।। বাক্ ১৪৩ ।।রিগ্যান এসকান্দার ।।




রিগ্যান এসকান্দার

মানুষ

চোখ বন্ধ করেও যা দেখা যায়, তাকে দৃশ্য বলে, 
যখন তুমি নিজে অরণ্য।

মুখ বন্ধ করে যা বলা যায়, তাকে বক্তব্য বলে, 
যখন তুমি নিজেই কথা। 

নাক বন্ধ করে যে ঘ্রাণ পাওয়া যায়, তাকে সুবাস বলে, 
যখন তুমি নিজেই পুষ্প।

কান বন্ধ করেও যা শোনা যায়, তাকে সুর বলে, 
যখন তুমি নিজে সঙ্গীত। 

সুতরাং দৃশ্য, বক্তব্য, সুবাস ও সুর বুঝতে 
নিজেকে অরণ্য, কথা, পুষ্প, সঙ্গীতে উত্তীর্ণ করো।

তবেই আমি তোমাকে বলব মানুষ।


ফেরিওয়ালা 

সেই দুপুরটার কথা মনে পড়ে। বাড়ির সামনে দিয়ে 'চুড়িমালা', 'চুড়িমালা' বলে হাঁকিয়ে চলে যাচ্ছিল যে ফেরিওয়ালা, সুফিয়াখালা আমাকে বলেছিল,' যা তো ডেকে নিয়ে আন।' ডেকে আনার পর, এমটি সোনার বালাগুলো পাল্টে পাল্টে পরখ করে দেখছিল সুফিয়াখালা। এ দৃশ্য দেখার পর, আমার কেন জানি ক্রেতা নয়, বিক্রেতা হতে ইচ্ছে করেছিল। আমার বিক্রেতা হওয়ার গোপন ইচ্ছেটা কেমন করে সেদিন যেন ধরে ফেলেছিল সেই ফেরিওয়ালা। তাই যাবার সময় নিজের দেহের ভেতর আমাকে পুরে নিয়ে চলে যায় সে। 

তারপর আর কোনো দিন ফেরত আসিনি সেই ফেরিওয়ালা। আমি কত দিন সুফিয়াখালার হাতের বালার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভেবেছি - 'চুড়ি নেবেন, চুড়ি নেবেন' বলে আবার কবে আসবে সেই ফেরিওয়ালা, আর আমাকে ফেরত দিয়ে যাবে কোনো এক শৌখিন দুপুরে।


জন্ম

বিকেলে সুফিয়াখালা বসে বসে রবীন্দ্রনাথ পড়ছিল। এত মনোযোগ সহকারে পড়ছিল যে দেখে মনে হচ্ছিল বইয়ের ভেতর ঢুকে গেছে। এই ভেবে তাকে খুঁজতে আমিও বইয়ের ভেতর ঢুকি। কিছু দূর এগোতেই রবীন্দ্রনাথের প্রহরীরা আমাকে আটকে দেয়। বলে, এখানে থামো বালক। ভেতরে গুরুদেব এক নারীর সাথে কথা বলছেন।

সুফিয়াখালাকে রবীন্দ্রনাথ কী বলতে পারেন, এ কথা ভাবতে ভাবতেই কেটে যায় আমার কৈশোরকাল।  আর ভাবনাগুলো লিখতে লিখতেই আমি এসকান্দার হয়ে উঠি।  এবার কি সুফিয়াখালা ঢুকে যাবে আমার রচিত গ্রন্থে; আর হে নতুন কিশোর, তোমার পথ কি আটকে দেবে এসকান্দারের প্রহরীরা?

No comments:

Post a Comment