আঘা শহীদ আলি :
সংক্ষিপ্ত পরিচয় : একজন
ভারতীয় কাশ্মীরি। জন্ম ভারতে।বেড়ে ওঠা, লেখালেখি―ভারত ও
আমেরিকায়। বাকিটা...
ডাকঘরহীন এক দেশের বাসিন্দা
সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়
আঘা শহীদের
কথা উঠলেই সামনে চলে আসে সাদা ধবধবে বিদেশী হাসপাতালের বেড, মাথায় ম্যালিগনেন্ট
ব্রেন টিউমার, অপারেশনের
জন্য মাথার সমস্ত চুল কামানো, টিউমারের চারধার জুড়ে চকচক করছে ধাতব সেলাই, অসফল অপারেশনের
পর হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে হুইলচেয়ারে বসা সেই অদ্ভুত মানুষটা যে হুইলচেয়ার ঠেলে
নিয়ে চলা নীল পোশাকের ওয়ার্ড বয়টিকে জিগ্গেস করে
তোমার বাড়ি কোথায়?
আর ছেলেটির মুখে 'ইকুয়েডর' শব্দটি শুনেই
বাচ্চাদের মত হাততালি দিয়ে 'স্প্যানিশ’ বলে চিৎকার করে
ওঠেন। নিজের সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলতে পারেন, “আমি সব সময়
স্প্যানিশ শিখতে চাই আর সেটা লোরকাকে পড়বার জন্য।ওফ লোরকা..কি অসাধারণ।"
ঘড়িতে তখন বিকেল পাঁচটা
কাঁটায় কাঁটায় বিকেল পাঁচটা
ছেলেটা এসেছে সাদা থান গায়
চাকায় বসানো শবাধার এক শয্যায়
সাজান রয়েছে এক ঝুড়ি লেবু
ক্ষতেরা জ্বলছে তখনও সূর্যের মত
আহা নিদারুণ সেই বিকেল পাঁচটা
সবার ঘড়িতে তখন বিকেল পাঁচটা...
শহীদের কথা উঠলেই
সামনে চলে আসে সেই বার্সিলোনা বিমানবন্দর। সেই মহিলা সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে কথোপকথন।
“আপনি
কি করেন? আমি
একজন কবি। স্পেনে আপনি কি করতে এসেছিলেন? কবিতা লিখতে। আপনি কি এমন কিছু বহন করছেন
যা অন্য যাত্রীদের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে?” আঘা শহীদ মানেই সেই অসাধারণ প্রত্যুত্তর। নিজের বুকের ওপর চাপড়
মেরে চিৎকার করে যিনি বলতে পারেন “অবশ্যই, আমার এই হৃদয়”।
শহীদের কথা উঠলেই
সামনে চলে আসে সেই সাত তলা উঁচু বাড়িটা। প্রতিটি সন্ধ্যায় ঘরভর্তি মানুষের হই হই, উৎসব মুখরতার সাততলা ফ্লোরের ব্যালকনি থেকে ব্রুকলিনের
সুদীর্ঘ ইস্টনদীর জলরাশি দেখা যায়, দেখা যায় নদীর পাড় বরাবর ম্যানহাটন
শহরটাকে। সন্ধ্যায় শহরের সমস্ত আলো এসে পড়ে নদীর জলে... শহীদের কাছে সে ছিল এক অপরূপ
স্বর্গীয় দৃশ্যের মত।
যাইহোক আর কয়েক মিনিটের অপেক্ষা। আপনারা যাকে সাদা পৃষ্টা
বলে মনে করেছেন ভালো করে লক্ষ্য করুন, দেখবেন এটা আসলে একটা হলঘর। সাত থেকে
দশ তলা উচ্চতায় যার অবস্থান, যার একদিকের দেওয়াল সম্পূর্ণ কাঁচের। যেখান
থেকে ব্রুকলিনের ঈস্ট রিভারের মায়াবী রূপ দেখা
যায়, দেখা
যায় শহীদের প্রিয় বৃষ্টিকে, স্নো-ম্যানকে। ওই তো আঘা শহীদ আলি হাসপাতালের সাদা পোশাক গায়ে মাথায় ব্যান্ডেজ
নিয়ে হুইলচেয়ারে কাঁচ দেওয়ালের সামনে এসে দাঁড়ালেন, এবার শুরু হবে
তাঁর কথন....
সময়ের সমস্ত
গন্ডি পেরিয়ে,নিজের
অবস্থান ভুলে, আলো-আঁধারির
পার্থক্য ভুলে গিয়ে আমাদের সামনে এখন শুধুই কবি আঘা শহীদ আলি। তীব্র অন্ধকারের মধ্যে এক উজ্জ্বল আলোর দিশা। যে
উৎসারিত আলোর ভেতর থেকে তিনি বলতে শুরু করেন...
“কেউ আমাকে জীবন
দিতে চায়। আমার সাথেই মৃত্যু হবে একটা ভাষার’’। জীবন বা মৃত্যুর স্পষ্ট কোনও সংজ্ঞা আমার জানা নেই তবু “ডাকঘরহীন এক
দেশ’’ কবিতাটিতে
এই লাইন দুটো লিখেছিলাম। কিন্তু কীভাবে এসেছিল
লাইন দুটো, সে কথা
দিয়েই শুরু করা যাক। আমার এক বন্ধু যে এইডস্ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল, তার মৃত্যু থেকেই
জন্ম নিয়েছিল শব্দগুলো। আমি যখন স্নাতকস্তরের ছাত্র ছিলাম সেও তখন পেনস্টেটে স্নাতকের
ছাত্র। আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। তার সাথে
শেষবারের মত আমার দেখা হয়েছিল ১৯৭৯তে। সে স্নাতক হয়ে চলে গিয়েছিল। ১৯৮৫তে আমি তখন
টুকসনে, নীল
থেকে তার একটা ফোন পেয়েছিলাম। সে আমার নম্বরটা কীভাবে
পেয়েছিল সে নিয়ে আমার নিজেরই ধন্দ রয়েছে কারণ আমি কি তাকে আমার নম্বর জানিয়ে চিঠি
পাঠিয়েছিলাম কিনা তা নিয়ে আমার নিজের একেবারেই কিছু মনে নেই। সে আমাকে বলেছিল, সে আর তার প্রেমিকা
বোস্টন থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যাচ্ছে, টুকসনের ওপর দিয়েই যাবে সুতরাং তারা
দেখা করতে চায়, তারা
দেখাও করেছিল। এর ছমাস পর সে আমাকে বলেছিল, “আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই”। আমি শুনতে
চাইনি কারণ আমি জানতাম সে আমাকে তার এইডস্ আক্রান্ত হবার বিষয় নিয়েই বলতে চেয়েছিল।
এই ঘটনাটা আমার ওপর বেশ প্রভাব ফেলেছিল। একটা মানুষ যে আমার জীবনে অতীত হয়ে গিয়েছিল
আচমকা সে আবার আমার জীবনে ফিরে এলো এবং ফিরে এলো শুধু তার মৃত্যুর কথা জানাবার জন্য, কতটা ভয়াবহ
রোগে সে আক্রান্ত সেটা জানাবার জন্য। ভাবতে বসে খুবই আশ্চর্য হয়েছিলাম আমি, এও কি হয়?
এই লাইন দুটো আমার মাথায় আসার পেছনে অবশ্য আরও একটি ঘটনা রয়েছে।
আমি একবার সংবাদপত্রে ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যু নিয়ে একটি লেখা পড়েছিলাম। এবং
ওই মানুষটি ছিলেন একমাত্র মানুষ যিনি তুর্কির একটি ভাষা ইউবিক
জানতেন৷ এটা আমার মাথায় দীর্ঘ সময় ধরে ছিল। আঘা একটি তুর্কি নাম এবং বাবার দিক থেকে
যদি হিসেব করি তবে আমার নয় প্রজন্ম আগের পূর্বপুরুষ যারা ব্যবসা করবার জন্যই পাহাড়
পেরিয়ে কাশ্মীরে এসেছিলেন। "আমি
সংবাদপত্রের ওই লেখাটার সঙ্গে আমার পূর্বসূরীদের মধ্যে একটা সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছিলাম।
আমি এই ভাষার শেষ বক্তা”,
আমি তাকে আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে দেখেছি এই ভয়েসটা কবিতাতে আমি রেখেছি। একটা
অদ্ভুত বেদনা লাইনটার মধ্যে আছে, একটা ভাষার মৃত্যুর সঙ্গে আমার বন্ধুর মৃত্যুর কোথায় যেন একটা
সম্পর্ক রয়েছে বলে আমার মনে হয়। একটা লাইনের ভেতর আসলে একই সাথে অনেকগুলো ঘটনা ঘটতে
থাকে। আবার উল্টোটা যদি আমরা ভাবি অনেকগুলো ঘটনা একই সাথে ঘটতে থাকে বলেই হয়ত এ ধরণের
লাইনের জন্ম হয়। এটা শুধু কেবল বন্ধুর মৃত্যু বা কোনও উপজাতির মৃত্যু বা কোন ভাষার মৃত্যু বা কোন প্রাকৃতিক দৃশ্যের
মৃত্যুর মত সরলরৈখিক কোনও বিষয়
নয়। আমরা আসলে হয়ত একটা কিছু পড়ছি, ভাবছি সেটা কোনও নির্দিষ্ট বিষয় কিন্তু আসলে সেটা একই সাথে অনেকগুলো
বিষয়ের সংমিশ্রণ। একটা মহাবিশ্ব বা ব্রহ্মান্ড প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুর সাথেই মারা
যায়।
“পৃথিবী একটা
হস্তলিপির কুন্ডলী ”
'এ নস্টালজিস্ট
ম্যাপ অব আমেরিকা' কাব্যগ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে
এই লাইনটি। আমি বিশ্বের অন্যতম সেরা কিংবদন্তি লায়লা-মজনুর গল্পকে সামনে রেখে মরুভুমির প্রতীক ও মোটিফকে আরও বড় করে দেখাতে চেয়েছিলাম। এই
বিষয়টি আমাকে একেবারে প্রাক ইসলামিক আরবে পৌঁছে দেয়। মজনুর মধ্যে যে উন্মাদনা সেটা আজও মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে
কারণ লায়লার প্রতি অর্থাৎ একজন
নারীর প্রতি তাঁর যে আবেগ এবং তাঁকে পাবার জন্য তাঁর যে আকাঙ্খা সেটা সকলের কাছে একটা প্রতিশ্রুতির মডেল হিসেবে স্বীকৃত। তাছাড়া
এই অধ্যায়টি আমি ইচ্ছে করে তৈরী করেছিলাম কারণ সমালোচক, সাক্ষাৎকারকারী, সংবাদপত্রের
লেখক তারা সব সময় আমাকে একটা ছাঁচের মধ্যে
আটকে রাখতে চেয়েছেন,
মানে যেহেতু আমি একজন ইংরেজীতে লেখা ভারতীয় সাহিত্যিক সেহেতু আমি যাই লিখবো না
কেন বা বলা ভালো আমার লেখার বিষয় সব সময় ভারত, পাকিস্তান বা কাশ্মীরের
মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে তারা মনে করে। কিন্তু আমি মনে করি সকলের মধ্যেই একটা মহাবিশ্ব
রয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই অপরিসীম ঐতিহাসিক শক্তির থেকে সৃষ্ট। আমি মনে করি আমার মধ্যে
যেমন একজন মুসলিম বাস করে,
তেমনি একজন হিন্দু বাস করে, আবার পশ্চিমের সংস্কৃতিও বিরাজমান। কারণ আমি বিভিন্ন সংস্কৃতির
ক্রমবিকাশের মধ্যে বড় হয়েছি।
আরবি, ফার্সি,উদু সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করাবার জন্যই এই অংশটি লিখেছিলাম।
ওই সময়ের বেশ কিছু ছবি আমি দেখেছিলাম। তার মধ্যে একটাতে দেখেছি একেবারে মরুভূমির প্রান্তরে মজনুর বাবা ছেলেকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। বাকি ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছিল জাহাঙ্গীরের স্মৃতিচারণের ওপর
ভিত্তি করে তৈরী এবং অন্য ছবিগুলোর নির্দিষ্ট আকার এবং তার জটিল নকশা স্মরণে রাখবার
মত। স্মৃতিচারণের সেই ছবিটি ছিল একটি মাকড়সা ও
কোবরার মধ্যের লড়াইকে নিয়ে। এবং মাকড়সা কোবরার মাথার ওপর বসে কোবরাটিকে মেরে ফেলে।
“তুষার মানবের
প্রজন্ম"
'স্নোম্যেন’ কবিতাটির ভেতরে আসলে দুটো কবিতা লুকিয়ে
আছে, একটি
ওয়ালেস স্টিভেন্সের স্নোম্যেন কবিতাটি, তবে এটা অবশ্য
সরাসরি কবিতা পড়বার সময় কেউই বুঝে উঠতে পারবে না। অন্যটি ওয়াথারিং হাইটস থেকে দেখা
এমন একটি দৃশ্য যা আমাকে দীর্ঘ সময় ধরে ভাবিয়েছে। একজন বর্ণনাকারী হিথক্লিফের বাড়িতে
আশ্রয় নিয়েছেন কারণ বাইরে ভয়ানক ঝড় উঠেছে এবং ক্যাথরিনের ভূত উইন্ডোতে কড়া নাড়ছে।
সে বলছে, “আমি
শীতে কাতর আমাকে ঢুকতে দাও”। বর্ণনাকারী
জানলাটা খুলল কিন্তু কিভাবে যেন জানলার কাচটা ভেঙে গেল। সে তখন সেই ভূতের হাত ধরে কাচের
ওপর চেপে ধরলো এবং দেখলো রক্ত। এটা একটা আশ্চর্যজনক দৃশ্য এবং এটাই বোধহয় জাদু
বাস্তবতা। মানুষ যে কোন উপন্যাস বা গল্পের কাছ থেকে সোজাসুজি উত্তর চায় কিন্তু সেটা
কখনওই পাওয়া সম্ভব নয়। কে ওই নারী? আমি কি তবে এই কবিতায় হারিয়ে যাওয়া নারীদের সন্ধান করেছি? প্রশ্নটা কঠিন, সরাসরি কোনও উত্তর পাওয়াও সম্ভব নয়। আমি নিজেকে যখন জিজ্ঞেস
করেছি আমি আমার বংশের নয় প্রজন্মের পুরুষদের সম্পর্কে জানি কিন্তু ঠাকুমার আগের কোনও নারী সম্পর্কে জানি না। সেটা কেন? পাঠকের মনে হতেই
পারে এটা একটা নারীবাদী নির্মাণ। হয়ত তাই... হয়ত আবার সেটাও না।
“আবারও একবার
আমার হাত শূন্য,
পুরোন কেল্লায় আমি একা অপেক্ষায়"
এই যে শূন্য হাত, এই শূন্যতার
অর্থ একদিক থেকে হতে পারে ভালোবাসার মানুষ নেই বলে শূন্যতা। অথবা এই শূন্য হাত মানে
হয়ত সে সম্পদ শুন্য,
অর্থকড়ির কথা বলা হচ্ছে। কবিতাটি জুড়ে শুধুই ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। কবিতাটিতে
বর্ণনাকারীকে দেখা যাচ্ছে একটি বাস স্টেশনে তার পুরোন বন্ধুর দিকে ছুটে যেতে, যদিও টিকিটের
জন্য তার কাছে কোনও টাকা নেই। হঠাৎই
একজন পুলিশ
তাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার
টিকিট আছে? টিকিট
ছাড়া আপনার আসাটা বেআইনি’”। ঠিক
এরকমই একটা ঘটনা আমার নিজের জীবনের সাথেও ঘটেছিল। তখন আমি দিল্লীতে, অনেক লোক বিনা
টিকিটে বাসে যাতায়াত করছিল সেকারণে টানা চেকিংও
শুরু হয়েছিল। একদিন আমি বাসে উঠেছি আমার এক বন্ধু বলল শহীদ তোমার টিকিট কাটতে হবে
না ওটা আমি কেটে নেব। তো আমি যখন বাস থেকে নামছি হঠাই একজন টিকিট চেকার আমার কাছে
টিকিট চাইল, আমি
আমার বন্ধুকে দেখিয়ে দিলাম কিন্তু সে তো টিকিটই কাটেনি। অগত্যা ইন্সপেক্টর আমাকে
নিয়ে গিয়ে একটা পুলিশ ভ্যানে তুলেছিল। ঘটনাটিতে আমি খুব বিরক্ত হয়েছিলাম কারণ আমি
জীবনে এই ধরণের ক্ষেত্রে কখনও প্রতারণা করিনি। তবে অন্য ক্ষেত্রে কিছু প্রতারণা করবার
ঘটনা রয়েছে। কবিতাটিতে অবশ্য এতসব নেই। কবিতাটির শেষে বর্ণনাকারী আবার তার বন্ধুকে
হারিয়েছে। অর্থাৎ সেই ক্ষেত্রে শূন্য হাত
অসহায়তার প্রতীক।
“সুর্যের প্রতিটি
রশ্মি সাত মিনিট পুরোনো
সুতরাং আমি যখন
আকাশের দিকে তাকাই কি আমি অতীতকে দেখি?”
আমি তখন নিউইয়র্ক
সিটিতে, আমার
এক বন্ধু বেলজিয়াম থেকে এসেছিল পদার্থবিজ্ঞান পড়তে। ওর কাছেই প্রথম জেনেছিলাম সুর্যের
প্রতিটি রশ্মির বয়স নাকি সাত মিনিট। সে আমাকে এটাও বলেছিল কবি হওয়া মানে তোমাকে
পরজীবি হতে হবে, তোমাকে
সবসময় বিভিন্ন জায়গা থেকে জানতে হবে এবং একটা জায়গায় জড়ো করতে হবে। এই ধারণাটা
আমার কাছে সত্যিই আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। আমি তাকে বলেছিলাম তার মানে তুমি আমাকে বলতে
চাইছ, আমি
সবসময় অতীতকে সন্ধান করি?
এই ধারণাটাই বোধহয় আমাকে আমার অজান্তেই “মরুভূমিতে তুষার” কবিতাটি লিখায়।
অনেকগুলো ভাবনা কবিতাটার মধ্যে আছে অ্যারিজোনা ল্যান্ডস্কেপ, সকালের দৃশ্য
এবং আমার বোনকে বিদায় জানান। আমি যে রাতে টুকসন ছেড়েছিলাম সে রাতে প্রচন্ড তুষারপাত
হয়েছিল। মরুভূমিতে তুষারপাত ব্যাপারটা সত্যিই আশ্চর্যের, আর সেকারণেই
আমার মনে হয়েছিল সমস্ত এলাকাটা মরুভূমির মত হতাশগ্রস্ত, অচেনা, অথচ আশ্চর্য
সুন্দর। কবিতাটায় একধরণের পরিবেশ সংক্রান্ত উদ্বেগ রয়েছে যেমন মহাসাগরগুলোর মৃত্যু, উপজাতির মৃত্যু, আবার অন্যদিকে
রয়েছে বোনকে ছেড়ে যাওয়া এবং আমার প্রিয় গায়িকা বেগম আখতারের মৃত্যু। অনেক আগে
যখন দিল্লীতে ছিলাম তখন প্রায়ই তাকে শুনতাম। এই একটি ক্ষেত্রে আমার মনে হত সত্যিই
বোধহয় আর কোনও আশার আলো নেই
আমার সামনে, চারধারে
যেন শুধুই নীরবতা, আর নিস্তব্ধতা।
মনে হত মাইক্রোফোনটিরও বোধহয় মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু তবুও মনে হত অনেক দুর থেকে যেন
ভেসে আসছে তার গান, তার
সুরেলা কণ্ঠের প্রতিধ্বনি,
সেই আলাপ, সেই
তান, যেন
সুরের ঝংকার। আমি বোনকে বিমানবন্দরে ছেড়ে আসবার পর মনে হয়েছিল আবার কুয়াশার মধ্যে
ঢুকে পড়েছি৷ এমন কুয়াশা যা নিখুঁতভাবে শহরটাকে বিভক্ত করেছিল। আর সেখান থেকেই লিখেছিলাম
‘কুয়াশার
স্লাইডিং-ডোর’ লাইনটি।
সেটা তো রূপক, তার
কি কখনও তুলনা করা যায়?
এটা কেবল অতুলনীয় মুহূর্তের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। বেগম আখতারের স্মৃতি আমার
সাথে দশ বছরের বেশি সময় ছিল, এবং এত বছর পরে তাকে কবিতায় প্রকাশ করার সঠিক মুহূর্তটি আমি
খুঁজে পেলাম।
“কোন কোন সময়
বৃষ্টিই কোন শহরকে স্মৃতিতে ফিরিয়ে আনে"
বৃষ্টি আমার
ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। এবং আমার মনে হয় অনেকের ওপরই প্রভাব ফেলে। একটা কবিতায়
পরিস্কারভাবে কাশ্মীরের চারটে ঋতুরই উল্লেখ করেছিলাম। শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ প্রত্যেকেই
কাশ্মীরে তিনমাস ধরে থাকে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাতাসের স্পর্শেই আপনি সেটা
বুঝতে পারবেন। আপনার চারধারের পরিবেশের মধ্যে পরিবর্তন ঘটতে শুরু করবে সেটা লক্ষ্য
করলেই বুঝতে পারবেন শরৎ আসছে। আমি প্রচুর রাগ সঙ্গীত শুনেছিলাম যা বর্ষাকে উদ্দেশ্য
করে গড়ে উঠেছে। আমি যখন সেই রাগগুলো শুনতাম তখন মা বর্ষা আর রোম্যান্সের মধ্যেকার
সম্পর্কের কথা বলতেন। মা’র কাছ
থেকেই জেনেছিলাম সে সব। এছাড়া অবশ্য আমার জানার অন্য কোনও উপায়ও
ছিল না।
কাশ্মীরে
বৃষ্টি হয় এবং কখনও কখনও সেই বৃষ্টি বন্যা পরিস্থিতিও তৈরী করে,কিন্তু দিল্লির বৃষ্টিতে যেমন অনুভূতি
হয় কাশ্মীরের বৃষ্টিতে তেমন হয় না। আমি যখন প্রথমবার দিল্লীতে গিয়েছিলাম সেটা ছিল
জুলাই মাস,বৃষ্টির
মাস। সেই প্রথম আমি অনুভব করেছিলাম বৃষ্টি কতটা রোম্যান্টিক ঋতু। অনুভব করেছিলাম কেন
প্রেমিক-প্রেমিকা এই ঋতুতে কাছাকাছি থাকতে চায়। এরপর আমি যখন অ্যারিজোনায় পৌঁছেছিলাম তখন সেখানে টানা দু’সপ্তাহ বৃষ্টি হয়েছিল, এবং বন্যাও হয়েছিল।
অ্যারিজোনার মত মরুভূমিতে সেটা ছিল অস্বাভাবিক। তবে
তারাও ওই সময়টাকে বর্ষার সময় হিসেবেই উল্লেখ করেছিল।
“লেনাক্স হিল”
এই কবিতায় কৃষ্ণের
কথা উল্লেখ করেছিলাম আমি। আসলে সে আমার ছেলেবেলার সময় থেকেই আমার সাথে জুড়ে রয়েছে।
ছেলেবেলায় শ্রীনগরে আমার ঘরে একটা ছোট্ট মন্দির বানিয়েছিলাম আমি। প্রথমদিকে এই বিষয়টি
বাবা-মা’কে জানাবার
ব্যাপারে যথেষ্ট দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম, কিন্তু যখন তারা জানলো তারা উল্টে আমাকে
উৎসাহ দিয়েছিল। তিনি আমাকে মুর্তি ও অন্যান্য উপকরণও কিনে দিয়েছিলেন। যখন আমাকে মানুষজন
মুসলিম ধর্মান্ধতা নিয়ে প্রশ্ন করে তখন আমার ঘরে মন্দির বানাতে মা আমাকে কি ভাবে সাহায্য
করেছিলেন আমি সেই গল্পটাই তাদের করি। এবং জিজ্ঞেস করি আপনি কি এরকম করতে পারবেন?
এই যে দেশ ভাগ, হিন্দু-মুসলিম, মুসলিম-হিন্দু...
মানুষের মধ্যে এই যে বিভাজন এটাকে আমি কতটা ঘৃণা করি তা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন
না। এসব আমাকে অসুস্থ করে দেয়। আমার মনে হয় রান্না-বাড়ি, জামা-কাপড়, সঙ্গীত এসব নিয়ে
মানুষ কেন খুশি থাকতে পারে না? তবে বিদেশ হলেও কমপক্ষে এখানে আমরা একটা জায়গা তৈরী করতে পেরেছি
যেখানে ভালো জিনিসগুলোর
কারণে আমরা সবাই একত্র হতে পারি।
“প্রতিটি দিনই
কোনও না কোনও পরিবারের কাছে কাশ্মীর হয়ে ওঠে
কারবালা”
কারা হোসেন, কারা এজিদ বাহিনী
সেটার থেকেও আমার কাছে কারবালা যুদ্ধের পেছনেও যেমন অনেকগুলো কারণ রয়েছে, নির্দিষ্টভাবে
একটি কারণকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। যেমন অনেক মতভেদ রয়েছে।তেমনি কাশ্মীরের আজকের পরিস্থিতি তৈরী হবার পেছনেও
রয়েছে একাধিক কারণ,
ভিন্ন ভিন্ন মত। আর এই জায়গাতেই উভয়ের মধ্যে অদ্ভুত একটা মিল পাই আমি। উভয় ক্ষেত্রে
একটাই কমন ফ্যাক্টর ― ক্ষমতা
দখল। মহম্মদের মৃত্যুর পর কে হবেন তাঁর উত্তরাধিকার তথা খলিফা অর্থাৎ ইসলাম রাষ্ট্রের
প্রধান তা নিয়ে তীব্র কলহ শুরু হয় তাঁর শিষ্যদের মধ্যে। যার নিষ্পত্তি হতে সময় লেগেছিল
তিন দিন। সেই তিনদিন তাঁর দাফন-কাফন পর্যন্ত বন্ধ ছিল। কিন্তু তারপরও যাকে মহম্মদের
স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল
অর্থাৎ ইসলাম সাম্রাজ্যের খলিফা মনোনীত করা হয়েছিল, সেই আবুবকরকে
অনেকেই মেনে নিতে পারেনি বিশেষত মহম্মদের কাকাতো ভাই নিজের জামাই আলি এবং তাঁর মেয়ে
ফতেমা। প্রকৃত অর্থে তখনই পোঁতা হয়ে গিয়েছিল কারবালা যুদ্ধের বীজ, যা পরে নানা
ঘাত-প্রতিঘাতে প্রকান্ড বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছিল। ঠিক একইরকম পরিস্থিতি কাশ্মীরের ক্ষেত্রে
এর বিষবৃক্ষটা পোঁতা হয়েছিল যে দিন দেশ ভাগ হয়। সেই শুরু টানাপোড়েনের...কাশ্মীর
কোন দিকে যাবে ভারত না পাকিস্তান? কার দখলে যাবে? কে করবে শাসন? অনেকটা আলি বনাম
আবুবকরের মত। আর কাশ্মীর হল সেই সাম্রাজ্য।
“সাংস্কৃতিক মুসলিম” এবং “ধর্মনিরপেক্ষ
মুসলিম’’
নিজের সম্পর্কে
এই শব্দ দুটো ব্যবহার করার কারণে কেউ কেউ আমাকে প্রশ্ন করেন আমি কীভাবে মুসলিম? আমি নিজেও ভেবেছি
আমি কিরকম মুসলিম? কতটা
মুসলিম? কাশ্মীরে
একটা মুসলিম পরিবার হিসেবেই আমাদের পরিচিতি ছিল। তার ওপর মুসলিম পরিবেশেই বড় হয়েছি।
আমাদের আঘা পরিবার কয়েক
প্রজন্ম ধরে কাশ্মীরেই রয়েছে। আমার পূর্বপুরুষরা ছিলেন রাজবৈদ্য। তারা মন্ত্রী বা
অন্য পদাধীকার বলে মহারাজদের সরকারে ছিলেন। কিন্তু ধর্ম আমাদের বাড়িতে কখনও বড় বিষয়
ছিল। তবে আমি একজন মুসলিম কারণ আমার জন্মের
সঙ্গেই সেটা জড়িয়ে। রাজনৈতিক ভাবে আমি নিজেকে একজন মুসলিম হিসেবেই মনে করি। আর সেটা
আমেরিকায় পৌঁছনোর পর আরও বিশেষভাবে
উপলব্ধি করতে পারি। কারণ সেখানকার মিডিয়া ইসলামকে এতটাই অন্যায়ভাবে চিত্রিত করেছে
যে আমার কাছে সেটা বর্ণবাদ বলে মনে হয়েছে। আবার আমিই সেই মুসলিম যে বাইবেলকে সাহিত্য
হিসেবে ব্যবহার করেছি। বাইবেলে এমন কতগুলো বাক্য রয়েছে যা অত্যন্ত সুন্দর, যা আমাকে ভীষণ
ভাবে নাড়া দেয়। আমি যীশুর পুনরুত্থানের ধর্মীয় তত্ত্বগুলো মোটেই বিশ্বাস করি না
কিন্তু বাইবেলে ব্যবহৃত phrase
যেমন “এবং
যীশু কাঁদলেন” এই ধরণের
বাক্যাংশ আমার পছন্দের। এটাই বোধহয় সত্যের সরলতা। ঠিক পপ গানেও এমন কতগুলো লাইন
পাওয়া যায় যা আমাকে আকৃষ্ট করে। যদিও এমন উদাহরণ দেওয়া ঠিক নয় তবু ও এলভিস প্রিসলির
“হার্টব্রেক
হোটেল’এ এমনই
একটি লাইন আছে... আমি সেই একাকিত্বকে পেয়েছি যার জন্য আমি মারা যেতে পেরেছি৷ বা “সাইকো কিলার” নামে আর একটা
গান আছে যেখানকার একটা লাইন হল "আপনি
যতটা জানেন তার চেয়েও দুঃখিত আমি।" যীশু
বা বাইবেল সম্পর্কে বলার পর প্রশ্ন উঠতেই পারে আমি কি যীশুকে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে
মনে করি? তিনি
কি সত্যিই পৃথিবীতে এসেছিলেন? আমি বিশ্বাস বা অবিশ্বাস
কোনোটাই করি না। আমার কাছে পর্যাপ্ত কোনও তথ্যই নেই। আমি যদি ঐতিহাসিকভাবে ধরে নি যীশুর মত
ব্যক্তিত্ব ছিল, তবে
তার অস্তিত্ব ছিল কি ছিল না, সেটা আমার কাছে অপ্রাসঙ্গিক। তার থেকেও বড় কথা মানুষ কি বিশ্বাস
করে। মহম্মদকে শেষ নবী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আবার খ্রীষ্টানরা বিশ্বাস করে যীশু
ঈশ্বরের পুত্র। খ্রষ্টান, মুসলিম, ইহুদী প্রত্যেকের
ঈশ্বর পৃথক কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়টি হল প্রত্যেকেই কেয়ামতের সেই দিনটির অপেক্ষায়।
যাইহোক আমি কিসে বিশ্বাসী আমি যখন নিজেকে জিজ্ঞেস করি, আমার উত্তরটা
হল আমি নাস্তিক। আসলে আমি মনে করি একটা মানুষের ভেতরের সংস্কৃতি শুধু নির্দিষ্ট কোনও ধর্মের ভিত্তিতে তৈরী হয় না। যেমন আমি, আমার ভেতরের
সংস্কৃতি তৈরীর জন্য হিন্দু, মুসলিম, পাশ্চাত্য সমস্ত সংস্কৃতির কাছেই আমি ঋণী। আমার আবেগ, চিন্তা-চেতনা, আমার ভেতরের
আমিকে এরা সকলে মিলেই গড়ে তুলেছে। আমার অজান্তেই এই সমস্ত সংস্কৃতির এক একটা অংশ আমার
ভেতর বাস করছে। এর জন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আর এই কারণেই আমি আমার কবিতায়
গ্রীক পুরাণ, মুসলিম
রূপকথা, হিন্দু
পুরাণ ব্যবহার করতে পারি। প্রত্যেককেই আমার নিজের
বলে মনে হয়। সহজাত বলে মনে হয়। এগুলো ব্যবহার করবার জন্য আমাকে কখনও আলাদা করে চর্চা
করতে হয়নি। আমার জীবনচর্চার মধ্যে দিয়েই আমি এগুলোকে রপ্ত করেছি।
exile বা নির্বাসন
এই শব্দটা আমার
মাথার ভেতর ঘুরে ফিরে আসে। শব্দটার মধ্যে অদ্ভুত একটা সংবেদনশীল বিষয় রয়েছে আবার
শব্দটা যতটা রাজনৈতিক ততটা সাংস্কৃতিকও বটে। নির্বাসনের আবার নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক মুহূর্ত
রয়েছে। আমার আগ্রহের বিষয়। প্রকৃত ভাবে দেখতে গেলে আমি নির্বাসিত নই, আমাকে জোর করে
আমার জায়গা থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়নি। সেকারণে আমি নিজের ক্ষেত্রে প্রবাস শব্দটি
ব্যবহার করি। আমি যখন নির্বাসিত শব্দটা ব্যবহার করি আসলে তখন একটা সম্পূর্ণ নতুন ভূগোলের
কথা বলি, একটা
নতুন ধরণের সংবেদনশীলতার উপলব্ধি হয়। আরও একটা বিষয় হল আমি যখন নিজের দেশে ইংরাজীতে
লিখতে শুরু করি তখনই ভাষার কারণে আমি নির্বাসিত হয়েছি। তবে আমি কাশ্মীর থেকে দিল্লী, দিল্লী থেকে
পেনসিলভেনিয়া, পেনসিলভেনিয়া
থেকে অ্যারিজোনা, অ্যারিজোনা
থেকে আবার অন্যত্র.. সারা জীবন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছুটে বেড়িয়েছি। হয়ত
নিজের সম্পর্কে মিথ তৈরী করবার জন্যে অথবা রোম্যান্টিকতা থেকেও হতে পারে আমি এই শব্দটা
ব্যবহার করেছি।
আমি যখন একাকী
নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি আমার মনে হয় আমার কোথাও ঘর নেই, বসত নেই। কিন্তু যেই মুহূর্তে আমি মানুষের
সঙ্গে থাকি আমার মনে হয় আমি ঘরে আছি। আমি আসলে মানুষের সাথে থাকতে ভালোবাসি, আনন্দ করতে, হই-হুল্লোড়
করতে ভালোবাসি।
গজল ও বেগম আখতার
হ্যাঁ, এটা ঠিক গজল
আর বেগম আখতারকে জড়িয়ে আমাকে নিয়ে গল্প রয়েছে। আর সেই গল্পগুলোর অনেকটাই সত্যি।
আমি বেগম আখতারকে আজও ভালোবাসি।সেই ভালোবাসায় কতটা যৌনতা ছিল তা আমি জানি না, এমনকি সেটা কী
ছিল সেটাও বলতে পারবো না আমি। তবে সেই সময়টা আমি তার কথা শুনতে, তার সাথে থাকতে
ভীষণ ভাবে চাইতাম। আমি কিছুতেই তার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারছিলাম না। সেটা
কেমন ছিল আপনারা নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারছেন। আমি তখন কিশোর, আমার বয়স মাত্র
ষোল, আমি
কিছুতেই তার থেকে দুরে থাকতে পারছিলাম না। আসলে এই যে সঙ্গীত নিয়ে গজল নিয়ে আমার
যত ভাবনা এটা আমি পেয়েছি আমার মায়ের কাছ থেকে। আমার মা সুফিয়া নোমানি জন্মসূত্রে
ছিলেন উত্তরপ্রদেশের রদৌলির বাসিন্দা। তিনি এমন এক পরিবার থেকে এসেছিলেন যে পরিবার
সুফি ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। আমি মনে করি এই সংযোগটা আমার জীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত
করেছে। আমার জীবনে সুফির একটা প্রভাব আছে।
বেগমের কথায় ফেরা যাক। বেগমের বংশ সম্পর্কে ধোঁয়াশা থাকা সত্ত্বেও
তার সৌন্দর্যের খ্যাতি এতটাই ছিল যে তিনি লক্ষ্ণৌয়ের বিশিষ্ট মুসলিম পরিবার থেকে বিবাহের
প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারটি যথেষ্ট রক্ষণশীল থাকার কারণে তারা শর্ত দিয়েছিলেন
বেগমকে গান গাওয়া ছেড়ে দিতে হবে। কোনও মঞ্চ
বা অনুষ্ঠানে গান গাওয়া যাবে না। বেগম অর্থাৎ আখতারিবাঈ ফাইজাবাদি সেটা মেনেও নিয়েছিলেন
কিন্তু এর পরে পরেই বেগমের মা মারা যান। এবং বেগম এতটাই ভেঙে পড়েন যে তাঁকে শেষ পর্যন্ত
ডাক্তার দেখাতে হয়। ডাক্তার বলেন একমাত্র গানই পারে বেগমকে আবার আগের অবস্থায় ফেরাতে, এরপরই তার স্বামীর
পরিবার তাঁকে আবার গান করবার অনুমতি দেয়।
আমি তখন দিল্লীতে, সময়টা বাংলাদেশের যুদ্ধের সময় একদিন
রাতে ইলেকট্রিক চলে গেছে,
সম্ভবত সাইরেন বাজছিল এলার্ট করবার জন্য শত্রুপক্ষের যুদ্ধ বিমান যেকোনো সময় ঢুকে পড়তে পারে, হঠাৎই দুর থেকে
কানে ভেসে আসলো বেগমের গান। মৃত মাইক্রোফোনের সামনে গেয়ে চলেছে বেগম... কোথাও কোন
অডিয়েন্স নেই, হাততালি
নেই কিন্তু বেগম গেয়ে চলেছে। হঠাৎই সম্বিত ফিরলো আমার মনে পড়লো বেগম তো আমাদের
ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু সত্যিই কি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে? কেন তবে আমার
এখনও বোধ হয় আমি ছুঁয়ে আছি তার হাত, আমাকে ঘিরে রয়েছে তার ফিরোজা রঙের শাড়ি।
আমি শুনতে পাই তার গান “এখানে তোমরা
থেকে যাবে শুধু আমি ছাড়া", আমার জীবনে বারবার ফিরে আসে সেই মাতাল রাত, যে রাতে সে আমাকে
জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, “শহীদ, আমি মরতে চাই’’ বেগমের কথা ভাবতে
ভাবতে আজও আমি ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারি। বেগমই আমার সুফিসত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলার সেই মায়া যাকে অনুভব করতে হয়, যা এক পরাবাস্তব।
অনেক তো কথা হল,অনেক কথাও রয়েও গেল বাকি। কিন্তু কী আর করা যাবে ?খেলা তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে, এক্সট্রা টাইম
কতই আর টেনেটুনে বাড়ানো যায়। গ্যালারিও তো ফাঁকা হতে শুরু করেছে। তার ওপর ওয়ার্ড
বয়রাই বা আমার জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করবে ? ওই দেখো
বন্ধুরাও ফুল হাতে অপেক্ষায় এবার তো উঠতেই হয়... খুব আনন্দ হচ্ছে, কতদিন পর বেগমের
সঙ্গে দেখা হবে, আবার
আমার জীবন ভরে উঠবে গজলে। ও, আমার আমাকে লেখা এই চিঠিটা দিয়ে গেলাম...আমি চলে যাবার পর পড়ে দেখো, জানবে কতটা দুঃখ
নিয়ে আমাকে চলে যেতে হচ্ছে.. আমার কাশ্মীরটার কী হবে
কে জানে? আমি
তো পারলাম না পারলে তোমরা একটু দেখে রেখো। বন্ধু
বিদায়...
"প্রিয়
শহীদ,
অনেক দূর দেশ
থেকে তোমায় লিখতে বসেছি। যা আমার থেকে সত্যি অনেকটা দূর। যেখানে তুমি আর আসবে না। যেখানে
প্রত্যেকে নিজের পকেটে নিজের ঠিকানা বহন করে
যাতে করে কমপক্ষে তার দেহ বাড়িতে পৌঁছতে পারে।
আমাদের শহরের
অলিগলিতে সবসময় গুজব ঘুরে বেড়ায়। ওরা এসে বলে: সারা রাত পুরুষদের বাধ্য করা হয়েছে
বরফ জলে দাঁড়িয়ে থাকতে। মহিলারা সকলে একা, অপেক্ষারত। সৈন্যরা সমস্ত রেডিও-টেলিভিশন ধ্বংস করেছে। তারা খালি হাতেই আমাদের ঘরগুলো টুকরো টুকরো
করে ফেলছে।
তুমি নিশ্চয়ই
শুনেছ রিজওয়ানকে হত্যা করা হয়েছে। রিজওয়ান জন্নতের দ্বাররক্ষী। তার বয়স মাত্র ১৮।
গতকাল হাইআউট ক্যাফেতে (সকলে তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিল) একজন চিকিৎসক বলছিলেন, (যিনি ইন্টারোগেশন
কেন্দ্র থেকে মুক্তি পেয়ে একটি ১৬বছরের ছেলের চিকিৎসা করছিলেন) আমি ভাগ্যবানদের জিজ্ঞেস
করতে চাই, তাদের
ভাগ্যরেখায় এমন কি কিছুর প্রকাশ ঘটেছে যাতে তাদের হাতের জালগুলি একটি ছুরি দিয়ে কাটা
হবে?
আগামীকাল আমার
ভাইয়ের কাছে এই চিঠি পৌঁছবে, সে দক্ষিণে থাকে। তার কাছে পাঠানো হচ্ছে
যাতে তোমার কাছে পৌঁছানোর জন্য সে চিঠিটা
পোস্ট করতে পারে। এখানে কেউ আমাকে একটা ডাকটিকিটও জোগাড় করে দিতে পারলো না। আজ পোস্টঅফিসে গিয়েছিলাম, নদীর ওপারে। সেখানে দেখলাম অসংখ্য বিলি
না হওয়া চিঠির ক্যানভাস ব্যাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে, তার মধ্যে হঠাৎই
দেখলাম তোমাকে লেখা চিঠিটা। সে কারণে আমি ভাবনাটা পালটাতে বাধ্য হই। আমার মনে হয়েছে
চিঠিটা এমন কারো কাছ থেকে এসেছে যার কাছ থেকে তুমি খবর পাবার জন্য আগ্রহী।
এখানকার সব কিছুর
মতই আমরা সবসময় তোমার সম্পর্কে কথা বলি। তুমি কি তাড়াতাড়ি ফিরবে? তোমার জন্য
অপেক্ষা করা বসন্তের অপেক্ষার মত। আমরা অপেক্ষায় বাদাম ফুল ফোটার। কবে ফিরবে সেই শান্তির
দিনগুলো? যখন
আমরা সবাই প্রেমে পড়েছিলাম, বৃষ্টি ছিল আমাদের
সর্ব সময়ের সঙ্গীর মত।"
কবিতা
অনুবাদ : সোহেল
ইসলাম
কোনও এক পোস্ট অফিসহীন দেশে
১.
আবার ফিরেছি
এই দেশে
উঁচু উঁচু
মিনার
মাটির প্রদীপে
সরষের তেলে
সলতে ভিজিয়ে
রাখার দেশে
যেখানে প্রতিটা
রাত
স্ক্র্যাচ
নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বার্তা বহন করে বেড়াচ্ছে–এই গ্রহে
আঙুলের ছাপ
বাতিল করেছে ব্যাংকের স্ট্যাম্পগুলোকে
সাজাপ্রাপ্ত
সেই অক্ষরগুলোর বর্তমান ঠিকানা
পোস্ট অফিসের
পেছনের ওই সংরক্ষণাগার
এখানে প্রতিটা বাড়ি হয় কবরের মত চুপ
হয়ে আছে
নয়ত একদম খালি
খালি ?
কত কে পিঠ
বাঁচিয়ে পালিয়েছে
জীবন হাতে
নিয়ে পালিয়েছে কত কে
সমভূমিগুলো
শরণার্থীতে ভরে উঠেছে
এখানেই যে
তাদের চূড়ান্ত পতন নিশ্চিত
পর্বতমালা বরফে বরফময়
কাঁচের মত চকচকে হয়ে আছে
যা দিয়ে তারা দেখতে পাবে
আমাদের খোলা কবরগুলো
সেনারা এসে
যখন আমাদের পৃথিবীটাকে
কাগজের ঠোঙার মত পোড়াতে আরম্ভ করল
তখন পর্বতের গুহাগুলোই আমাদের বেঁচে
থাকার আশা জুগিয়েছিল
দূর থেকে দেখলে
প্রথমে সোনার সাজই মনে হবে
কাছে গেলেই―ছাই আর ছাই
যেদিন মুয়াজ্জিনকে
মারা হল
সেদিনই শহরজুড়ে
লুটপাট
ঝাড়ু দিয়ে
জড় করা শুকনো পাতা পোড়ানোর মত করে
আগুনে ছারখার
হল ঘরবাড়ি
যা আর বাড়ি
বলে ডাকা যেতে পারে না
আমাদের বিশ্বাস
অটুট
আগুনের ঢেউ
পার করে
পোড়া কাঠের কঙ্কালের সামনে আজও বিছিয়ে
আসি ফুল
আর তাকিয়ে থাকি অন্ধকারের গুহার দিকে
ওটাই আমাদের বেঁচে থাকা
২.
রাস্তায় পড়ে থাকা এক পোস্টকার্ড বলে
উঠল―
"আমরা আগুনে বসে
অন্ধকারের
খোঁজ করছি"
রক্তের স্রোত চাই,স্রোত
যেখানে তোমার
হাত চুবিয়ে দিতে পারি
শীতে জমা
বৃষ্টি দোয়াতের কালি না হয়ে ওঠা পর্যন্ত
যেন নিজেকে
শেষ করতে পারি
সারারাত ধরে
ডাকটিকিটে
রাবার স্ট্যাম্পের ছাপ মারতে মারতে
আঙুলগুলো
ব্যথায় গুটিয়ে আসছে এবার
একটা দেশ পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে
মন তো তার ভাঙবেই
পাগল হতাশ গাইড এভাবে তো কথা বলবেই
শুনেছি
প্রার্থনায় বেঁচে আছেন তিনি
তাকে খুঁজতেই
এই বৃষ্টিতেও ফিরেছি আমি
সঙ্গে করে এনেছি
নতুন নতুন নকশা করা কাগজের নোট
বিরল স্ট্যাম্প কিনব এবার
যেখানে কোনও জাতির নাম থাকবে না
শুনেছি
বাড়িটাকেও তার সঙ্গেই দাফন করা হয়েছে
প্রদীপ ছাড়া
তাকেই খুঁজতে বেড়িয়েছি
বেঁচেও তো থাকতে পারে
ধোঁয়ার দরজা ঠেলে
অন্ধকারের মধ্যে নিঃশ্বাসে ছাই উড়িয়ে
তাই তো খুঁজতে আসা
"সব শেষ,অবশিষ্ট বলে কিছুই নেই আর"
নীরবতাকে
আমি আয়না বলেই ডাকি
কণ্ঠস্বর
তো সেখানেই ধাক্কা খেয়ে নির্দেশ হয়ে ফিরে আসে
এখানে আগুন ঢেউয়ের নদী
আমি কীকরে পার করি তাকে ?
এখানে প্রতিটা ডাকঘর কাঠের তৈরি
নকশাকাটা পার্চমেন্ট কোথায় পাবো ?
আর কেই বা
লিখে লিখে কারাগারে পৌঁছে দেবে আমার খবর ?
কেবল নীরবতাই
পারে এ কাজ
মুখ বুজে
চিঠিগুলো মৃত ডাকঘরের ডাস্টবিনে
অথবা তার
হাতে পৌঁছে দিতে
৩.
" হারিয়ে যাওয়া পুরো মানচিত্রটাই মোম
বাতির মত জ্বলছে
মুয়াজ্জিন
খুন হওয়ার পর থেকে
আমিই সামলাচ্ছি
এই মিনার
আপনারা আসুন
আমি তো বেঁচে
আছি
আলোর বিরুদ্ধে
বুক চিতিয়ে নকশাকরা বাহারগুলোও আছে
তবে তারা
কখনও সাদা
আবার কখনও
বা কালো ― এই যা
চূড়ান্ত শরতের দেশে
আঠালো ভেজা পিঠ নিয়ে ফুটে উঠছে সে
গভীর রাতেই তা শুধু অনুভব করা যায়
আসুন
আমি খুন হয়ে যাওয়ার আগে
আমার কণ্ঠস্বর দমিয়ে দেওয়ার আগে আসুন "
অন্ধকারের মত বৃষ্টি নামছে চারপাশে
এই তো সময়
মিথ্যে মিথ্যে হলেও
হাতে হাত রাখুন
বিশ্বস্ত থাকুন নিজেদের কাছে
একটাই তো যন্ত্রনা আমাদের
অনুভব করুন
অনুভব আপনাকে করতেই হবে
না হলে যে
"কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না"
আমি স্পষ্ট
দেখতে পাচ্ছি ―
"এই তো সেই শব্দের অস্থিকলস
আমার মধ্যে
আপনি শব্দ খুঁজে পাচ্ছেন
আপনার মধ্যে
আমি
জলদি আসুন
খুলুন এই
অদৃশ্য খামের ডালি"
এই মিনারে পৌঁছে
আমিও আগুনের মধ্যে অন্ধকার খুঁজে পেয়েছি
এই যন্ত্রনা আপনার আমার
এই যন্ত্রনা সকলের
অনুভব করতেই হবে
বিশ্বাস রাখুন নিজের উপরে
নিজের পাগলামির উপরে
সব মাটির প্রদীপেই তেল ভরছেন তিনি
স্ক্র্যাচ হাতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে
বার্তা বহন করে চলেছেন গ্রহে
তার হাতের রাবার স্ট্যাম্প
ডাক টিকিটের উপরে ছাপ মেরে চলেছে
এই তো তার সংরক্ষণাগার
আমি শুনতে পাচ্ছি
অনুভব করতে পারছি তাকে
এই তো তার সাধের মানচিত্র
যার কোনও সীমানা থাকবে না
৪.
পড়েছি চিঠিগুলো
আমি,প্রেমিকদের চিঠি ওসব,পাগল করা
কিন্তু হায়,একটারও উত্তর আসেনি আমার কাছে
শেষমেশ আমি
নিজেই প্রদীপ জ্বালিয়ে উত্তর লিখেছিলাম
প্রার্থনায়
বসেছিলাম
মহাদেশ জুড়ে
বধিরতার ধ্যান ভাঙাবো বলে
আমার বিলাপ
আমার চিৎকারের মতই অগুনতি
চিঠির মৃত অক্ষরের মত আমার চিৎকার
পৃথিবীর চারধারে ছড়িয়ে পড়তে চায়
যে পৃথিবীর শেষ পরিণতি
দোর গোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে
আমার শব্দেরা বৃষ্টির ধারা বিবরিণীর
মত
মহাসাগরের ঢেউ পার করে
ছুটে চলেছে
ঠিকানায় ঠিকানায়
আমি এসব বৃষ্টির মধ্যেই লিখে চলেছি
আজ আর কোনও প্রার্থনা নয়
শুধুই চিৎকার, আর চিৎকার
যা আমাদের
গলায় বসিয়ে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে
আজ সেই চিৎকারই
আমাদের পরিচয়
যাদের চিঠি
জুড়ে এই চিৎকার
তাদেরও বন্দী
করা হয়েছে কারাগারের ওপারে
এখানে প্রতিটা
রাত
মিনারের মত
মাথা উঁচু করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে
আমিই তার
গাইড
আমার ছায়া
মেঘের মত দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে
এক সর্বহারার
সামনে
যার চিৎকার
ভেসে আসছে দূর থেকে
সে যেন বাতাসকে
ঘুষ দিয়ে নিঃশ্বাস কিনতে চাইছে
চাইছে অন্ধকার
থেকে বাঁচতে
কিন্তু হায়
সেখানে যে
কোনও সূর্য নেই
তার জন্য
কোনও সূর্য নেই এই দুনিয়ায়
আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি
এ কষ্ট কোথায় রাখি ?
আমাকে চিৎকার
পাঠাও
যেভাবে,যতরকমভাবে পাঠানো যায়
একটা চিঠি
পেয়েছিলাম একবার
যা কিনা এক
জেলবন্দী প্রেমিকের
শুরুটা এরকম
―
"এই শব্দেরা কোনোদিনই তোমার কাছে
পৌঁছবে না"
শেষে ―
"তোমাকে ছাড়াই এ শরীর শিহরিত, শিশিরের ছোয়ায়"
উত্তরে লিখতে
চেয়েছিলাম ―
সারাটা জীবন
রেখে যেতে চাই,কিন্তু কীভাবে ?
যখন লিখছি
এ কথাগুলো
ধুম বৃষ্টি
নামছে মেঘ ছুঁয়ে
পাগল,এবার তো সাহসী হও
কবিতার অনুবাদ : সোহেল ইসলাম
বাঃ।এক ভিন্ন পাঠ অভিজ্ঞতা হল। ধন্যবাদ।
ReplyDeleteঅসাধারণ৷ কী যে ভালো কাজ।।
ReplyDeleteবড় ভালো কাজ হচ্ছে। সোহেল ও সুদীপ্তকে ভালোবাসা।
ReplyDeleteবড় ভালো কাজ হচ্ছে। সোহেল ও সুদীপ্তকে ভালোবাসা।
ReplyDelete