চিত্র রচনা
: বিজয় দাস
|
অনুসরণমঙ্গল
শুভংকর গুহ
১
ঈশ্বর সত্যসাধন
প্রণীত পাণ্ডুলিপির প্রায় আশি শতাংশ উইপোকা নিপুণ মাটির সেলাই করেছে। এফোঁড় ওফোঁড়
ছেদ করে, গভীরে গর্ত খুঁড়ে পাণ্ডুলিপি মাটির মণ্ড করে দিয়েছে। তক্তপোষের তলায়
তোরঙ্গের একেবারে নিচে পারিবারিক স্মৃতির অতলে তলিয়ে ছিল সত্যসাধনের পাণ্ডুলিপি। সত্যসাধনের জ্যেষ্ঠ পুত্র নিবারণের অবহেলা ও
উদাসীনতার জন্য পাণ্ডুলিপির এইরূপ দশা মণ্ডল পরিবারের পারিবারিক বিষণ্ণতার অন্যতম
গভীর কারণ।
স্বপ্নের মধ্যেই
নিবারণ পিতৃদেবের চিহ্নগুলি হাতড়ে যাচ্ছিল। দোয়াত বাঁশের চোঙ্গা কলম ধুয়ে তুলে
রাখার আটকানি তক্তপোষের ওপরে বেঁধে রাখা দপ্তরের পাশে ফাঁদিজাল কোণাছেঁচা খেচজোঁতা
ও নানান কৃষি সরঞ্জাম। বছরের পরে বছর ধরে, ঘুম ও স্বপ্নের মধ্যে এই প্রকার
বস্তুগুলি হারিয়ে যায়নি বলেই সে নিশ্চিন্ত ছিল।
নিবারণ ও তার
অনুজ ভ্রাতা দিগম্বর জানে, তাদের পিতৃদেব সত্যসাধন মণ্ডল যখন লেখার কাজে বসত, এই সব বস্তু ও কৃষি সরঞ্জামের উপকরণগুলি তার
চারপাশে ছড়িয়ে থাকত।
তন্দ্রাচ্ছন্ন
নিবারণ। কি যেন
তক্তপোষের নিচে গড়িয়ে গেল, ঝুপ। ঝুল ধূসরিত এক পয়ার। ঝংকৃত হতভম্ভ। হতচকিত নিবারণ, উঠে বসল। তড়িঘড়ি
উঠতে গিয়ে, তক্তপোষের নিচে তাকাল, অন্ধকার জমাট। আর স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ।
কিছুই দেখা
যাচ্ছিল না, তক্তপোষের নিচে সব বিবরণ
অন্ধকারের মণ্ড। জানালার কপাটে চোখ পড়ে গেল, ভোরবেলার প্রফুল্ল কাকের ছবি সেঁটে
আছে। কালো ডানার পোঁচ। এই মাত্র সে স্বপ্ন দেখছিল, এক কোণে জলচৌকির ওপরে বসে,
পিতৃদেব হুমায়ুনের বাদশাহী বায়ু রচনা করছে।
মণ্ড। মণ্ড ?
মণ্ড মাটি। মাটি মণ্ড !!!
সত্যসাধনের
কলমের নিবের সুক্ষ্ম ছোঁয়ায় অক্ষরগুলির পাশাপাশি গভীর ক্ষত, খড়খড়ে মাটির দাগ,
দাগের ভিতরে উইপোকার সোনার সংসার। ঘিয়ে রঙের
পোকাগুলি মাটির দাগের ওপরে নিরন্তর শাখা প্রশাখা খুঁজছে। মাত্র কয়েকটি পাতা অক্ষত,
উইপোকার সেলাইয়ের নাগাল থেকে দূরে। গভীরে মাটির মণ্ডের নিচে, জলের ওপরে মাটি যেমন
জেগে থাকে। বানভাসি কয়েকটি পশু, জল ঠেলে ডাঙ্গায় ওঠার চেষ্টা করছে। পাণ্ডুলিপির
ওপরে লেখা গ্রামের বিবরণ, সূক্ষ্মতর দাগ দিয়েছে, সত্যসাধন।
এই মাটির
পাণ্ডুলিপি নিয়ে এখন সে কী করবে ? অনুজ দিগম্বরকে সে জানাবে কি করে ? হায় হায় এ কী
অপরাধ ? পাণ্ডুলিপি জলে ভাসিয়ে দেবে, না আগুনে পুড়িয়ে দেবে। পোড়াতে হলে, জলে
বিসর্জন দিতে হলে, অনুজ দিগম্বরের মতামত চাই। দিগম্বরকে না জানালে, ঘোরতর অন্যায়
হবে। কারণ পিতৃদেব সত্যসাধন প্রণীত পাণ্ডুলিপির প্রতি নিবারণের একার অধিকার নয়,
বসতবাড়ির আলোছায়া জমি, বাগান পুকুর এমন কি মাটির গভীরে পারিবারিক অনুভূতি – এই
সবের প্রতি দিগম্বরও একজন অংশীদার। অধিকার তারও সমান সমান।
এই সর্বনাশের
সংবাদ দিগম্বরকে জানাবে কী করে ? দিগম্বরের কাছে যেতে হলে, সংবাদ দিয়ে ডেকে আনতে
গেলে, অনেক সময় লাগবে। বেইলি সাহেবের
বাসখানা আর কাছারি কি সামান্য পথ, অনেক দূরের। অনেকটা পথ।
দিগম্বর এখন
পাকা বাবু।
বেইলি সাহেবের
দপ্তরে মানচিত্র আঁকার কাজ করে। সূক্ষ্মতর কলমের নিব দিয়ে, ভূমিক্ষেত্রর রেখার দাগ
দেয়। পিঁপড়ে যেমন মাটিতে দাগ দেয়, সেইরকম দাগ দিয়ে যায়, খাল বিল পুকুর নয়ানজুলি
ঝিলের, পেনেটি থেকে এককালের বিদ্যাধরীর দিকে যাওয়া সোনাই নদীর স্রোত। হারিয়ে গেছে নদীপাড়। পাখির বাগান, নদী
থেকে উপরে আসা জলের দাগ। দিগম্বরের এইসব নোখের গোড়ায়। দিগম্বর জানে গোটা তল্লাট
জুড়ে, কোথায় কী আসন পেতে বসে আছে। মানচিত্রের ওপরে বেইলি সাহেব চূড়ান্ত দাগ দিয়ে
সম্পাদনা করে দেয়।
সত্যসাধন দিগম্বরকে
অনেকটা অংশ, পড়িয়ে শুনিয়েছে। দিগম্বর আজও সেই মুগ্ধতা নিয়ে স্মৃতিতে সুমিষ্ট পায়েসের
স্বাদ নিয়ে বসে আছে। জমি বাস্তুভিটার মতোই, পিতৃদেবের পাণ্ডুলিপির প্রতি দিগম্বরের
দুর্বলতা আছে।
নিবারণ জানে,
দিগম্বরকে না জানিয়ে কিছু করা যাবে না। এমনতর দুঃখে দিগম্বর হেসে উঠতে পারে, সেই
হাসির শব্দে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি হতে পারে। নিবারণের মনে পড়ছে, দিগম্বর তাকে
বলেছিল, পিতৃদেবের পাণ্ডুলিপির হৃদয়ের কথা... অন্তহীন পাখি উড়ে যাওয়া কল্পনার কথা। মহাকাব্য থেকে তুলে নেওয়া শতদ্রু নদীর আধাত্মকথা। সিন্ধু চরাচর। বিচিত্র
চরিত্র। গাছ কেন এসরাজ বাজায়।
দুই পুরুষের
চাষের কাজের মইটিকে আকারে আরও লম্বা করে, মেরামতি করে, মইটি কাঁধে নিয়ে দূরগামী
কোনো এক গাঁয়ের বাদাড়ে শতাব্দী প্রাচীন বটবৃক্ষের মাথায় চড়ে বসে আছে, আর নামেই নি।
ক্ষুধা তৃষ্ণা বলতে কিছুই নেই। এক শরীরী চলমান দেবতার মতো তার অস্তিত্ব। অভিশপ্ত
অশ্বত্থামার সাথে নির্জনে সহবাস করছে। ব্রহ্মতালুর মণিকে মাটিতে পুঁতে দিয়ে
বলরামের লাঙ্গলের সাধনা করতে করতে মাটির ঢিবি হয়ে গেছে।
বেইলি সাহেবের
কাছারিখানায় সহজে প্রবেশ করা যায় না। পিয়াদা রক্ষী প্রবেশপথে আটকে দেবে।
পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে, বাসখানার বাখারি, টালির ছাদের আড়ে কাঠ,
সবেতেই উইপোকা ছড়িয়ে গিয়ে বাস্তুভিটা উপড়ে দেবে। জলাশয়ের নাট্যদল নৌকোর ওপরে ভেসে
পালাগান করে গ্রামে গ্রামে, দক্ষিণ দিক থেকে ধেয়ে আসা প্রবল ঝড়ে বজরা উড়িয়ে নিয়ে
গেল, নিবারণ তাকিয়ে দেখল ধাতব বস্তুর মতো, বড়সড় কাতল চকচক করছে। জলের ওপরে দলবদ্ধ
কাক অনেকটা সম্ভ্রান্ত বেগমের কালো বোরখার মতো ছবি হয়ে উঠেছে। নিবারণ এগিয়ে যাচ্ছিল।
চারদিকে খোলা
আকাশের মতো ছড়িয়ে আছে মাঠ। সব জমিই এক ফসলি। দো ফসলি করে কী লাভ ? এত আনাজ ফসল
খাবে কে ? নষ্ট হবে। ধান ধানের মতো গড়িয়ে যায়। পাকাধান
কেটে
ঘরে তোলার মতো মজুর পাওয়া যায় না। কিন্তু মাঠের প্রথম কাজে, মাঠ বানানো থেকে শুরু
করে, বীজতলা থেকে বীজ নিয়ে আসার জন্য জন-মজুরের অভাব নাই।
পূর্ব দিক থেকে
সংবাদ এসেছে পঙ্গপালের মেঘ আসছে তেড়ে। কাঁঠাল আম জাম মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে নষ্ট হয়।
এই পথে হাঁটলে চাষের যন্ত্রপাতির ঠুক ঠুক শব্দ হুঁকোর জলের মতো ভগ ভগ করে। ঘরে ঘরে মই ও আগড় মেরামতির ও তৈয়ারির কাজ চলছে। বাবলা কাঠের সংগ্রহ
চলছে গোযানের চাকা বানানোর কাজে।
মানুষের ফসল
তোলায় মন নাই, চাষের যন্ত্রপাতি ও মেরামতির কাজে মন বসে আছে। বাতাসের শরীরে খরার
সংবাদ এসেছে। বলদের মুদনীতে ক্ষত শুকিয়ে চামড়া খসখসে হয়ে যায় এই সময়। খলায় এসে,
নৌকো সর্দার মালোবাড়ির কর্তার সঙ্গে, বিয়ে সাদির বিষয়ে কথা বলে গেল। কে প্রথম
এইখানে মোহনটাক পাখির ঝাঁকের সাথে অট্টহাসি দিয়ে ধূমকেতু এনেছিল, পাল্কিতে বসে
কোনো এক নববধূ বিষ খেয়েছিল, এই সবই এখন পায়ের পাতায় জল ঢেলে শরীরে শীতল এনে, গ্রামীন কথা উপকথা মনে করার সময়।
নিজের সংশয়টি
নিবারণ আঁকড়ে ধরল। দুই হাতে চেপে ধরা উইপোকায় খাওয়া পাণ্ডুলিপিটি নিয়ে হাঁটছিল। আর
মনে মনে দোটানায় দুলে, দ্বিধা ও সংশয়ে বারে বারে টোকা খেয়ে পিতৃদেবের রচনাকালটি
তার স্মৃতিতে এসে ধাক্কা মারছিল। কিছুটা পথ হেঁটে গেলেই দেঁতের খাল। পায়ে পায়ে
মেঘকালো জলের সামনে দাঁড়িয়ে দেখল, নৌকার পিঠের মতো কালিবাউশ মাছ ভেসে উঠে আলোছায়ার
মোহভঙ্গ করে আবার তলিয়ে গেল।
একপ্রকার
অনুশোচনার জল গড়িয়ে নামছিল শরীর থেকে। সেই সঙ্গে অস্থিরতা বরাবর। নিজের দুই হাতে
পিতৃদেবের পাণ্ডুলিপি বুকে চেপে ধরে দেঁতের জলের ওপরে আয়না দেখছিল। সেই আয়নার ওপরে
ভেসে উঠছে একজোড়া পা, চাষির পা, আলের ভিজে কাদায় ল্যাপানো। বেশ দূরে বলে তামাটে
আভা, বাকি মানুষটি অদৃশ্য।
এ কেমন দৃশ্য
?
পা দুইটির
দুইদিকে ডানা। উড়ান দেবে না তো ? যেমন নিবারণ পুরাণ
কথায় পড়েছিল ? সত্যসাধন তাকে গ্রীক দেবতার বিবরণ দিয়েছিল। বড়ই বিস্ময়কর, এ কেমন
নিসর্গের ফাঁদ পেতে দিল চরাচর ? কিছু ভুল দেখছে না তো ?
নিবারণ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, কিছুতেই ফিরে আসতে
চাইছিল না। সে দেখছে, আর ভাবছে এ এমনতর এক ঝড়ের মতো দৃশ্য, সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে রেখে
যায় কিছু নির্বাচিত কল্পনা। এ তেমনই এক কল্পনার দৃশ্য। দৃশ্যটি দেখতে দেখতে নিবারণ
নিজের মধ্যেই হাড়িয়ে গেল। চারপাশের অন্যান্য বিল জলের গাছপালার ধানমাঠের বিবরণ গৌণ
হয়ে গেল।
“আমাকে অনুসরণ
করো নিবারণ।”
তামাটে রঙের পা
দুইটির সৌন্দর্য বিস্তার করেছে আঙ্গুলের গোড়ায় ঢ্যাঙা নোখ। নোখের গভীরে কাদামাটি। নিবারণ চিনতে পারল। প্রায় ক্ষয়ে
যাওয়া কদম কাঠের খড়ম, ঠক ঠক শব্দহীন। শূন্যে ভাসছে
খড়ম পা। ইঙ্গিত করছে, এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
হ্যাঁ,
পিতৃদেবের খড়মের মতো, তক্তপোষের পাশে জলচৌকির ওপরে রাখা আছে এখনও। পারিবারিক ও বাস্তুভিটার আর সব সম্পত্তির মতো, যত্নে নজরে রাখা।
মন্থর গতি,
কল্পনায় সহিষ্ণুতার দাগ দেয়, চঞ্চল, ক্ষণেক স্থির, শূন্যে ভেসে যাচ্ছে খড়ম, অনেকটা
আহ্বান করছে, সেই ভাবে,- নিবারণ স্থির তাকিয়ে।
অবাক !!!
“আমাকে অনুসরণ
করো নিবারণ।”
নিবারণ কী উত্তর
দেবে, কথা বলার মতো ভাষা তার হাড়িয়ে গেছে। নির্দেশের কণ্ঠস্বর এক সমাহিত অতীতের
মতো, বর্তমান সময়ের সঙ্গে সংযোগ করলেও নিবারণের পা ভারি হয়ে আসছে।
“ আমাকে অনুসরণ
করো নিবারণ।”
নিজের শরীর
হাতিয়ে, নিজের অস্তিত্বকে চূড়ান্ত করার জন্য, এক পা থেকে সরে গিয়ে অন্য পা
নিল। সকাল পড়ে যাওয়ার মাঝে, অন্যতর খোলসে
ওঠা রঙের জলবিভ্রম। কণ্ঠ যে একেবারে পিতৃদেবের মতো, সন্দেহ নাই। কিন্তু কণ্ঠস্বর
মিলে গেলেই তো নয়, উপস্থিতি না হলে, অর্ধসত্য - অর্ধমিথ্যা।
তার মনে পড়ছে,
শৈশবে বাদামতলার খেয়াঘাটে অনেকসময় তাকে ডাকত পিতৃদেব, কিন্তু সেই ডাকের মধ্যে
নিশ্চয়তা ছিল, নিশ্চিত ছিল গন্তব্যের, বাসায় ফেরার। কিন্তু বহুবছর পরে আবার সেই আহ্বান, বাড়িতে ফেরার নয় যেন, অন্য অচেনা
কোনোখানে যাওয়ার নির্দেশ।
“আমাকে অনুসরণ
করো নিবারণ।”
আপনার কণ্ঠস্বর
আমার পিতার মতো।
আমি তোমার
পিতা।
আমার পিতা !!!
হ্যাঁ। আমি
তোমার পিতা। সত্যসাধন।
বহুবছর আগে তিনি
পৌষের শীতল দুপুরে বিলীন হয়ে গেলেন দেঁতের খালের পাশের ধানমাঠে। পুরানো পোশাকের
মতো তিনি তার দেহের অংশ মাদুরের মতো ফেলে দিয়ে গেছেন। যাওয়ার আগে নিজের বাসাবাড়ির
মিষ্টান্ন রন্ধনের গন্ধ প্রাণভরে নিয়ে চলে গেছেন। আর ফেরেন নাই। দুধের মধ্যে সিদ্ধ
হচ্ছিল গোবিন্দভোগ চাউল। সেই দিনের গন্ধ আমার চরাচরকে আজও সুস্বাদু পায়েস করে
রেখেছে।
সেই মিষ্টান্নের
গন্ধ আজও শীতল হয় নাই। মিষ্টান্ন রন্ধনের পরে রাসরাণী মাটির পাতিল কি করেছিল ?
আমরা জেনে
গেছিলাম, আপনি বায়ুতে বিলীন হয়ে গেছেন।
নিবারণ, আমি জানতে
চাইছি রাসরাণী মাটির পাতিল কী করেছিল ?
সেইদিন যা কিছু
রন্ধন হয়েছিল, মা মনে করেছিলেন সব রান্নার আয়োজনই অশৌচ। আমাকে মা বলেছিল পায়েসের
পাতিল দেঁতের খালের পাড়ে রেখে দিয়ে আসতে। আমি তাই করেছিলাম। সুযোগ সুবিধা বুঝে আপনি তা ভক্ষণ করে নেবেন। আপনি ঘরের মাদুরে বসে
প্রায়ই বলতেন, পাচক ভীমের থেকে মা ভালো মিষ্টান্ন প্রস্তুত করতেন। মায়ের হাতের
মিষ্টান্ন আপনার প্রাণের চেয়েও অধিক ছিল। আমি মিষ্টান্ন দেঁতের খালের পাড়ে রেখে
দিয়ে এসে মাকে আর খুঁজে পাইনি। অনেক খুঁজেছি। জনসন সাহেবের থানায় খোঁজ করেছিলাম,
কিন্তু তারা কিছুই বলতে পারে নি।
রাসরাণী ছিল আমার প্রাণের অধিক। সে ছিল আমার
মনের হাহাকার আর কল্পনা। আমার চলে যাওয়ার সাথে সাথে সেও নিজেকে বায়ুতে রূপান্তর
করে আমার গভীর মনের সখ্য হয়ে গেছে। তোমাদের ঘরে কাঁচের বয়ামে সে একটি একটি করে
বাতাসা আমার নামে রেখে দিয়ে গেছে। আমি তৃষ্ণায় কাতর হয়ে উঠলে, বৃষ্টির জলের ফোঁটার সাথে গলা ভিজিয়ে নিই বাতাসা মুখে
দিয়ে। রাসরাণীকে তুমি আর সন্ধান করে বিরক্ত
কোরো না। সে আমার মনের গভীর আরাম। ভাগ্যিস
দেঁতের খালের ধারে তুমি পায়েস রেখে এসেছিলে, তা ভক্ষণ করে, নিজের অস্তিত্বকে বাতাস
করে রেখেছি। আহা কি গন্ধ ছেল নিবারণ। ভালোবাসা পুঁথি
লেখে, লাঙ্গল তৈরি করে, কৃষিবিদ্যায় জ্ঞানি করে তোলে।
আপনি আমার
পিতৃদেব ? সত্যসাধন !!!
হ্যাঁ সত্যসাধন
মণ্ডল। তোমাদের পিতা।
সত্যসাধন !!!
সত্য ?
হ্যাঁ। পিতা
যেমন সার্বিক সত্য। মায়ের মতো অনুভব। আর রক্তবুকের স্পন্দন।
আজ এতদিন পরে,
আপনার এই মায়ার খেলা কেন ?
কারণ এতদিন পরে
তুমি আমার পাণ্ডুলিপি স্পর্শ করেছ। নিজের অবহেলায় কীটের মতো তুচ্ছ করেছ।
আমার অবহেলা ও
উপেক্ষাকে দণ্ডিত করুন।
আমারই নিজের
লেখা কল্পনায় যখন তুমি হাত দিয়েছ, আমি নিজের বর্তমান পরিস্থিতি জেনে আহত ও বিস্মিত
হয়েছি। তোমার এইরূপ আচরণ আমাকে বেদনা দিয়েছে। আমি এসেছি তোমাকে কিছু কথা বলতে।
জীবিতকালে আপনার
কি আরও আরও অনেক কথা বলার বাকি ছিল ?
হ্যাঁ ছিল। অনেক
কথাই বাকি ছিল।
থাকা আর না থাকা
এখন সমান সমান।
হাঃ হাঃ হাঃ
মৃত। মৃত মানুষ কি জানে মৃত মানুষের অর্থ কি। সে কি শরীর বোঝে ? সে বোঝে বাতাস
আলো। তার শব্দ অনুভূতি নেই। সে ছায়া আলোর সখ্য বোঝে।
আপনি এখন যে
রূপে তা আমি বিশ্বাস করি না। আমি জানি আপনি ছিলেন। আপনি আমার পিতৃদেব। আপনার
স্মৃতি নিয়ে আমি বেঁচে আছি।
আমি অতীত
বর্তমান ও ভবিষ্যতের উপস্থিতিতে বিশ্বাস করি।
ভবিষ্যতের
উপস্থিতি ?
তা বড়ই প্রকট।
প্রকট ?
হ্যাঁ। প্রকট।
আমাকে অনুসরণ করো। বিস্তারিত সব কিছু তোমাকে জানাব। আমার সঙ্গে এসো।
কতদূরে ?
যতদূরে তোমার মন
চাইবে নিবারণ।
অনুসরণের
উদ্দেশ্য ?
নিজের পিতাকে এই
প্রশ্ন কেন করছ ?
আমার ঔদ্ধত্যকে
ক্ষমা করবেন।
আমার পাণ্ডুলিপি
তুমি নিশ্চয়ই অধ্যয়ন করেছ ?
করেছি। আপনার
অনুজ সন্তান দিগম্বর আরও নিবিড়ভাবে।
তা হলে, আমার
অনুসরণের নির্দেশ বুঝতে পাড়বে।
দয়া করে আপনি
আমাকে মার্জনা করবেন।
অনুসরণে যাবে কি
যাবে না, তা তোমার ব্যক্তি ইচ্ছার ওপরে নির্ভর করছে। মার্জনার কথা বলছ কেন ? কারোর
ইচ্ছাকে মার্জনা করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর সেই অধিকার অন্যের নেই।
আমি বলতে চাইছি,
আপনার পাণ্ডুলিপির প্রতি আমার অবহেলা ও নিরন্তর অবজ্ঞার কথা।
অবহেলা অবজ্ঞা ?
তা কেন ?
আপনার লেখা
পাণ্ডুলিপির বড় অংশই দংশন করে ফেলেছে উইপোকা। অধিকাংশই মাটির মণ্ডতে পরিণত হয়েছে।
আমি এখন বিভ্রান্ত। শোকাহত। আমাদের পারিবারিক এই মহামূল্যবান সম্পদকে আমি রক্ষা
করতে পারি নাই। আমার অবহেলার এই ধৃষ্ঠতা ক্ষমারও অযোগ্য। আমি নরকের কীট। চাষের সরঞ্জাম,
তোরঙ্গের ভিতরে অর্থকড়ি ও অন্যান্য সম্পদকে যে ভাবে রক্ষা করি, চোখে চোখে রাখি
যত্নের আরামে তা করি নাই বলে, আমার স্থান নড়কেও হবে না। মাটির মণ্ডের মতো এই
পাণ্ডুলিপি দিগম্বরকে না জানিয়েই দেঁতের খালের জলে বিসর্জন দিতে এসেছি।
আমি সব জানি
বলেই, তোমাকে অনুসরণের কথা বললাম।
আমি জানি
দিগম্বর এই কথা জানতে পারলে, ক্ষমা করবে না। আমাকে তিরস্কার করবে। সে এখন বেইলি
সাহেবের মানচিত্র নক্সার কাছারিখানাতে আছে। তার বাহির হওয়ার নির্দেশ নাই।
দিগম্বর যদি তাই
করে, তা হলে সেইটি তোমার উচিৎ প্রাপ্য।
যদি আমি তাকে না
জানাই ?
তা হলে তোমার
লাঙ্গল বিদ্যা মিথ্যা।
আমি এই ক্ষমাহীন
অপরাধ কোথায় রাখব ?
“আমাকে অনুসরণ
করো নিবারণ।”
কোন দিকে যাবেন
?
যেতে যেতেই আমরা
আমাদের দিক নির্ণয় করে নেব।
কখনও ধোঁয়ার
কুণ্ডলীর মতো, আবার কখনও শেষ ফাল্গুনের কুয়াশার মতো। শরীর তার দুপুরের নোনা গাঙের
চিলের মতো, আবার কামকাতর নেউলের মতো, ছুটে ছুটে অনুসরণ করছে মাদীকে, আবার কখনও
ফাঁদিজালের শূন্যে ফেঁসে ছাতার মতো বিস্তার লাভ করছে। ধুলাখেঁদি ঘুঘু পালক ফুলিয়ে
ভুল ধুলা ঠোগরুচ্ছে।
উদ্ভ্রান্তের
মতো দ্রুত পায়ে চলেছে নিবারণ। সুঁদুরি গাছের ফলাগুলি মাঠের ধারালো অস্ত্রের মতো।
কালক্রমে পাথুরে হয়ে উঠেছে। সামনে খণ্ডিত বনাংশ। আরও গভীরে বিদ্যাধরীর স্রোতে গিয়ে ধাক্কা খেয়েছে সুদূর বনরেখার দ্বীপে।
নিবারণ ছুটে
চলেছে নাড়িকুড়ি গ্রামের দিকে। গ্রামবাসীরা তাকে পেলে ঘেরাও করবে। পারবাসুদেবপুরের
সঙ্গে নাড়িকুড়ি গ্রমের যে কলহ ও সংঘর্ষ তার এখনও মীমাংসা হয়নি। ওইদিকে যাওয়া মোটেই
নিরাপদ নয়, তা কি আর নিবারণের মাথায় আছে ? একজন কেউ পিছন থেকে চেল্লাল, --
ও নিবারণ কত্তা,
ফিরে এসো, ওইদিকে নাড়িকুড়ির দিকে মোটেই যেও না। ওখানে বিবাদ আছে। তোমার সঙ্গে
সংঘর্ষ হতে পারে।
ফিরে যাচ্ছিল
পারবাসুদেবপুরের নাসু্ পাখুয়া, সে নিবাড়নকে দেখল, দেঁতের খাল ছাড়িয়ে জলের ওপরে
নাসুর জলছবি জলকাঁপা কাঁপছিল, সে তাই দেখে বলল,-- গতকালের কালবৈশাখী নিবারণকে
ছাড়েনি, গাছের ডাল সব ভেঙ্গে পড়ে আছে, ডগা নুইয়ে আছে, আকাশে শকুন উড়ছে, মৃত পশুর
মাংস ছড়িয়ে আছে চারধারে, বিদ্যাধরীর দিকে বণিকেরা যাচ্ছে, কামলা লাগিয়ে সুড়ঙ্গ
তৈরির জন্য বহাল করেছে। এখন ওইদিকে যেও না, বিপদ আছে। ফিরে এস নিবারণ।
প্রথম
গ্রামবাসী,-- কোথায় যাচ্ছে নিবারণ ?
দ্বিতীয়
গ্রামবাসী,-- পূর্বপুরুষেরা ডাকছে ওকে।
তৃতীয়
গ্রামবাসী,-- কৃষিকাজের উত্তম বিদ্যা প্রদান করবে।
দ্বিতীয়
গ্রামবাসী,-- পারবাসুদেবপুরে আগামীদিন ভালো চাষ হবে, সোনার ফসল ফলবে।
পায়ে পায়ে বেশ
কয়েকজনের হাজির আলের মেঠো দাগের এপাশ ওপাশে। তারা
সবাই দেখছে, নিবারণ দেঁতের খাল ছাড়িয়ে, গভীর পূর্ব দিকে চলেছে।
নাসু পাখুয়া
বলল,-- পাখি শিকারের সময় যে ভাবে যাই, পাখির উড়ান অনুসরণ করি, সেই ভাবেই যাচ্ছে
নিবারণ। কিন্তু কিছু একটা দেখছে নিবারণ। তাকেই অনুসরণ করছে।
প্রথম
গ্রামবাসী,-- নাড়িকুড়ির দিকে গেলে ভয়ানক বিপদ।
নিবারণ একবারও
পিছনে তাকাল না, সামনে যতই যাচ্ছে, যা কিছু দেখছে, সবকিছু তাকে ইশারায় ডাকছে।
গাছের ডালের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে, ধারালো আলো এসে পড়ছে ফলার মতো, বনভূমির শূন্যে
আধিভৌতিক ছায়াপথ নির্মাণ করেছে, বাঁশগাছে শ্যাওলার নকশিকাঁথা, থিক থিক করছে জলজ
উদ্ভিদ, বহুদূরে একসারি ছেলেমেয়ে গোলা পায়রার দলকে লগি দিয়ে খেদাচ্ছে, একটু ওপরে
পায়রার ডানার ফট ফট শব্দ, বায়ু তরঙ্গের ফেটে যাওয়ার শব্দের মতো শোনাচ্ছে। আরও
কিছুটা দূরে, বাঁশপাতা, কলাগাছের গোঁড়ায়, শ্যাওলার আলো, ঠিক এখানেই দীর্ঘক্ষণ ভেসে
থাকা মাছের পিঠকে জমি ভেবে পাখি কখনও কখনও এসে ঠুগরোয় ভিনদেশি কোঁচ বক।
নুইয়ে পড়া একটি
বেলগাছের ডালে নিবারণ ধাক্কা খেল সরাসরি বুকের মধ্যিখানে, পাঁজর ভেদ করে। দুইহাত দিয়ে বুক চেপে বসল। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। গঙ্গিয়ে উঠল। অনুসরণ
করতে করতে বুঝতে পারছে, সে এক অনভ্যস্ত পথের দিশেহারা হোঁচট খাওয়া মানুষ হয়ে
উঠেছে।
যন্ত্রণা তোমার
একার নিবারণ। বসে থাকবে নাকি, বাতাসের মতোন নিজেকে ভাসিয়ে দাও। এই বনভূমি তোমার
যন্ত্রণার অধিকারী নয়, তোমার বেদনার মর্মও সে বুঝবে না। উঠে দাঁড়াও, আমাকে অনুসরণ
করো।
শ্বাস প্রশ্বাসে
কষ্ট হচ্ছে।
সামান্য এই পথ
আসতেই তোমাকে, যে ...তা হলে ভাবো একবার, কত যন্ত্রণা নিয়ে, আমি ভেসে বেড়াচ্ছি, কত
দিন ধরে একাকী গাছের ডালে ডালে, ধানমাঠে কত মেঘের ভয়ানক গর্জন আর বজ্রপাতে স্থির।
আপনি অদৃশ্য, যে
বায়ুর মতো, তার কি শরীরের বেদনা যন্ত্রণা অনুভবে থাকে ?
ব্যথা যন্ত্রণা
নেই তুমি কি করে জানলে ?
আমাকে দয়া করুন।
ক্ষমা করুন। আমি যে উঠতেই পারছিনে। হাঁটব কি করে ?
চেষ্টা করো।
তোমাকে উঠে দাঁড়াতেই হবে।
চেষ্টা করছি,
কিন্তু উঠে দাঁড়াতে পারছি নে।
উঠে তোমাকে
দাঁড়াতেই হবে। আমি তোমাকে দাঁড়ানোর জন্য সাহায্য করতে
পারতাম। কিন্তু...
আমাকে দয়া করুন।
আমি পারবাসুদেবপুরে ফিরে যাই।
কী ভীষণ তীব্র
অট্টহাসি। যেন শান্ত বনভূমির ঘুম, ও আলোছায়ার আচ্ছন্নতা জলের ফোঁটা ফোঁটা টিপ টিপ
শব্দের সাথে তলিয়ে গেল।
আমাকে অনুসরণ
করো।
আপনি আমাকে
বিভ্রান্ত করেছেন।
নিজের সন্তানকে
কেউ বিভ্রান্ত করে ?
আমি বিভ্রান্ত।
অনুসরণ করো
আমাকে।
যদি তাই হয়। একই
কথার উচ্চারণ কেন বারে বারে করছেন ?
কারণ তুমি এতটা
পথ আমার অনুসরণ কথাটিকেই অনুসরণ করে এসেছ। আর অনুসরণ করেই এই বনভূমির মধ্যে নিজেকে
তুমি অর্জন করছ। তোমার আরও অর্জন বাকি।
অর্জন বাকি ?
আমি কি ফিরে যেতে পারি ?
আমি তোমাকে ফিরে
যাওয়ার জন্য আদেশ করতেই পারি।
তা হলে তাই
করুন।
ফিরে যাও চাঁদার
বিলের মাঠে। সেই মাঠ অতিক্রম করো। সেনের আড়া অঞ্চলের দক্ষিণকোণে একটি বাবলা গাছ
দেখতে পাবে। ওই গাছের কাঠ দিয়ে তুমি লাঙ্গল বানাবে। সেই লাঙ্গল ভীষণ মজবুত হবে।
ভাঙ্গবে না। সেই লাঙ্গলের এত শক্তি হবে, পাথর খুঁড়ে দেবে। বছরের পর বছর ধরে তোমরা
মহাসুখে চাষকর্ম করতে পারবে। একদিন পারবাসুদেবপুরের ধনী কৃষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা
অর্জন করবে।
তা হলে কি আমার
লাঙ্গল বিদ্যায় কোনো ত্রুটি ছিল ?
লাঙ্গল তুমি
ঠিকই বানিয়েছিলে।
তা হলে ?
তোমার হাতে তৈরি
কোনো লাঙ্গলই দীর্ঘ সময় টিকে থাকার জন্য নয়। লাঙ্গল বানানোর সময় তুমি তোমার তাঁদের
একবারও স্মরণ করো নাই, যারা এই বিস্তৃত গ্রামজুড়ে প্রথম মাটি কর্ষণের কাজ
করেছিলেন। তুমি একজন দক্ষ লাঙ্গলের কারিগর। কিন্তু তোমার লাঙ্গল তৈরির মধ্যে ভাবগত
স্মরণ নাই। আমরা জাতে মণ্ডল কারিগর।
কিন্তু ? তা হলে
কি আমার লাঙ্গলবিদ্যা মিথ্যা ?
আমাকে অনুসরণ
করো।
ক্রমশ…
মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের।
ReplyDeleteআনন্দ শতনীক। তুমি প্রথম পড়লে।
Deleteঅসাধার!! সত্যসাধন আর নিবারণের সংলাপ আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখল।
ReplyDeleteপরের পর্বের অপেক্ষায়।
অদ্ভুত সুন্দর, মুগ্ধ হয়ে পড়লাম , পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়
ReplyDeleteপ্রথম থেকেই লেখায় অসাধারণত্ব ছিলো। মুগ্ধ করার বিস্মৃতির ভাষা স্মৃতি ও সময়কে একাকার করে দিয়েছে। কিন্ত তা যেখানে আজ শেষ হয়েছে সেখানে এমন এক দ্বান্দ্বিকতা উপহার দিয়েছে তা ঠিক পুত্রের সাথে না, তা সময় ও প্রথম থেকে যে স্মৃতির মেটাফোর তার বিপরীতে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে হয়তো নির্দিষ্ট আদর্শের ওপর জোর দেবার কারণে। তবে হতে পারে সেটা চরিত্রের কৃত্রিমতা ধরে রাখবে ও একটা শৃঙ্খল দেবে। এবং পিতা যে অনুসরণের কথা বলছে, পুত্রকে অনুসরণ করতে দেবে।
ReplyDeleteশুভকামনা ও ভাললাগা!
ম্যাজিক! অনুসরণ করবো।
ReplyDeleteশ্রদ্ধা রাখলাম এই কলমের কাছে....
ReplyDeleteশ্রদ্ধা রাখলাম এই কলমের কাছে....
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো। কেমন যেন কোথাও হারিয়ে গেলাম।
ReplyDeleteপ্রথম শুরুটা ভালোই হয়েছে। মনে হচ্ছে অনুভুতির অক্ষরেে মোড়া একটা গদ্যবহুল উপন্যাস পাবো।
ReplyDeleteলেখকের কলম এইভাবে বারবার অনবদ্য কথা সাজিয়ে তোলে।
ReplyDeleteমুগ্ধ হলাম। এবার পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।
অনেকদিন বাদে পড়লাম। অপূর্ব লেখা। প্রতি মুহূর্তে শিখছি। শব্দের ব্যবহার। অসাধারণ লেখা। অপেক্ষায় থাকলাম দাদা।
ReplyDeleteবরাবরের মত মজে রইলাম এ লেখাতেও। মহাজাগতিক অনুসরণ।
ReplyDelete