জুন-জুলাইয়ের কাব্যচর্চা
পৌলমী গুহ
আমার আষাঢ়-শ্রাবণ নেই। কেন নেই একথা আমি ভেবে উঠতে পারিনি। এরকমটা প্রায়শই হয়। কিছু জিনিস ভেবে রাখবো ঠিক করা
থাকে; পরে আর ভাবা হয়ে ওঠে না। যেমন সকালে চায়ের কাপটা দেখে
ভেবেছিলাম দুধের গন্ধ ভালো লাগে না, তবু দুধ-চা খাই কেন? পুরোটা ভাবা
হয়নি আর।
জুন আর জুলাই দুই ভাইয়ের মতো। কলকাতা যাওয়া হয়নি আর। কোভিড বলে আচমকা জুজুটিকে বুড়ো
আঙুল সম্ভবত লোকে দেখাতেই চেয়েছিলো, সুযোগ মিললো না। আমারও কলকাতা ফেরা হলো না। কলকাতার বর্ষা বড়ো ভয়ানক। কিন্তু অন্য সব ঋতুর মতো বর্ষাও কলকাতাকে আদর করে অন্য
মাত্রায়। তীব্র গরম। গরমে মাথা ঝাঁ ঝাঁ না করলে আমের
স্বাদ পানসে লাগবে না?
কিন্তু বর্ষার কলকাতা দেখতে
ইচ্ছে করে। গাড়ির কাঁচে
জল কেমন ভেঙে যায়। যে রাস্তা
কখনোই খালি থাকে না, তাও বর্ষার
দুপুরে কেমন ফাঁকা।
তখন অঞ্জনের গান বাজে, "একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে…" নাহ!
দেখা কারোর সঙ্গেই কারো হয়ে ওঠে না। কলকাতা ভারী আজব শহর। অথবা প্রতিটি শহরই আজব, তার নিজের নিজের মতো। আমি কলকাতাকেই ভালোবাসি। তা এহেন কলকাতায় কারো সঙ্গেই দেখা হয়ে যাওয়ার মতো
কাকতালীয় ঘটনা ঘটে উঠতে পারে না। অন্তত আমি দেখিনি।
কলকাতার জুন-জুলাই মেঘলা আকাশ টিপটিপে বৃষ্টিতে প্রিন্সেপ ঘাটে বসে থাকলে
মনকেমন হতে বাধ্য। কেন প্রিন্সেপ ঘাট? আমি জানি না। মনে হলো তাই। না গেলেও ক্ষতি নেই!
আমাগো দ্যাশের বাড়িতে এতো ভদ্র
বৃষ্টি পড়ে না। বৃষ্টি ধরেও
না। নীচু জমি হলে
একঘন্টার বৃষ্টিতে এক হাঁটু জল জমা হয়। চাষের জমিতে কালো চকচকে শরীর নিয়ে সাপ সাঁতরে যায়। লোকজন ভয় পায় না। পেয়ে কি হবে? মনসার জীব।
নারকেল টারকেল, ডোকলা এসব পড়ে যায়। সুপারি গাছের পিছল ভেজা ভেজা গা, জোঁক আর কেঁচো তো আছেই। ব্যাঙ ঘরে চলে আসে। সন্ধ্যায় ধুনো দেখালে ভেজা জোলো বাতাস কেমন ভারী হয়ে
থাকে। সারাদিন ভেজা
ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে। জামাকাপড় ঘরে বারান্দায় কেমন
গন্ধ ছড়ায়। আর তখনি ছপ্
ছপ্ করে মাছ ধরতে যাওয়ার লোকগুলো রাস্তা পেরোয়। প্রতিবছর মনে হয় এই বাঁধ ভাঙলো বুঝি, কিন্তু বাঁধ বহুবছর আগেই একবার ভেঙেছিলো। কোনোও বাঁধই বছর বছর ভাঙে না
বোধহয়! ভাঙো ভাঙো হয় স্রেফ…
কলতলায় গাদাখানেক শ্যাওলা জমে
থাকে। ডাঁই করা বাসন,ক্ষয়াটে হাত। এই বর্ষার সঙ্গে মানানসই মলিন শাড়ী। উনুনে ভিজে কাঠ। ভাত হতে দেরি হয়ে যায় কেবল।
কলকাতায় ফিরে এলে আকাশের স্লেট
ছলোছলো। ব্যালকনি জুড়ে
ভেজা হাওয়া। বোধহয় অফিসফেরত
কোনোও গাড়ির চকিত দীর্ঘশ্বাস মেশানো। জল জমে গেলেই মিউনিসিপ্যালিটির মুন্ডুপাতের রাইট। একেই কি বাকস্বাধীনতা বলে? উঠোন সব বাড়িতে নেই। হলেও বাঁধানো তো। ইট ফেলে ফেলে যাওয়ার রাস্তা পাই না।
অটোতে ভেজা ত্রিপল, চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে সব ঝাপসা লাগে। এক বছরের পুরোনো দুঃখ এখন বোঝার
মতো লাগে।
একটা বই লিখে ফেলার তাগাদা আসলে
ভালো হতো। মহামারী হিসেব
গুলিয়ে দিচ্ছে। ফিরতি ট্রেনে
উঠবো না মেট্রোর ভিড়ে? ঘামের সঙ্গে
ফোঁটা ফোঁটা জুলাইয়ের কান্না? গাড়ি এতোক্ষণে বাড়ির রাস্তায়
পৌঁছে গেছে বোধহয়। ভুলে যাচ্ছি কি কিছু?
নাহ্! জুন জুলাইয়ের কলকাতাতেও দেখা হয় না...
ভালো লাগল
ReplyDeleteবাঃ খুব ভালো লাগলো...মন দিয়ে দু'তিনবার পড়লাম...
ReplyDelete