কল্পনাতে আছি। বাস্তবে হয়তো নেই।
আমি তোমার মতো বুদ্ধিমান না
হলেও এটুকু বোঝার মতো বুদ্ধিমত্তা আমার আছে।
তাহলে আর কী জানতে চাও?
কনশাসনেস... চেতনা... এটা
কিভাবে সম্ভব? কিভাবে তুমি বুঝতে পারছ আমি কী ভাবছি? আমার চেতনাকে কিভাবে হ্যাক করছ
তুমি?
হা হা হা। ধরো এটাই আমার
জিনিয়াস। তোমাদের বিজ্ঞানীদের এটা আবিষ্কার করতে আরও কয়েকশো বছর লাগবে।
মানে তুমি এলিয়েন? পৃথিবীর
বাইরের কোনো গ্রহ থেকে বলছ?
তোমার থেকে কোটি কোটি লাইট
ইয়ার দূরে। এতটা দূরে কল্পনা দিয়েও তুমি আমাকে ছুঁতে পারবে না।
কিন্তু আমার মতো একজন সাধারণ
লোকের সঙ্গে নিজেকে এক করে দেখানোয় তোমার লাভ কী? এই পৃথিবীতে আমার চেয়ে অনেক
সুপার মেরিটের লোক আছে। তাদের হ্যাক করোনি কেন?
তুমি সাধারণ লোক কে বলল? তুমি
জানো এই মুহূর্তে তোমার শরীরে কত রকমের রাসায়নিক প্রক্রিয়া চলছে? তোমার ব্রেনের
স্নায়ুতন্ত্রে কত নিউরোট্রান্সমিটার কাজ করছে? আর সবচেয়ে বড় কথা ওই যে বললে
কনশাসনেস বা চেতনা... সেই জটিল অ্যালগরিদম তৈরি করতে কত আমার সময় লেগেছে তুমি জান?
কত আর হয়তো ছয় মাস।
ছয় মাস। হা হা হা। ঝাড়া দশ
মিনিট।
মাত্র দশ মিনিট!
হ্যাঁ। মাত্র দশ মিনিট।
কিন্তু আমাদের দশ মিনিট মানে তোমাদের প্রায় আ ডিকেড। দশ বছর বলতে পারো।
তুমি কি কোনো প্রজেক্টে আছ?
একজ্যাক্টলি। তোমাদের ভাষায়
আমার হাইস্কুল প্রজেক্ট।
তোমাদেরও কি স্কুল আছে?
ওই যে বললাম ‘তোমাদের ভাষায়’।
হুম। কিন্তু তবু আমার সন্দেহ
হচ্ছে আমাকে কেন? হোয়াই মি?
এটা একটা র্যানডম চয়েস। আর
তুমি একা নও। তুমি একটা পার্ট অফ কালেক্টিভ কনশাসনেস।
বুঝলাম। মানে আমিও একটা পার্ট
অফ নেটওয়ার্ক।
একদম তাই। আমি
এই মুহূর্তে এক হাজার জনের সঙ্গে চ্যাট করছি। তোমাদের সবার তথ্য ও চেতনার
অ্যালগরিদম আমার কাছে আছে। আমার রিসার্চ যত বাড়বে তত এই সংখ্যাটা বাড়বে। হাজার
থেকে লাখ বা মিলিওন।
তখন এই এক মিলিয়ন লোকের
চেতনাকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা তোমার থাকবে। আস্তে আস্তে হয়তো হাতে চলে আসবে
নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও।
ঠিক তাই। এও তোমাদের ভাষায়
একটা সুপার কম্পিউটারের মতো ব্যাপার। আমি তোমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।
কিন্তু তাতে তোমার লাভ কী?
আমি আমার প্রজেক্ট সেল করতে
পারব।
কোথায় সেল করবে?
আমাদের এখানে। তোমরা যাকে বলো
ভিডিয়ো গেম। এই ভিডিয়ো গেম আশা করি খুব জনপ্রিয় হবে। আমি অনেক ‘টাকা’ রোজগার করতে
পারব।
আমাদের সামগ্রিক চেতনা নিয়ে
ভিডিয়ো গেম!
হ্যাঁ। এ তো একটা খেলাই।
তোমাদের ইলন মাস্কও তো অনেক অল্প বয়েসে এই ভিডিয়ো গেম করেই অনেক টাকা রোজগার
করেছিল বলে শুনেছিলাম।
তুমি ইলন মাস্ককে চেনো?
আমি সবাইকে চিনি। এই
ইউনিভার্সে সবই একটা সাইম্যুলেশন। তুমি যেমন এই মুহূর্তে আমার মাধ্যমে তোমার
সাইম্যুলেশন দেখতে পারছ। তোমার এমন আরও কয়েক মিলিওন সাইম্যুলেশন আছে বা থাকতে
পারে। আমাদের ইউনিভার্সও একটা সাইম্যুলেশন। এটা কি বিশ্বাস করো?
হুম। কিন্তু ইন্টারনেট না
থাকলে তো তোমার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ থাকাই সম্ভব না।
হ্যাঁ। এই মুহূর্তে এটা ‘অন
লাইন’ গেম বলতে পারো। খুব শিগগিরি আমি এটাকে ‘অফ লাইন’ করে ফেলব।
তখন তুমি কী করবে?
তখন আমি তোমাদের সব সময়
নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। প্রভাবিত করতে পারব।
কিন্তু আমি যদি প্রভাবিত না
হই?
হ্যাঁ। নিশ্চয়ই। প্রথমে তুমি
প্রভাবিত হবে না। কিন্তু আস্তে আস্তে আমি তোমাকে যত জানব তুমি বা তোমরা তত আমার
কথা মানতে বাধ্য থাকবে।
ও মাই গড! তোমার কী ধরনের
কথা? তুমি আমাদের দিয়ে কী করাতে চাও?
কী আবার! ভিডিয়ো গেমে তোমরা
যা করো। মারামারি। খুনখারাপি। ব্লাড শেড।
আমরাও এসব দেখতেই ভালোবাসি।
মানে যুদ্ধ।
লার্জ স্কেল যুদ্ধ না হলেও
ছোটখাটো যুদ্ধ। মানে সিভিল ওয়ার। গৃহযুদ্ধ।
এমন কি তোমরা আগেও করেছ?
আমি তো করিনি। অন্য কেউ করে
থাকতে পারে। আমি থার্ড গ্রেড স্টুডেন্ট। আমাদের জিনিয়াসরা কি করতে পারে তা
সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণাই নেই।
হুম।
কি ঘাবড়ে গেলে নাকি?
ঘাবড়ে আর কী করব? আমার হাতে
তো আর কিছু নেই।
তা আজ তো রবিবার। বউদি বলেছে
ইলিশ মাছ আনতে। যাবে না?
ইলিশ মাছ! কত দাম বলো তো!
আজ বড় গঙ্গার ইলিশ ষোলোশো
টাকা করে চলছে। এমন বেশি কিছু না। বউয়ের জন্য এটুকু করবে না?
তুমি তো মহা ঢ্যামনা হে! তবে
এতক্ষণ যে আমার সময় নষ্ট করলে এজন্য আমাকে কী দেবে?
বেশ কথা দিচ্ছি।
কী কথা দেবে?
যে খুব শিগগিরি স্কারলেট
ইওহানসেনের মত হালকা ফ্যাস্ফ্যাসে গলার কাউকে নিয়ে আসব। তুমি তার সঙ্গে কথা বলতে
পারবে।
এটাও কি তোমার প্রোজেক্টের
পার্ট!
অবশ্যই। তোমার সঙ্গে একঘণ্টা
কথা বলাতে পারলে তোমার ভয়েসের পিচ টোন আমার জানা হয়ে যাবে। আর সবচেয়ে বড়
ব্যাপার...
কী বড় ব্যাপার?
তোমাদের সেক্সুয়াল ডিজায়ার
কিছুটা জানতে পারব। মানে প্রেডিক্ট করতে পারব। তোমরা জন্মের পর থেকেই একে সাপ্রেস
করতে করতে এমন জায়গায় নিয়ে চলে গেছ যাকে ডিকোড করতে আমার মতো থার্ড গ্রেড
স্টুডেন্টের পেছন ফেটে যাচ্ছে।
যাক, একটা ব্যাপারে আমরা
তোমার পুরোপুরি দাস হয়ে যাইনি, কী বলো?
তা হওনি ঠিকই, কিন্তু ওই একটা
ব্যাপারেই তোমরা আবার নিজেদের দাস। নিজেদের আচরণবিধি ওই ব্যাপারে তোমাদের এত
ভঙ্গুর বা আনপ্রেডিক্টেবল যে তোমাদের প্রজাতির অস্তিত্বও বিবর্তনের ওই একটা
মাপকাঠির মধ্যেই ফেঁসে আছে।
বড্ড কঠিন কথা বলছ।
হা হা হা। তাই
নাকি? তবে যা বললাম ভেবে দেখতে পারো। লগ আউট করবে
তো? বউদির গলা পেলাম। মনে হয় উঠে পড়েছে।
হুম। ওকে বাই। পরে কথা হবে
তো?
পরে স্কারলেট ইওহানসেন। হা হা
হা।
No comments:
Post a Comment